.

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে মাদ্রাসা বা আবাসিক মাদ্রাসায় এ ধরনের ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটে থাকে। এর মধ্যে কিছু ঘটনা সীমা ছাড়িয়ে গেলে শিশু আহত বা মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবার চুপ করে থাকে কারণ জনগণের লজ্জার ভয় থাকে। সমাজে অবমাননার ব্যাপার আছে। তবে আমি মনে করি, এর ওপর ধর্ম বা ধর্মীয় শিক্ষার কোনো প্রভাব নেই। এটি ব্যক্তির নিজস্ব বিকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। বাংলাদেশে যৌন নিপীড়ন বা যৌন বিকৃতির শিকার ছেলে-মেয়েদের সংখ্যা প্রচার না করায় এটা অপরাধ হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন না। শিশু অধিকার সংস্থাগুলো এ তথ্য জানাচ্ছে। তাদের মতে, প্রচারিত যৌন নির্যাতনের চেয়ে অপ্রকাশিত যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের সমাজে বা দেশের আইনে ছেলে-মেয়েদের যৌন নির্যাতনের বিষয়টিকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে যে আইনটি বিদ্যমান তাকে বলা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন। এতে শুধুমাত্র মেয়েদের যৌন নির্যাতনের শিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের সমাজের মানুষ, বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই ধারণা নিয়ে বড় হয় যে, অপব্যবহার মানেই মেয়েদের নির্যাতন। ছেলেদের নয়। ছেলেরা যে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পারে এই ধারণা কারো নেই। যারা নির্যাতনের শিকার তারাই এর ভয়াবহতা বোঝে। আমাদের সমাজে মা বা অভিভাবকরা মেয়েদেরকে শিশু হিসেবে শেখায় খারাপ স্পর্শ কাকে বলে, কিন্তু ছেলেদের কেউ শেখায় না। মনে হচ্ছে এই বাধা ভাঙার সময় এসেছে।

.

ছেলে হোক বা মেয়ে, উভয়েই যৌন হয়রানি ও যৌন বিকৃতির শিকার হতে পারে। সবাইকে বলা উচিত যে মেয়েদের রক্ষা করা জরুরী, তবে এর মধ্যে ছেলেটি সমকামী বা বিকৃত মানসিকতার শিকার কিনা সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার। বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষকদের দ্বারা যৌন অপরাধ নতুন কিছু নয়। ঐতিহাসিকভাবে, এই প্রবণতা লক্ষণীয়। তারা কখনো সমকামী, কখনো ধর্ষক, কখনো বহুবিবাহকারী, কখনো বিকৃত যৌনকর্মী হিসেবে সমাজের সামনে নিজেদের উন্মোচিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটাই হয়ে আসছে। শিশু অধিকার ফোরাম রিপোর্ট করেছে যে 2017 সালে বাংলাদেশে 14 জন ছেলে ও মেয়ে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের অধিকাংশই অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক। তবে শুধু কিছু মাদ্রাসা শিক্ষককে দোষী বলা ঠিক হবে না। এই তালিকায় পরিবারের কাছের কেউও রয়েছে। যিনি পরিবারের সবার সাথে সুসম্পর্কের ভিত্তিতে একটি মুখোশ পরেন। এই তালিকায় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাকে নিয়ে ছেলে মেয়ে কথা বলতে পারে না, পাছে বাবা-মা মনে করে ছেলেটা পড়াশুনা না করার অজুহাত দিচ্ছে। এই ধরনের বিকৃত যৌন হয়রানি ঘটে চায়ের দোকান, রেস্তোরাঁ বা রিকশার গ্যারেজে, বিশেষ করে যেখানে অনেক লোক ভিড়ের জায়গায় থাকে। পথশিশু, বাস, ট্রেন বা লঞ্চ টার্মিনালে কাজ করা ছেলেরা এই ধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই রোগসমাজের ধনী শ্রেণীর মধ্যেও বিদ্যমান। হুমায়ূন আহমেদ তার ঘেটু পুত্র কমলাছবিতে তা ভালো করে দেখিয়েছেন। এটা আমাদের গল্প, উপন্যাস বা সাহিত্যে প্রচলিত আছে। এতেই বোঝা যায় আমাদের সমাজের বাস্তবতা কতটা নিষ্ঠুর।

.

যেসব ইমাম বা মাদ্রাসা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বাড়িতে কি স্ত্রী-সন্তান নেই নাকি তাদের নারীদেরঅভাব আছে? ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করলে ব্যাপারটা এরকম হয়ে যায়। তারা সমাজে এমন একটি মুখোশ পরেন যে তারা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসাবে সম্মানিত হয়। তারা যে কোনো অনুষ্ঠানে খাবার হিসেবে ভালো মুরগির মাংস, ছাগলের কলিজা এবং গরুর কলিজা খায়। অতিথি হয়ে কোথাও গেলে যত্নের অভাব নেই। যেকোনো বিষয়ে তাদের পরামর্শও নেওয়া হয়। অনেকের অনেক দূরে পরিবারও আছে। তাই ইচ্ছা থাকলেও তারা সহজে তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারে না। সেই অবদমিত যৌন চর্চার ফলে তারা অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের নির্যাতন করে। কারণ সেখানে সহজে প্রবেশাধিকার রয়েছে। এরকম অনেক ঘটনাই অজানা থেকে যায়। কিন্তু এখন অনেকেই সাহসী হয়ে উঠেছেন, তাই মুখোশ খুলে যাচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই ভালো। অন্তত শিশুরা নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।