​প্রায় সময়ই শুনি যে, সৌদি আরব এবং এই ধরণের ইসলামি দেশগুলোতে নাকি ধর্ষণ হয় না। মেয়েরা খুব সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করে। শুনে ভালই লাগে। নবী রাসুলের দেশ বলে কথা। কিন্তু যখনই আমাদের নারী শ্রমিকদের সৌদি সরকার নেয়ার চেষ্টা করে, বুকটা কেঁপে ওঠে। কয়েকবছর আগে দশ হাজার নারী শ্রমিক নেয়ার কথা বলেছিল সৌদি সরকার। আমাদের সরকার খুশিতে আগডুম বাকডুম হয়ে নারী শ্রমিক পাঠাবার তোড়জোড় করছিল। কিন্তু আগের নারী শ্রমিকদের যেই অভিজ্ঞতার কথা আমরা শুনেছি, সেগুলো রীতিমত ভয়াবহ। আরব মুসলমানরা বাঙালি নারীকে যৌনদাসী ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারে না। তাদেরই যদি এই অবস্থা হয়, আরব নারীদের কী অবস্থা? তারা কী নির্যাতনের কথা বলার অধিকার রাখে?

ইউরোপ অ্যামেরিকায় একটা মেয়ের গায়ে হাত দিলেও, সাথে সাথে পুলিশ চলে আসবে। এবং এই অপরাধ নিয়ে বড় হইচই হবে। ধর্ষণ করলে তো শাস্তি হবেই। সামান্য কিছু ঘটনা বাদে, ইউরোপ অ্যামেরিকায় মেয়েরা এই ধরণের ঘটনা ঘটলে লজ্জায় মুখ বুজে থাকে না। এই ঘটনা জানাজানি হলে তারা সামাজিকভাবে লজ্জিতও হয় না। বরঞ্চ বেশিরভাগ মানুষই তার সাহসের প্রশংসা করে। টিভিতে মেয়েটি সাহসের সাথেই সাক্ষাৎকার দিতে পারে। সে কারণেই, তারা মুখ ফুটে এসব কথা পুলিশকে বলতে পারে। এই কিছুদিন আগেই কোলনে নারী নির্যাতনের ঘটনায় একজন মেয়ে নিজেই টিভি চ্যানেল অফিসে এসে ঘটনার বর্ণনা করছিল। তাতে তার একটুও লজ্জা পেতে হয় নি, বা সামাজিকভাবেও হেয় হতে হয় নি। কিন্তু বাঙলাদেশে, পয়লা বৈশাখে যা ঘটলো, অনেক মেয়েই লজ্জায় কাউকে কিছু বলে নি। নিজের ছবি এবং চেহারা দেখিয়ে সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে, নানাভাবে তাকেই হেয় করা হবে। বলা হবে তারই চরিত্রের দোষ ছিল। জামাকাপড় ঠিক ছিল না। কেন গিয়েছিল সেখানে? পুলিশ সেগুলো নিয়েই জেরা করবে।

ধর্মপ্রবণ দেশগুলোতে উল্টো ধর্ষিতাকেই নানাভাবে অপমান অপদস্থ করা হয়। সামাজিকভাবে হেয় করা হয়, পারিবারিকভাবেও। ধর্ষণের প্রমাণ দিতে দিতে তার জীবন দিতে হয়। সামাজিক লজ্জা আর পারিবারিক আপমান করার কথা তো বাদই দিলাম। শরীয়া আইন অনুসারে চারজন (বা ক্ষেত্রবিশেষে তিনজন) পুরুষ সাক্ষী প্রয়োজন হয়, ধর্ষণ যে হয়েছে তা প্রমাণ করতে। সাক্ষীসাবুদ আনতে না পারলে মেয়েটাকেই শাস্তি পেতে হয় জিনার দায়ে। এটাই শরীয়া আইন। এখন এতগুলো পুরুষ সাক্ষী নিয়ে কোন মেয়ে খুব প্ল্যান মাফিক ধর্ষিত হতে যায়? তাই সেসব দেশে ধর্ষণের কোন অভিযোগই আরোপ করা হয় না। কারণ মেয়েরা জানে, এগুলোই তাদের ভবিতব্য। এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে উল্টো তাকেই শাস্তি পেতে হবে। হেয় হতে হবে। তাকেই চরিত্রহীন প্রমাণ করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই তাই মুসলিম দেশগুলোতে ধর্ষণের অফিশিয়াল রিপোর্টের সংখ্যা কম থাকে।

এই যেমন ধরুন, তনুর কথাই। এখন বলা হচ্ছে তনুর ধর্ষণ হয় নি। কেউ তাকে মারেও নি। বেচারি মেয়েটা নিজেই নিজেকে মেরেটেরে হয়তো ধর্ষণ করেছে। তার পরিবারকে নিয়ে নোংরামি চলছে। মেয়েটাকে ধর্ষণ করে, মেরে ফেলে, এখন তার পরিবার শুদ্ধ ধর্ষণ করা হচ্ছে। বারবার। তার লাশ উঠিয়ে আবারো ধর্ষণ করা হচ্ছে। এখন করছে সরকার। এই ঘটনা জানার পরে, আর কোন মেয়ে ধর্ষিত হলে মুখ ফুটে কিছু বলবে? ভেবে দেখুন, কাল আপনার বোন ধর্ষিত হলে, আপনি লোকলজ্জার ভয়ে, পুলিশী নির্যাতন আর সরকারী নোংরামির ভয়ে তাকে চুপ করে থাকতে বলবেন কিনা। নাকি তাকে বলবেন, প্রকাশ্যে জোরালোভাবে এর বিচার দাবী করতে? বিচার চাইতে গেলে, সামাজিক লজ্জার কথা কি আপনি ভাববেন না?

বাংলাদেশ ক্রমশ সৌদি হয়ে উঠছে। কিছুদিন পরে আমরাও হয়তো গর্ব করে বলতে পারবো, দেশে কোন ধর্ষণ হয় না। কারণ কোন মেয়ে এত আহাম্মক হবে যে, ধর্ষিত হয়ে তার আবার বিচার চাইবে? থানা পুলিশ, নোংরা সাংবাদিক, উকিলের নোংরা নোংরা জেরা, ডাক্তারের নোংরা নোংরা পরীক্ষা, এতকিছুর পরে যদি তাও সে মামলা করতে পারে, তখন প্রমাণ করে দেয়া হবে তারি চরিত্রের ঠিক ছিল না। কাপড়ের ফাঁক দিয়ে চুল দেখা যাচ্ছিল। সেই চুল দেখে বেচারা দুগ্ধপোষ্য নাবালক ধর্ষকটি উত্তেজিত হয়েছিল!

বাংলাদেশ ক্রমশ সৌদি হয়ে উঠছে। কিছুদিন পরে আমরাও হয়তো গর্ব করে বলতে পারবো, দেশে কোন ধর্ষণ হয় না। কারণ কোন মেয়ে এত আহাম্মক হবে যে, ধর্ষিত হয়ে তার আবার বিচার চাইবে? থানা পুলিশ, নোংরা সাংবাদিক, উকিলের নোংরা নোংরা জেরা, ডাক্তারের নোংরা নোংরা পরীক্ষা, এতকিছুর পরে যদি তাও সে মামলা করতে পারে, তখন প্রমাণ করে দেয়া হবে তারি চরিত্রের ঠিক ছিল না। কাপড়ের ফাঁক দিয়ে চুল দেখা যাচ্ছিল। সেই চুল দেখে বেচারা দুগ্ধপোষ্য নাবালক ধর্ষকটি উত্তেজিত হয়েছিল!

উদাহরণগুলো হয়তো অফিশিয়ালি ধর্ষণের রিপোর্টের হার অনেক অনেক কমিয়ে দেবে, কিন্তু আমাদের মেয়েরা একটু সম্মান নিয়ে চলাফেরা করতে পারবে তো? আর আমরা কিছুদিন পরে মেয়ে সন্তান হলে ভয়ে আতঁকে উঠবো না তো?