“নারী” দুই অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ অথচ এই মানুষটি অপর একজন মানুষের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠায় পরম মমতা, ভালোবাসা ও নিভর্রতা দিয়ে একজন মা, মেয়ে এবং স্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আজ সহকর্মী, পেশাজীবি কিংবা ব্যবসায়ীর দায়িত্বও পালন করছে। তাদের ছিলোনা আলাদা কোন পরিচয়। এই অন্তপুরবাসীদের নারীর জীবন পথ-হাটতে ক্রমশ তারা শিক্ষার আলোতে আলোকিত হয় এবং তাদের এই উপলব্ধিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন আর এক নারী ”বেগম রোকেয়া”। নারীরা আজ আর বন্দী নয় তারা আকাশ পাড়ি দিয়ে পৌছে গেছে মহাকাশে। তবে পুরোপুরি স্বাধীনতা তারা এখনো পায়নি। যতটা আজ এগিয়েছে নারী তার চেয়ে বেশী এগুবার যোগ্যতা রাখে আজকের নারী, যোগ্যতা রাখে সঠিক ক্ষমতায়নে ।
ক্ষমতায়ন বলতে সাধারনত সকল ক্ষেত্রে স্বাধীনতা,অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রনকে বোঝায়। নারীর ক্ষমতায়নকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সামাজিক ক্ষমতায়ন ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ধারায় নারীর পূর্ণ অংশগ্রহণ। ব্যাখ্যা দিয়ে বলতে গেলে বিভিন্নক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বাস্তবায়ন এবং সমতার ভিত্তিতে সুফল ভোগে নারীর পূর্ণ মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়া। সামাজিক ক্ষমতায়ন বলতে নারীর অধিকার ভোগের বিষয়টি প্রথমে আসে। সমাজে নারী কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে এবং সেই ভূমিকা পালনে তার ক্ষমতার চর্চা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়টি বোঝায়। আর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হলো রাজনীতি চর্চায় নারীর পূর্ণ অংশগ্রহণ যেমন- ভোট প্রদান, নির্বাচনে অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক দলে সমতার জায়গায় তার অর্জন কতটুকু নিশ্চিত তা বোঝায়। এসব জায়গায় নারী বৈষম্যের শিকার বলে পুরুষের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন একই অর্থে ব্যাখ্যা করা যায় না। সেজন্য ক্ষমতায়নের ধারণা পুরুষের জন্য এক রকম, নারীর জন্য অন্য রকম। নারীর ক্ষমতায়ন হলো সমতাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার প্রধান দিক।
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু নারীর অগ্রযাত্রাকে স্থায়ী রূপ দিতে ১৯৭২ সালে সংবিধানে সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি সমাজে নারী পুরুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী ছিলেন। তার সময়ে সংসদে নারীর জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে ফিরে তাকালে আমরা দেখি বাংলাদেশের বর্তমান সংসদ নেতা ও সরকার প্রধান একজন নারী। সংসদ উপনেতা ও বিরোধীদলীয় নেতাও নারী। এমনকি এদেশের সংসদের স্পীকারও একজন নারী। মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ৬ জন নারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। স্থানীয় সরকারেও প্রায় ১৪ হাজার ২শ’ নারী নির্বাচিত হয়েছে জনসেবা করছেন। এক সম্মেলনে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বলেন, “নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বিশ্বে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।” আর এই অর্জন অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে। আজকের দিনে নারী উন্নয়নের জন্য নীতিমালা প্রনয়ণ ক্রা হয়েছে। যার আওতায় বিভিন্ন সংস্থা নারী উন্নয়নকেন্দ্রিক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়াও জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করতে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। বাজেট বরাদ্দের শতকরা প্রায় ২৮ ভাগ নারী উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। মাতৃকালীন ছুটি বাড়ানো হয়েছে ৬ মাস। আবার যদি পিছনে ফিরে তাকাই তাহলে দেখা যাবে ৪৭-পরবর্তী সময়ে বাংলার নারী-জাগরণের সূচনায় অনেকেরই অনবদ্য অবদান ছিলো। সশ্রদ্ধচিত্তে তাদের কথা স্মরণ করতে হয় যেমন- সুফিয়া কামাল, নূরজাহান বেগম প্রমুখ। তারা সেই সময়েই বহু ত্যাগ তিতিক্ষা পেরিয়ে সম-অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মাধ্যমে এনজিওভিত্তিক নারী-আন্দোলনের বিশাল ক্ষেত্র উন্মোচিত করে দিয়েছিলেন। নানা আর্থসামাজিক ও রাজনীতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে অভাবনীয় আর্থিক সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে মূলত নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতির জন্য। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশ সরকারের নারী উন্নয়ন নীতি ও তা বাস্তবায়নের কার্যকর কৌশলের লক্ষ্যে যে ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে, তার মাধ্যমে বাংলার নারীজীবনে এক নীরব বিপবের সূচনা ঘটে, যাকে বিশ্বব্যাংক আখ্যা দিয়েছে ‘হুইসপার টু ভয়েসেস’ (২০০৮)। দেশে বিভিন্ন স্তরে নারীদের ক্ষমতা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।