পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ধর্মবিশ্বাসী। আর মানব ইতিহাসের বড় বড় সহিংস কর্মকাণ্ডের পেছনে ধর্মকে ইস্যু করা হয়েছে। ধর্মীয় দাঙ্গায় কোটি কোটি মানুষ প্রাণ দিয়েছে, উদ্বাস্তু, সর্বহারা হয়েছে। আজ ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে সহজেই ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে বোকা বানিয়ে সহিংস রাজনীতিক কর্মসূচি ও জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, মানুষের ঈমানকে ভুল পথে পরিচালিত করে রাজনীতি ও ব্যবসার পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। নামায পড়ানো, ওয়াজ করা থেকে শুরু করে ধর্মের কোনো কাজ এমনকি মুর্দা দাফনও এখন টাকা ছাড়া হয় না।
অপরাধ জগতের নতুন এক মাত্রা হচ্ছে ধর্ম ব্যবসা। বিনা পুঁজিতে সবচেয়ে লাভজনক ধর্মব্যবসা হচ্ছে ‘পীরত্ব’। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই প্রমাণিত হয়েছে এরা ভন্ড। সরকারের নাকের ডগার উপর দিয়ে এ ধরনের ভন্ডরা বিভিন্ন রকম ভাওতাবাজী দিয়ে সাধারণ নিরীহ মানুষকে ঠকিয়ে যাচ্ছে।
ভন্ড পীরদের অনেক সময় লাল কাপড় শরীরে পেচাতে দেখা যায়। এরা হুজুরায় বসে সংঘবদ্ধ ভন্ডামীর দ্বারা সাধারণ মানুষদের ঘায়েল করে। থানা, পুলিশ ও পাড়ার বখাটে উঠতি মাস্তানদের সাথে এদের আঁতাত থাকে। এমনকি সপ্তাহান্তে এদের খুশী করার জন্য মদ ও নারীর চালানের ব্যবস্থা করা হয়। শুধু তাই নয়, এ ধরনের ভন্ড পীর পিপাসুরা বিভিন্ন জায়গায় বিয়ের ছলে নারীর সম্ভ্রমহানী করে থাকে। ভন্ডপীর নামধারীরা আমাদের সমাজের ভাইরাস। এরা সমাজের ক্যান্সার। ভন্ড পীরেরা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যাত্রাবাড়ীর এক নামকরা ভন্ডপীরের সাবেক দেহরক্ষী যে কিনা বর্তমানে সিডনিতে রয়েছেন তার কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তার তথ্য অনুযায়ী, যাত্রাবাড়ীর সেই ভন্ড হুজুর ছিল নারী লোভী। ৬/৭ জন সুন্দরী অল্প বয়স্কা যুবতীরা তার খেদমতে সারাক্ষণ নিয়োজিত থাকত। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর বিপদগ্রস্থ শিক্ষিত, অশিক্ষিত লোক আসতো সেখানে। জ্বীনে-ধরা রোগী এবং বন্ধ্যা রোগীকে খুব সহজে রেইপ করা যেত। জ্বীনে ধরা রোগীকে আলাদা কামরায় নিয়ে দোয়া পড়ে তদবীর দিতে হবে বলে রোগীর সাথে আসা আত্মীয় স্বজন থেকে আলাদা করা হত। এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে হাত পা বেধে ভন্ড পীর ও তার সহযোগীরা অসহায় নারীদের ধর্ষন করত। ধর্ষিতা নারীরা ঐ নরপশুর হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আত্মীয় স্বজনের কাছে অভিযোগ করলেও কেউ আমলে নিত না। তাছাড়া, বন্ধ্যা মহিলাদেরকেও পাশের রুমে একা ঝার-ফুক করবে বলে নিয়ে একই চিকিৎসা দেয়া হতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্ধ্যা মহিলা মান-সম্মানের ভয়ে কিছু বলত না। কিছুদিন পর কোন নারী যদি সন্তান সম্ভবা হত তবে তাকে ভয় দেখিয়ে, ফুসলিয়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করত এ ভন্ডপীর তার সাঙ্গপাঙ্গ  নিয়ে। এমনও ভন্ডপীর আছে, যে কিনা একই সময় মা ও মেয়েকে ধর্ষন করেছে। রোগী বেশী অসুস্থ্য হয়ে পরলে “পানি পড়া” নামক বিশেষ তদবির দেয় অনেক ভন্ডপীর। জানা গেছে একই রাতে দু’বোনকে ধর্ষন করেছে আর এক ভন্ডপীর, যার বিশাল সাম্রাজ্য লালবাগে।
এ রকম হাজারো ভন্ডপীররা রয়েছে আমাদের চারপাশেই। এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য- সিরাজদিখানের খাস নগরের নিরক্ষর কুয়েত ফেরত আমজাদ হোসেন বেপারী, কদমতলীর টাইগার বাবা, কুমিল্লার বরুরা থানার খোশবাস গ্রামের বিড়ি বাবা, চান্দিনা কুমিল্লার লাঠি বাবা, কুমিল্লার ধর্মপুর গ্রামে গাজী বাড়ি আব্দুর রউফ বাবা, বেগমগঞ্জ নোয়াখালী -চন্দ্রগঞ্জে বাজারের অদূরে আইলাপুরের ভববতী গ্রামে মহিলা পির বিবি-সুরাইয়া, ভন্ড কবিরাজ ফেনীর আলিম খন্দকার, শাহাবুদ্দিন খনার। এছাড়াও পুরাণা পল্টনের নুরুল আলম নামের ভন্ড কবিরাজের তিন তলায় চলে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কাজ।
নানা ধরনের উদ্ভট নামে এরা পরিচিত। অনেক সময় আসল নাম গোপন রেখে এরা সাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করে যায়। এদের মধ্যে অনেকেরই পিছনের জীবনে কলঙ্কজনক অধ্যায় রয়েছে আবার অনেকে জেল খাটা মারাত্মক আসামী। তাই নাম গোপনের পিছনে অনেক রহস্য বিদ্যমান। এদের কেউ কেউ দয়াল বাবা, কেউ সুরেস্বর, কেউ বড় ভাই, কেউ আবার বাবা, কেউ মামা, কেউ আট রশি, কেউ হুজুরে কিবলা, কেউ মাটি বাবা, কেউ লেংটা, কেউ ফুক বাবা ইত্যাদি।
এছাড়াও হাই কোর্ট ভবনের পিছনে ছোট টংয়ের কথা হয়তো অনেকেই জানেন। সেখানে ২৪ ঘন্টা ঐ ভন্ডপীরদের মাদক দ্রব্য সেবন করতে দেখা যায়। মাজারের নামে প্রতিরাতে এখানে বসে রমরমা গাঁজা আফিম সহ নানা রকম মাদকের আসর। বছরে একবার শিন্নির নামে বিরাট ওরসের লোক দেখানো আয়োজন করা হয়। অনেক নারীই ঐ রাতে ধর্ষনের শিকার হয়।
এসব ভন্ডপীরদের অচিরেই আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে তারা সাধারণ মানুষের সারল্যকে কাজে লাগিয়ে তাদেরই নাকের ডগা দিয়ে অসহায় নারীদের কোন ধরনের ক্ষতি করতে না পারে।