সূরা ৩: ১৫১ – ‘’আমরা তাদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিবো যারা ইসলাম– কে বিশ্বাস করে না !’’
সূরা ২: ১৯১ – ‘’ওদেরকে হত্যা করো, যেখানেই ওদের খুঁজে পাবে, ওদের হত্যা করবে কেননা ইহাই ইসলামে অবিশ্বাসীদের প্রতিদান।‘’
সূরা ৯: ৫ – ‘’ওদেরকে যেখানেই পাও, হত্যা করো ! ওদেরকে পাকড়াও করো, অবরোধ করো ! প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষারত থাকো অবিশ্বাসীদের ওপর অতর্কিত হামলা করার জন্য !’’ (AL Islam, 2022)
এই সূরাগুলো কুরআন–এ খুঁজলেই পাওয়া যাবে, এবং এইসব সূরার পেছনে নাকি অনেক ঘটনা বা কারণ রয়েছে। কিন্তু প্রথম পড়াতেই যা অর্থ বোঝায়, যে কেউ সে অর্থই বুঝবে, কেউ কুরআন খুলে ঘেটে দেখতে যাবে না এইসব ধর্মীয় অনুশাসনের উৎস বা কারণ। শুধু একজন অমুসলিম কেন, আমার মতে, একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিমও ঘাটিয়ে দেখে না। ওদের ভন্ড ধর্মগুরুরা যা শেখায়, বেশিরভাগ, বেশিরভাগ মুসলিমই তোতাপাখির মতো সেগুলো আওড়াতে থাকে। এর কিছু উদাহরণ দিই যেমন,
কারো সাথে দেখা হলে বলা যাবে না ‘’good morning or hello’’ ওটা পশ্চিমা রীতি যা কুরআন–এ নেই, সালাম দিতে হবে ! মুসলিমরা পহেলা বৈশাখ পালন করবে না কারণ এটা হিন্দুদের প্রথা ! মুসলিম নারীরা শাড়ি পড়া থেকে বিরত থাকবে যেহেতু তাতে দেহের অনেক অংশ অনাবৃত থাকে ! বড়দিন, পূজা উৎসব বা বৈদ্ধ পূর্ণিমা ইত্যাদি অমুসলিম ধর্মীয় উৎসবে মুসলিমরা শরিক হবে না, তাতে আল্লাহ ব্যাতিত অন্য সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করা হবে, যা মুসলিমদের জন্য হারাম। মুসলিম নারীরা টিপ্, সিঁদুর পরবে না কেননা ওটা হিন্দু রীতি। কয়জন মুসলিম আসলেই খতিয়ে দেখতে যায় যে উপরোক্ত এই অনুশাসনগুলো আদৌ সঠিক কিনা।
হিটলার এর একটা হিটলারি বুদ্ধি ছিল, তা হলো, একটি মিথ্যে কথাকে বারংবার বলা হলে সেটা নাকি একসময় সত্যি বলে মেনে নেয়া হয় । ধর্মের ক্ষেত্রেও তাই, ধর্মের কান্ডারীরা রাজনৈতিক, জাতিগত ও বাক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিভিন্নভাবে ধর্মকে মাটির দলার মতো দুমড়ে মুচড়ে নিজেদের মনমতোভাবে একে আকৃতি ও প্রকৃতি দিয়েছে।
সম্প্রতি এটাও শুনেছি যে ফোন রিসিভ করার সময় ”হ্যালো” আর ফোন রাখার আগে ”বাই” বলা যাবে না । ফোন রিসিভ করে সালাম দিতে হবে আর রাখার আগে ”খোদা হাফেজ” বলতে হবে । এটা শুনে আমার পরক্ষনেই মনে হয়েছে যে, কুরআন নাজিল হওয়ার সময় আল্লাহ জানতেন যে ‘টেলিফোন‘ নামক একটি যন্ত্র উদ্ভাবন হবে দূর দূরান্তে কথা বলার জন্য তাই তখনি তিনি কোরআনে উল্লেখ করে দিয়েছেন যে সে যন্ত্রে মুসলিমরা কিভাবে কথপোকথন করবে । এটা সম্পূর্ণই আমার ধারণা, উপরে উল্লেখিত সূরাগুলো বাদে বাকি যা যা লিখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ আমার বাংলাদেশে জন্মানো, বেড়ে উঠা, শিক্ষা লাভ করা ও চাকরি করার বাক্তিগত অভিজ্ঞতা, ধারণা, উপলব্ধি ও বাস্তবিক জ্ঞান থেকে লেখা।
এখন আসাযাক পুঁথিগত তথ্যে বা বিশ্বাসযোজ্ঞ তথ্যে, আবু আফাক, আরবের বিখ্যাত বয়োজৈষ্ঠ কবি, যিনি নবী মুহাম্মদ তার শত্রূপক্ষের একজনকে অন্যায়ভাবে খুন করলে তা নিয়ে বিরোধিতামূলক একটি কবিতা লেখেন। তার অনেক কবিতাই ইসলাম ও নবীর প্রতি সমালোচনামূলক ছিল । যা জানার পর মুহাম্মদ তার এক শিষ্যকে আদেশ দেন ওই কবিকে হত্যা করার (Ishaq, 2002)। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আরেকজন নারী কবি, যিনি পাঁচ সন্তানের জননী, সমালোচনামূলক আর একটি কবিতা লেখেন যার ফলে তাকেও আফাক–এর পরিণতি পেতে হয় (Ishaq, 2002)।
কাব ইবনে আশরাফ, আবু রাফে বিন আবি আল হকাইক নবীকে নিয়ে সমালোচনামূলক কর্মকান্ড করে, তাদের কি পরিণতি হয়েছিল তা আল–বুখারী ও সহীহ আল–বুখারীর হাদিসে পাওয়া যাবে (Roy, 2014)। মুসলিমদের অন্যতম ধর্মগুরু নবী মোহাম্মদ অনেক কেই গুপ্ত–হত্যা করেছিলেন, সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছিলেন (WikiIslam, 2022) যা ইসলামএর সমালোচনাকারীদের হত্যা করার উদাহরণ বহন করে আসছে । এটা কি একজন ধর্মগুরুর উদাহরণ হতে পারে?
আল্লাহ‘র আদেশ মান্য করার জন্য সম্ভাব্য যে কোনো কিছু করাকেই জিহাদ বলে (IslamOnline, 2021) কিন্তু সেই যেকোনো কিছু বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, যেমন আল্লাহকে অমান্যকারীকে হত্যা করাই এখন জিহাদের মূল উদাহরণ। অভিজিৎ রায়ের বই (2014) থেকে পেলাম যে, ” ইসলামকে অবমাননা করে লিখালিখি করার দায়ে মনসুর আল হাল্লাজ, আলী দাস্তি, আজিজ নেসিন, উইলিয়াম নেগার্ড, নাগিব মাহফুজ, তসলিমা নাসরিন, ইউনুস শায়িক, রবার্ট হুসেইন, হুমায়ুন আজাদ, ভ্যানগগ, আয়ান আরসি সহ অনেকেই মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েছেন এবং এদের অনেককেই মেরে ফেলা হয়েছে আর কেউ কেউ পলাতক হয়েছেন।”
ড্যানিশ কার্টুনিস্ট মুহাম্মাদকে ব্যাঙ্গ করে কার্টুন বানানোয় ২০০৬ সালে লন্ডন–এ মুসলিমরা প্রতিবাদ করে যাদের হাতের প্ল্যাকার্ড–এ লিখাছিল, ”তাদেরকে জবাই করো যারা ইসলাম নিয়ে উপহাস করে”, ” তাদের সংহার করো যারা ইসলামকে ব্যাঙ্গ করে”, ”ইউরোপ তোমাকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, তোমার ৯/১১ সামনে আসছে”, অথবা ”৭/৭ সামনে আসছে”, ” ইউরোপ তোমাকে এর ফল ভোগ করতে হবে, বিন লাদেন আসছে”, ”ইউরোপ তুমি হামাগুড়ি দিয়ে আসবে যখন মুজাহিদীন হুংকার দিয়ে আসবে”, আরো আছে, ” স্বাধীনতা জাহান্নামে যাক”, ”উদারনীতি জাহান্নামে যাক”, ” ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা জাহান্নামে যাক” (Bowcott, 2006)। এগুলো নিশ্চই ‘শান্তির ধর্ম’-এর উদাহরণ নয় !
References
AL Islam, 2022. Why does the Quran say that infidels should be killed?. [Online]
Available at: https://www.alislam.org/articles/why-does-quran-say-that-infidels-should-be-killed/
[Accessed monday February 2022].
Ishaq, I., 2002. The Life of Muhammad. 1st ed. USA: Oxford University Press.
Roy, A., 2014. Biswasher-Virus. 1st ed. Dhaka: Jagriti Prokashoni.
WikiIslam, 2022. List of Killings Ordered or Supported by Muhammad. [Online]
Available at: https://wikiislam.net/wiki/List_of_Killings_Ordered_or_Supported_by_Muhammad
[Accessed Thursday April 2022].
Bowcott, O., 2006. Arrest extremist marchers, police told. [Online]
Available at: https://www.theguardian.com/uk/2006/feb/06/raceandreligion.muhammadcartoons
[Accessed Tuesday April 2022].
IslamOnline, 2021. Did Islam Grow By Killing Non-Believers?. [Online]
Available at: https://islamonline.net/en/did-islam-grow-by-killing-non-believers/
[Accessed Monday April 2022].
Roy, A., 2014. Biswasher-Virus. 1st ed. Dhaka: Jagriti Prokashoni.