মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও কোনো সংখ্যালঘুর অধিকারই নেই। সমকামীদের অধিকার তো এখনো কল্পনাই করা যায় না। বাংলাদেশে পাবলিকভাবে সমকামী কোনো আইকন এখনো পর্যন্ত নেই।

 

সমকামীতার বিরুদ্ধে ৯০% মুসলমানের দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাও যেন লেগে আছে। জুলহাজ মান্নান, মাহবুব তনয়কে হত্যা করার পরও আমাদের দেশের পাবলিক ডিসকোর্সে সমকামীতা আলোচনার বিষয় হয় নি। এর পেছনে একটাই কারণ, ধর্ম আর ধর্মের politicization।

 

জুলহাজ মান্নানকে হত্যার পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে যেন খুনীদের প্রতি তাদের প্রচ্ছন্ন সমর্থনের আভাস পাওয়া যায়। উনার লাইফস্টাইল নাকি আমাদের সমাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না! প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক বামেরাও সমকামীতাকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার হিসাবে একে খারিজ করে দেন! দিন শেষে তারাও তো রাজনীতিবিদ! তাদেরও একটা ধর্মকে সমীহ করেই চলতে হয়।

 

তো, কী বলে সে ধর্ম?

 

আব্রাহামিক ধর্মের মধ্যে ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে কর্তৃত্ববাদী, অন্ততপক্ষে এশিয়া অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে।

 

ইসলামের মূল পাঠ্য হচ্ছে কোরআন, আর সহায়ক হচ্ছে হাদীস। এবার দেখি আসুন কোরআন কী বলে।

 

সূরা আল-আ’রাফ

 

7:80

 

আর আমি লূতকে পাঠিয়েছিলাম। সে তার কাওমকে বলেছিলঃ তোমরা এমন অশ্লীল ও কু-কর্ম করছো যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে আর কেহই করেনি।

 

(লূত নবীকে আল্লাহ পাঠিয়েছিলেন Sodom and Gamorrah অঞ্চলে, যেখানে তারা নাকি সমকামীতায় লিপ্ত হত বেশি)

 

 

সূরা আশ-শু’আরা

 

26:165

 

সৃষ্টির মধ্যে তোমরা কি শুধু পুরুষের সাথেই উপগত হবে?

 

26:166

 

আর তোমাদের রাব্ব তোমাদের জন্য যে স্ত্রীলোক সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে তোমরা বর্জন করে থাক, বরং তোমরা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।

 

26:167

 

তারা বললঃ হে লূত! তুমি যদি নিবৃত্ত না হও তাহলে অবশ্যই তুমি নির্বাসিত হবে।

 

26:168

 

লূত বলল, আমি তোমাদের এই কাজকে ঘৃণা করি।

 

26:169

 

হে আমার রাব্ব! আমাকে ও আমার পরিবারবর্গকে, তারা যা করে তা হতে রক্ষা কর।

 

26:170

 

অতঃপর আমি তাকে এবং তার পরিবার পরিজনের সবাইকে রক্ষা করলাম –

26:171

 

এক বৃদ্ধা ব্যতীত, সে ছিল পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

26:172

 

অতঃপর অন্যদেরকে ধ্বংস করলাম।

 

26:173

 

তাদের উপর শাস্তিমূলক বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম, এবং ভীতি প্রদর্শনের জন্য এই বৃষ্টি ছিল কত নিকৃষ্ট!

 

 

সুরা আন-নামাল

 

 

27:54

 

স্মরণ কর লূতের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমরা জেনে শুনে কেন অশ্লীল কাজ করছ?

 

27:55

 

তোমরা কি কাম-তৃপ্তির জন্য নারীকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরাতো এক অজ্ঞ সম্প্রদায়।

 

27:56

 

উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বললঃ লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ হতে বহিস্কার কর, এরাতো এমন লোক যারা অতি পবিত্র সাজতে চায়।

 

27:57

 

অতঃপর তাকে ও তার পরিজনবর্গকে আমি উদ্ধার করলাম, তার স্ত্রী ব্যতীত, তাকে করেছিলাম ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।

 

 

27:58

 

তাদের উপর ভয়ঙ্কর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম; যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল তাদের জন্য এই বর্ষণ ছিল কত মারাত্মক।

 

সুরা আল-আনকাবূত

 

29:28

স্মরণ কর লূতের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছো যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেহ করেনি।

 

29:29

 

তোমরা পুরুষের উপর উপগত হচ্ছ এবং তোমরা রাহাজানি করে থাক এবং তোমরা নিজেদের মজলিশে প্রকাশ্য ঘৃণ্য কাজ করে থাক। উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু এই বললঃ আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি আনয়ন কর, যদি তুমি সত্যবাদী হও।

 

29:30

 

সে বললঃ হে আমার রাব্ব! বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন।

 

29:31

যখন আমার প্রেরিত মালাইকা/ফেরেশতারা সুসংবাদসহ ইবরাহীমের নিকট এলো, তারা বলেছিলঃ আমরা এই জনপদবাসীকে ধ্বংস করব, এর অধিবাসীতো সীমা লংঘনকারী।

 

এছাড়াও হাদীস সমকামীতার শাস্তির বর্ণনা আছে যা শরীয়তের আইনের উৎস বলে বিবেচিত।

 

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)

অধ্যায়ঃ ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি (كتاب الحدود)

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৩

২৯. কেউ কওমে লূতের অনুরূপ অপকর্ম করলে

৪৪৬৩। ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, অবিবাহিতদের লাওয়াতাতে (পায়ুকামে) লিপ্ত পাওয়া গেলে রজম করা হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আসিম (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীস আমর ইবনু আবূ আমরের হাদীসকে দুর্বল প্রমাণিত করে

 

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)

অধ্যায়ঃ ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি (كتاب الحدود)

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬২

২৯. কেউ কওমে লূতের অনুরূপ অপকর্ম করলে

৪৪৬২। ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কাউকে যদি লূত গোত্রের মতই কুর্কমে লিপ্ত দেখতে পাও তাহলে কর্তা ও যার সঙ্গে করা হয়েছে তাদের উভয়কে হত্যা করো।

 

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)

অধ্যায়ঃ ২৬/ গণ-গোসলখানা (كتاب الحمَّام)

হাদিস নম্বরঃ ৪০১৮

৩. উলঙ্গ হওয়া সম্পর্কে

৪০১৮। আব্দুর রাহমান ইবনু অবাূ সাঈদ আল-খুদরী থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোনো পুরুষ অন্য পুরুষের গোপন অঙ্গের দিকে তাকাবে না এবং কোনো নারীও অন্য নারীর গোপন অঙ্গের দিকে তাকাবে না। আর কোনো পুরুষ অপর পুরুষের সাথে একই কাপড়ের ভিতরে একত্রে ঘুমাবে না এবং কোনো নারীও অপর নারীর সাথে একই কাপড়ের ভিতরে ঘুমাবে না।

 

অনেক আধুনিক মধ্যমপন্থী মুসলিম হাদীস মানেন না। তারা হাদীসের অসংগতি, বিদ্বেষ দেখে শিউরে উঠেন। হাদীসে নারীবিদ্বেষ দেখে তারা লজ্জা পান। তবে তাদের কেউই সমকামীতার ব্যাপারে হাদীস দেখে লজ্জা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন না।