.

ধর্মীয় গুরু, যাদের ধর্ম জ্ঞান সাধারণের তুলনায় অধিক, যাদের জীবনাচরণ সাধারণের তুলনায় অধিক মাত্রায় ধর্মীয় নীতিতে চালিত, যাদের ওপরওয়ালার প্রিয়বান্দা বলে সবাই ভক্তি শ্রদ্ধা জানায়, সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে, সে ধরণের ব্যক্তিরা শারীরিক ক্ষুধা মানবিক চাহিদার অনেক উর্ধে    আধ্যাত্বিকতাকে স্থান দেয়, সত্য ন্যায়ের পথে ধর্ম রক্ষার্থে নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে দেয়  কিন্তু ওরা তাহলে কারা, যারা ধর্ম শিক্ষার শিক্ষক হয়েও ছাত্র ছাত্রীদের শারীরিক যৌন নির্যাতন করে, হত্যা করতেও দ্বিধা করে না ???

.

২০১২ সালে মুন্সীগঞ্জে মসজিদের একজন ইমাম আরবি শিক্ষা দেওয়ার সময় ১২ বছরের একটি মেয়েকে যৌন হয়রানি করে প্রতিবেশীদের কাছে হাতেনাতে ধরা পরে (Munshigonj24.com, 2012)

.

২০১৯ সালে নারায়ণগঞ্জের একটি মসজিদে বছরের একটি শিশু কন্যাকে ধর্ষণ করে সেই মসজিদের ইমাম এবং সেই কাজে তাকে সাহায্য করে মসজিদের পরিচালনা কমিটির আরো কয়েকজন শুধু যে তাতেই থেমে ছিল তা নয়, বাচ্চাটার পরিবার ঘটনার বিচার চাইতে মসজিদ কমিটির কাছে গেলে সেখানে তারা হয়রানির শিকার হয় আশামিপক্ষের লোকেরা নানাভাবে চেষ্টা করে যেন মেয়েটিকে কোনোভাবেই চিকিৎসা দেয়া না হয়  অনেক কষ্টে লুকিয়ে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করলেও সেখানে মসজিদ কমিটির লোকেরা বাচ্চাটিকে চুরি করার প্রবল চেষ্টা চালায় যেন তাদের অপকর্মের প্রমান তারা মিটিয়ে দিতে পারে (Hossain, 2019)

.

ধর্ষণের খবর জানাজানি হয়ে গেলে প্রমান মেটানোর জন্য ধর্ষিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার উদাহরণ যে আরো আছে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলার বিরুদ্ধে অনেক বছর থেকেই অনেক যৌনহয়রানির অভিযোগ ছিল কিন্তু প্রভাবশালী লোকদের সাথে সিরাজের যোগসাজশ থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি হত্যার হুমকি থাকা সত্ত্বেও ১৮ বছর বয়সী নুসরাত সিরাজ কতৃক যৌনহয়রানির বিচার চেয়ে মামলা করে যার ফলে, সিরাজের পাচাটা কুকুরের নুসরাতকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয়, নুসরাত রাজি না হওয়ায় তার আগে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় (Hossain, 2019) (Chowdhury, 2019)

.

অনেকেই বলতে পারে যে, বোকা মেয়েটি কেন যা ঘটেছে তা চুপ করে চেপে গেলো না, কেন মামলা তুলে নিলো না, তাতে অন্তত প্রাণে তো বেঁচে যেত !! নুসরাত চুপ করে মামলা তুলে নিলে তো বাংলাদেশের জনগণ জানতে পারতো না একজন মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বছরের পর বছর ধরে করে যাওয়া অপকর্মের কথা  পূর্বে যৌনহয়রানির শিকার হওয়া আরো অনেক আক্রান্ত মেয়েদের মতো ভবিষতেও আরো অনেক মেয়ে সিরাজের পৈশাচিক থাবার আক্রান্ত হতো, কেউ টু শব্দটিও করতো না যদি সেদিন নুসরাত মামলা তুলে নিতো নুসরাত নিজে নির্মম হত্যার শিকার হয়ে অনেক মেয়েকে বাঁচিয়ে তো দিয়ে গেছে সাথে সাধারণ জনগণকেও সচেতন করে দিয়ে গেছে যেন তারা সাদাটুপি, দাড়ি, কোরানের মুখস্থ বুলি আওড়ানো নূরানী চেহারার ফাদেঁ যেন অন্ধের মতো না পরে I

.

আর এক মাদ্রাসা শিক্ষক হারুনের বিরুদ্ধে তার ছাত্রীরা অভিযোগ তোলে যে তিনি বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের জড়িয়ে ধরেন, তাদের স্পর্শকাতর জায়গা নিয়ে উগ্র মন্তব্য করেন শ্র্রেণীকক্ষে, শুধু তাই নয়, কোনো ছাত্রী দুষ্টামি করলে ছাত্র দিয়ে সেই ছাত্রীর স্পশকাতর জায়গায় স্পর্শ চুমু খাওয়ান তিনি  কতটা নোংরা চিন্তাধারা পোষণ করলে এমন কাজ করা যায় ??? তবে দুর্ভাগ্য বৰ্ষত এই শিকক্ষকের উঠাবসা হয়তো তেমন কোনো প্রভাবশালী লোকের সাথে ছিল না তাই, ছাত্রীদের অভিযোগ প্রাথমিক পর্যায়েই আমলে নেয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (দৈনিক ইত্তেফাক , 2023)

.

২০১৯ এর জুলাইতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকার বায়তুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল আমিনকে (৪৫) দশ থেকে প্রায় ১২ জন ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়  যার কিছুদিন আগেই সিদ্ধিরগঞ্জের মিজিমিজি এলাকার অক্সফোর্ড হাই স্কুলের শিক্ষক আরিফুল ইসলামকে ২০ জন ছাত্রী ধর্ষণে অভিযোগে গ্রেফতার হয়  বায়তুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীর মা যখন ফেসবুকে এই খবর পড়ছিলো তখন সে ছাত্রী তার মাকে প্রশ্ন করে যে তাদের হুজুর (আল আমিন) কে কেন গ্রেফতার করা হয় না (The Daily Star Bangla, 2019)  

.

দেশে ৯৩০০ টি আলিয়া মাদ্রাসায় কমপক্ষে ২০ লক্ষ আর প্রায় ১৫০০০ কওমি মাদ্রাসায় কমপক্ষে সাড়ে ১৮ লক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছে (Hasan & Macdonald, 2022)   তাই দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এইসব নোংরা মস্তিষ্কের ধর্ম গুরুদের হাত থেকে কিভাবে ছাত্রছাত্রীদের দূরে রাখা যায় শুধু তা নয়, বরং, এইসব নোংরা চিন্তাধারা ধারণকারীনাটের গুরুদেরকাছ থেকে শিষ্যরা আসলে কতটা ধর্মীয়, ন্যায়নীতির, আল্লাহভীতির শিক্ষা পাচ্ছে ??? এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ রয়েছে . . .

.

২০১৯ সালে পাঁচ মাদ্রাসা ছাত্র গ্রেফতার হয় সহপাঠী অন্য এক ছাত্রকে বলাৎকারের পর গলাকেটে হত্যা করার দায়ে  নিজেদের জবান বন্দিতে তারা বলেছে, মাদ্রাসার শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফকে ফাঁসানোর জন্য তারা এই পশুর থেকেও জঘন্য কাজ করেছে তামিম ছাত্রদের ওপর অনেকদিন থেকেই নির্যাতন করে যাচ্ছিলো, ছাত্রদের দিয়ে শরীর টেপাতো আর ঠিকমতো খেতেও দিতো না যতবার ছাত্ররা প্রতিবাদ করেছে ততবার নির্যাতন বেড়েছে  তাই প্রাথমিক পর্যায়ে তারা শিক্ষক তামিম কে হত্যার পরিকল্পনা করলেও, পরবর্তীতে তামিমের দ্বারা গ্রাম থেকে  মাদ্রাসায় নিয়ে আশা ছাত্র আবিরকে তারা তাদের শিকার বানায়  দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র আবিরকে গল্পের ছলে পাশের আমবাগানে নিয়ে গিয়ে বলাৎকার করার পর দম বন্ধ করে হত্যা করে  এরপর গুজব ছড়ানোর উদ্দেশে আবিরের গলা কেটে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়, পরের দিন আবিরের মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ তার দুদিন পর পুকুরে মাথা পাওয়া যায়  এই নিশৃংস ঘটনার বর্ণনা লিখতে গিয়ে আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, আর ওরা কি করে পারলো ছোট্ট শিশুটির সাথে এমন কাজ করতে ?

.

কোরবানিতে গরু জবাই দিতে দিতে এরা আর মানুষ গরুর পার্থক্য বোঝে না, তাই মানুষের গলা কাটতে তাদের আর বাধে না আর মানুষের শরীর টুকরো টুকরো করতেও ওদের কলিজা কাপে না ওরাই তো বলে যেআল্লাহ শ্রেষ্ট সৃষ্টি মানুষতাহলে সেই আল্লাহ সৃষ্টিকে হত্যা করতে আল্লাহভীতি হয় না ওদের, সেইশ্রেষ্ট সৃষ্টিরঅংশ হয়ে এমন নিকৃষ্ট কাজ করতে আল্লাহ কথা ওদের মনে পরে না? শুধু কি মেয়েরা মাথায় কাপড় না দিলে ওদের আল্লাহ কথা মনে পরে? অমুসলিমদের দেখলে আল্লাহ কথা মনে পরে ? পহেলা বৈশাখে রং খেলা হলে, চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখলে, কেউ ওদের ধর্ম নিয়ে নিজের মুক্ত ভাবনার প্রকাশ করলে ওদের আল্লাহ কথা মনে পরে ??

.

মাদ্রাসায় কোরান শিক্ষার্থীরা কি শিখসে তার আরো একটু উত্তম উদাহরণ হলো, ২০১৪ সালে কুমিল্লায় একটি হিন্দু গ্রামে হামলা চালিয়ে ৩৮টি বাড়ি মন্দির ভাঙচুর করে ৩০০০ মুসলিমের একটি দল যা পরিচালনা করে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীরা (Hasan & Macdonald, 2022) খোদ মাদ্রাসাতেই যখন অমুসলিমদের প্রতি এইরূপ আচরণের শিক্ষা দেয়া হয় তখন শুধু জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম শুনে ভয় পেলে চলবে না  শুধু মাদ্রাসা শিক্ষক কেন, আলেম, ধর্মীয় মিলাদের বক্তা সবাই কম বেশি অমুসলিমদের কাফের বলে খোলা আকাশের নিচে গালাগাল করে, হিংসাত্মক বক্তব্য দেয়  নারীদের নিয়ে আপত্তিমূলক, যৌন শুড়শুড়ি দেওয়া তাদের বক্তব্য প্রায়ই ভাইরাল হয়  এদের দোষ দিয়েই বা কি লাভ, তাদের ধর্ম গ্রন্ধেই তো অমুসলিমদের রক্তপাত করার আদেশ স্পষ্ট ভাষায় দেয়া আসে  কিন্তু আফসোস এগুলো কোনো আইনের বা বিচারকের বা সরকার প্রধানের চোখে পরে না  এই সকল লেখা, বক্তব্য আচরণ যে অমুসলিমদের ওপর হিংসাত্মক আক্রমণ করার উস্কানি দেয় সেটা কেউ বললে বা, তার প্রতিবাদে কেউ লিখলেই তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের 7 ধারা দেখিয়ে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার দায়ে জেলে পুড়ে দেয়া হয়  

.

কিন্তু নারীদের দেখলে ওরা সব ভুলে যায়, আল্লাহ প্রীতি ভীতি দুটোই  কারণ ওরা নারীকে মানুষ হিসেবে নয় বরং ওদের শিশ্ন থেকে লালসার উৎসরিত তরল নিঃসরণের যোনিপথ হিসেবে দেখে শুধু তাইতো ওদের নারীকে নিয়ে এত্ত বাধা নিষেধ, কারণ ওরা জানে ওদের যৌন শুড়শুড়ি ধর্মজ্ঞানের উর্ধে, তাই তো নারীদের বোরখার আড়ালে ঢেকে রাখে, নানা বাধা নিষেধ দিয়ে ঘরে বন্দি করে রাখতে চায় আর সেই লালসা এতটাই প্রখর যে মাঝে মাঝে ওরা শিশ্নএর চুলকানির তাড়নায় নারী পুরুষের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে হাতের কাছে পুরুষ বা বাচ্চা ছেলে যাই পায় তা দিয়েই ওদের যৌন চুলকানির জ্বালাকে ঠান্ডা করে , যদিও পবিত্র কোরানে সমকামিতাকে হারাম বলা হয়েছে  তাতে কি শরীরের ক্ষুধা মেটানোর সময় ওরা হারাম, হালাল ভুলে যায়, আল্লাহ কে ভুলে যায়  মাদ্রাসায় ছেলে মেয়ে উভয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হয় এর অনেক উদাহরণ আছে I

.

তবে এইসব ঘটনার আসামিরা বেশিরভাগেই আইনের শিকলে বাঁধাপরে স্বীকারোক্তিতে বলেছে, শয়তানে নাকি ওদের লারা দিছিলো  হায়রে, ধর্মের কান্ডারীদের, আল্লাহ শিষ্যদের, পবিত্র ধর্মের পবিত্র রক্ষকদের যদি শয়তানে লারা দেয় আর তারা, যারা দিন রাত আল্লাহআল্লাহ করে, আল্লাহ নিষেধ ভুলে গিয়ে এমন লোমহর্ষক ঘটনা ঘটায় তবে সে ধর্মীয় শিক্ষাকে মনে ধারণ করে না, শুধু মুখস্থ করে, আর নিজের স্বার্থে লাগলে সেটা ভুলে যায়, শুধু শুধু দোষ দেয় শয়তানের  আসলে শয়তান না, আল্লাহ (যদি কেউ থাকে) নিজেই ওদের লারা দেয় পরীক্ষা নিতে, ধর্মজ্ঞান কি ওরা বেহেস্থের লোভে মন থেকে ধারণ পালন করে নাকি শুধু ধর্মজ্ঞান বিক্রিকরে জাগতিক স্বার্থ উদ্ধারে জন্য কোরানের আয়াত মুখস্থ করে মাত্র

.

References

Chowdhury, J., 2019. নুসরাতই মাদ্রাসাঅধ্যক্ষ সিরাজের একমাত্র শিকার ছিলেন না, Feni, Bangladesh: The Business Standard Bangla.

Hasan, M. & Macdonald, G., 2022. The Persistent Challenge of Extremism in Bangladesh. UNITED STATES INSTITUTE OF PEACE, Volume 511.

Hossain, I., 2019. Raped inside a mosque, Dhaka: Dhaka Tribune.

Munshigonj24.com, 2012. আরবী শিখতে গিয়ে লম্পট ঈমামের যৌনহয়রানির শিকার এক শিশুকন্যা, s.l.: Munshigonj24.com.

The Daily Star Bangla, 2019. নারায়ণগঞ্জে ১২ ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ গ্রেপ্তার, s.l.: The Daily Star Bangla .

দৈনিক ইত্তেফাক , 2023. মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ, s.l.: দৈনিক ইত্তেফাক .

.

.