সাধারণ জ্ঞানে কি বাংলাদেশকে ‘সর্বোচ্চ ধর্ষণ সংঘটিত হওয়া দেশ’ হিসেবে জানতে হবে? প্রবল জোয়ারের মতো ধর্ষণ ভেঙে দিচ্ছে সংকোচ, উদ্বুদ্ধ করছে অমানবিক হতে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সবগুলো ঘটনা মিডিয়ায় পৌঁছুতেও পারছে না! যদি প্রত্যেকটা ধর্ষণকে নিয়ে আসা যেত প্রচারমাধ্যমের পাতায়, তবে নিশ্চয়ই সংখ্যাটি আঁতকে ওঠার মতো হতো।
যাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে তাকে কিন্তু অসহায় ভেবেই ধর্ষণ করা হচ্ছে। ধর্ষক হিসেবে আমরা কোন নির্দিষ্ট বয়সী ‘পুরুষকে’ নির্ধারণ করতে পারি না, যেমন পারি না ধর্ষিত হিসেবে নির্দিষ্ট বয়সী কোন নারীকে বা শিশুকে। একেকটি ঘটনা ঘটার পর ধিক্কারে সয়লাব হয়ে যায় গণমাধ্যম। হয়তো ভবিষ্যতের ধর্ষকরাও এতে সামিল হয়! কয়েকদিন পর আবার যে কে সেই।
কী হয় সাময়িক ঘৃণা প্রদর্শনে? যদি না তা আসে মন থেকে? শারীরিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে তা ও কয়েকদিন লেখালেখি, টক শো, সেমিনার ইত্যাদি হয়। কিন্তু মানসিক ধর্ষণের কী হবে? যখন আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, চড়ছেন যানবাহনে, বসে আছেন পার্কে বা রেস্তোরাঁয়? তখন কি অনুভব করছেন না মানসিক পীড়ন, কষ্ট হচ্ছে না একটুও? একজন নারী হিসেবে আমি বলতে পারি অবশ্যই কষ্ট হয়, কষ্ট হয় এটা দেখে যে আমি একজন নারীর শরীর বয়ে বেড়াচ্ছি বলে জানোয়ারগুলোর জিভ দিয়ে লালা ঝরতে হবে! মনে মনে আমাকে নিয়ে যা খুশি ভেবে অশ্লীল ইশারা করতে হবে! এজন্য অবশ্য মামলা করা যাবে না! যেখানে সারা শরীরে নির্মম চিহ্ন বহন করার পরও কোন বিচার পাওয়া যায় না, সেখানে মানসিক কষ্টের জন্য বিচার পাওয়া তো অসম্ভব। বরঞ্চ আপনি তখন মানসিক ভারসাম্যহীন বলে তকমা পাবেন!
বাংলাদেশে এখন একজন ছেলে শিশুও নিরাপদ নয়। আশংকার বিষয় হচ্ছে, বাবা-মায়েরাও এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নন।আপনি বা আপনারা বাচ্চাকে সময় দিতে পারছেন না কেন? সন্তানের ভবিষ্যত জীবনের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু বর্তমানের নিরাপত্তার কী হবে? ধর্ষণ কারো জন্যই সুখকর কোন বিষয় নয়। ধর্ষণ কেন হবে যেখানে সমাজ আপনাকে আপনার বিকৃত মানসিকতা উপস্থাপনের বৈধতা দিয়েছে। পতিতালয়গুলো তো আপনার জন্য অপেক্ষমান। আপনি সেখানে যান না কেন? টাকার সমস্যা? নাকি বৈচিত্র্যহীনতা?
সবসময় একই ‘খাবার’ ভালো লাগে না বলে? কিন্তু সঙ্গতি অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা উচিত নয় কি? ছোটবেলা থেকে আপনি জানতে পারেননি স্বাস্থ্যকর শারীরিক চাহিদার বিষয়টি কী, এটা এ সমাজে বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই না জেনে বড় হয়। তাই বলে কি তারা সবাই ধর্ষক হয়!তাই বলে কি সবাই পর্ন দেখে বা মোবাইল সেক্স বা সেক্স টয়ের দারস্থ হয়? আপনি জানতে চাইলে জানার উৎস আছে। সাহস করে প্রশ্ন করুন, যার কাছে সঠিক জবাব পাওয়া যাবে বলে মনে করেন। এখন তো বিষয়গুলো সামনে আসছে,পাঠ্যপুস্তকেও যোগ হচ্ছে। পেটে ক্ষুধা অথচ ডাকাতি করে খেতে হবে, এরকম না ভেবে সৎভাবে উপার্জন করে খান।
অনেকেই বলছে -ধর্ষকের ধর্ষণ যন্ত্র কেটে ফেলা হোক। আমার কথা হচ্ছে, যন্ত্র নিজে কী করে দোষী হয়? তাকে তো ব্যবহার করতে হয়। তাহলে ব্যবহারকারী দায়ী না হলে যন্ত্র দায়ী হবে কেন?
ধর্ষণের শিকার মেয়েকে বাহবা দেয়া হচ্ছে ইদানিং ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করার জন্য! কিন্তু আজ যারা বাহবা দিচ্ছেন, কাল কি তারা আঙুল তুলবেন না, বলবেন না-মেয়েটা নষ্ট হয়ে গেছে? কেউ কি জেনেশুনে চাইবেন তাকে নিজের সঙ্গী করার জন্য? হয়তো সমাজ বদলে যাচ্ছে, হয়তো কেউ এগিয়ে আসবেন, করুণা করে, হয়তো ভালোবেসে!
কিন্তু শোষিত, তোমাকে বলছি, দিনশেষে লড়াইটা তোমার একার! নিজের আত্মবিকাশে নিজের দায় সবচেয়ে বেশি!উড়িয়ে দাও দুর্বলতার মেঘগুলোকে, হয়ে ওঠো রৌদ্রোজ্জ্বল সুনীল আকাশ!