.

ঘটনা ১:

এক শিক্ষিত ও কর্মজীবী মহিলা, যিনি নিজের স্বাধীন ইচ্ছানুযায়ী সামান্য কেনাকাটাও করতে পারেন না। তার কারণ, তার স্বামী অত্যন্ত ক্রোধপ্রবণ। স্বামীর ক্রোধ এড়াতে তিনি নিজের ইচ্ছেকে বাধ্য হয়ে দমন করেন এবং স্বামীর রাগ উস্কে দেবে এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকেন।

.

ঘটনা ২:

এই নারীর পিএইচডির ডিগ্রি আছে এবং উনি একটি ভালো বেতনের চাকরিতে আছেন। উনার স্বামীও একটি প্রতিষ্ঠিত পেশায় আছেন। পারিবারিক রীতি অনুযায়ী, তারা প্রতি ঈদে শ্বশুরবাড়িতে সময় কাটান। একবার তাদের ছেলে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে, এই ঈদে তারা কি গ্রামে যেতে পারে না? এই প্রশ্ন তার বাবাকে খুব রেগে যেতে দেখায়। ক্ষোভে তিনি একটি চেয়ার তুলে ডাইনিং টেবিলে ছুড়ে দেন, যার ফলে টেবিলের গ্লাস ভেঙে যায় এবং আরও অনেক কিছু ধ্বংস হয়। এর বাইরে তিনি আর কী কী করেছেন তা অজানা।

.

ঘটনা ৩:

এক নারী, যিনি এক বৃহৎ আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেন, স্বামীর কঠিন নির্দেশে চাকরি ত্যাগ করেন। স্বামীর আয় ভালো হলেও তিনি ঘরে বসে পড়েন। মাস কয়েক পর, তিনি উপলব্ধি করেন যে তাকে কেবল ঘরে বসে খাওয়ার জন্যই বলা হচ্ছে, আরামের জীবন যাপন করার কথা বলে।

.

ঘটনা ৪:

এক নারীর স্বামীর বিভিন্ন নারীর সাথে অনুচিত সম্পর্ক আছে। এসবে ব্যয় হচ্ছে অগণিত টাকা। এসব জানার পরে যখন স্ত্রী প্রতিবাদ করে, মারধর শুরু হয়। সন্তানের জন্য সে এই অত্যাচার মেনে নেয়।

.

ঘটনা ৫:

আয়োজিত বিয়ে করা এক নারী যৌথ পরিবারে থাকেন এবং সবাই তার উপর অত্যাচার করে। প্রতি পদে বাধা, লজ্জা, অশান্তি। পিতৃগৃহ থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ পেলেও মেয়েটি থেকে যায়। নির্যাতন অব্যাহত রাখে।

.

ঘটনা ৬:

বিবাহের তৃতীয় দিনেই এক মেয়ে প্রচণ্ড মারপিটের শিকার হয়। বিবাহিত জীবনে স্থায়ী অশান্তি বিরাজ করলেও মারধরের মাত্রা ছিল প্রচণ্ড। এমন অবস্থায়ও পরিবারের চাপে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয় মেয়েটি। মারধরের ইতিহাস সত্ত্বেও, তিনি এক সময় চাকরি থেকে ইস্তফা দেন, কিন্তু পরের দিন অফিসে গিয়ে ইস্তফাপত্র প্রত্যাহার করেন।

.

ঘটনা ৭:

প্রায় সকলেই টিভি বা খবরের মাধ্যমে জেনেছেন এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা যেখানে তিনি ১০ তলা ভবন থেকে লাফ দিয়েছিলেন। তার আত্মহত্যার চিঠিতে বাবার করা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেছেন। এই পিতা চরিত্রগতভাবেও নিন্দনীয়, এমনকি একজন ধর্ষক। প্রশ্ন উঠেছে, মেয়েটির মা কীভাবে এতদিন এই ধরণের একজন অত্যাচারী এবং চরিত্রহীন মানুষের সাথে সহাবস্থান করতে পেরেছিলেন? মেয়েটির মা ও নানী সম্পর্কে প্রকাশিত ভিডিও থেকে জানা যায় যে, পুরুষটি প্রাথমিক থেকেই একজন নির্যাতনকারী ছিলেন।

অসংখ্য ঘটনা আমাদের চারপাশে ঘটতে দেখা যায় যেখানে নারীরা নানান কারণে নির্যাতন সহ্য করে চলেছেন। যেসব নারী শিক্ষিত এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী, তারা কেন এমন অত্যাচার মেনে নিচ্ছেন, এ প্রশ্ন বারবার উঠে আসে। অনেকে বলেন, সম্পর্ক ভাঙ্গার ভয়ে বা লোকলজ্জার ভয়ে অত্যাচার সহ্য করেন নারীরা। কিন্তু এই কয়েকটি ঘটনা থেকে এই যুক্তি সব সময় খাটে না।

.

অনেক ক্ষেত্রে মনে হয়, নারীরা হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবেই নির্যাতন মেনে নিচ্ছেন। পরিবারের মর্যাদার বিষয়ে বাবা-মায়েরা ভেবে দেখেন যে, মেয়ের বিচ্ছেদ সমাজে কলঙ্ক বয়ে আনবে, অথচ অত্যাচার সহ্য করা নিয়ে তাদের চিন্তার কোনো শেষ নেই।

.

নারীদের অনেকে নিজেদের উপর হওয়া অত্যাচারের কথা গোপন করেন সামাজিক মর্যাদা রক্ষার জন্য। তবে আত্ম-সম্মান ও নিজের মানবাধিকারের প্রতি সচেতন হওয়া এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, কিন্তু অন্যদের নির্যাতনের প্রতি উদাসীন থাকাটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। নিজের জীবনের মর্যাদা এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখা প্রত্যেক নারীর অধিকার।