বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে কি না এবং তা কি সংকোচ ও অমানবিকতার বৃদ্ধিকে উদ্বুদ্ধ করছে? সময়ের সাথে এই ঘটনার হার বৃদ্ধি পেলেও মিডিয়ায় সব ঘটনা প্রচারিত হচ্ছে না। যদি প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনা মিডিয়াতে স্থান পেত, তাহলে সংখ্যাটি হয়তো আতঙ্কিত করার মতো হতো।

প্রিয় পাঠক, লক্ষ করবেন যে ধর্ষণের ঘটনায় প্রায়ই পুরুষকে অভিযুক্ত দেখা যায়। এই অপরাধ কি অন্যের উপর চরম আধিপত্য জারি করার এক ভয়াবহ উপায় নয়? ধর্ষিত হচ্ছেন কে? শুধুমাত্র নারী, মেয়ে শিশু এবং ছেলে শিশুরাই নয়, এমনকি অসহায়দেরও ধর্ষণ করা হচ্ছে। ধর্ষকের কোনো নির্দিষ্ট বয়স নির্ধারণ করা যায় না, তেমনি ধর্ষিতদেরও। প্রতিটি ঘটনার পর গণমাধ্যম ধিক্কার জানালেও, পরবর্তী ধর্ষকরা হয়তো এই সমালোচনায় অংশ নেয়। কিছুদিন পর সব আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।

সাময়িক ঘৃণা প্রদর্শন কী অর্জন করে, যদি তা হৃদয় থেকে না আসে? শারীরিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে অনেক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান হলেও, মানসিক ধর্ষণের ব্যাপারে কী হবে? রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়, যানবাহনে যাত্রা করার সময়, পার্ক বা রেস্তোরাঁতে বসার সময় কি মানসিক পীড়ন অনুভব হয় না? নারী হিসেবে, বলতে পারি যে, অবশ্যই কষ্ট হয় এটা দেখে যে কেবল নারীর শরীর হওয়ায় অশ্লীল ইশারা ও ভাবনা সহ্য করতে হয়। কিন্তু এর জন্য মামলা করা যায় না। যখন শারীরিক আঘাতের জন্যও সঠিক বিচার পাওয়া কঠিন, তখন মানসিক পীড়নের জন্য বিচার পাওয়া আরও দুরূহ। এমন অবস্থায় বরং আপনাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে আখ্যা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে এমনকি ছেলে শিশুরাও নিরাপদ নয়, এবং বিষয়টি সম্পর্কে অভিভাবকরাও যথেষ্ট সচেতন নন। অভিভাবকদের কেন সন্তানদের যথেষ্ট সময় দেওয়া উচিত, বিশেষ করে তাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত নিরাপত্তার কথা ভেবে। ধর্ষণ কারো জন্যই সুখকর নয়, এবং এটি একটি বিকৃত মানসিকতার ফল। কিন্তু কেন পতিতালয়ে না গিয়ে ধর্ষণ হচ্ছে? বৈচিত্র্যের অভাব কি কারণ? স্বাস্থ্যকর শারীরিক চাহিদা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকাও একটি কারণ। ধর্ষণ, পর্ন দেখা, মোবাইল সেক্স বা সেক্স টয়ের ব্যবহার এগুলো সঠিক পথ নয়। জ্ঞান অর্জনের জন্য সাহস করে প্রশ্ন করা উচিত, এবং শিক্ষার মাধ্যমে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা উচিত। এখন এসব বিষয় পাঠ্যপুস্তকেও যোগ হচ্ছে। পেটের ক্ষুধা মেটাতে ডাকাতি নয়, সৎভাবে উপার্জন করা উচিত।

অনেকে মনে করছেন যে ধর্ষকের ধর্ষণ যন্ত্র কেটে ফেলা উচিত। কিন্তু যন্ত্র নিজে কিভাবে দোষী হতে পারে? আসলে তার ব্যবহারকারীই দোষী। সম্প্রতি, ধর্ষণের শিকার মেয়েদের প্রশংসা করা হচ্ছে তাদের ঘটনা প্রকাশের জন্য। তবে, যারা আজ প্রশংসা করছেন, তারা কি আগামীদিনে সমালোচনা করবেন না? তারা কি ধর্ষিতা মেয়েকে নষ্টহিসেবে দেখবেন না? তবে শোষিত, আপনি জানুন, শেষ পর্যন্ত এই লড়াইটা আপনারই। নিজের আত্মবিকাশ ও পুনরুদ্ধারে আপনার নিজের দায়িত্ব সবচেয়ে বড়। দুর্বলতার মেঘগুলোকে উড়িয়ে দিন এবং সোনালী রোদ্দুরের আকাশে উজ্জ্বল হোন।