বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কিছু মানুষ নিজ লিঙ্গের মানুষকে যৌনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেন। আপনি ভাবতে পারেন ভালোবাসা তো ভালোবাসাই- কিন্তু বিষয়টা কি এত সহজ?
২০০১ সালে নেদারল্যান্ড প্রথম সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনগত বৈধতা দেওয়ার পর তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেছে আরও দশটি জাতি। ২০১১ সালে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল ঐতিহাসিক একটি সনদ পাশ করে যেখানে আন্তঃসরকার বডি ‘‘এ মর্মে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, গোটা বিশ্বে যৌনজীবনের ভিন্নতা ও লৈঙ্গিক পরিচিতির জন্য কিছু মানুষকে বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হতে হচ্ছে।’’
জাতিসংঘের মহাসচিব পরিষদকে বলেছেন যেন এটি ‘‘কর্মক্ষেত্র, বিদ্যালয় ও হাসপাতালগুলোতে বিস্তৃত পক্ষপাতিত্ব এবং যৌন আক্রমণসহ সব ধরনের সহিংস আক্রমণের’’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়’’; তিনি এ প্রসঙ্গে এ সত্যও তুলে ধরেছেন যে, সমকামী নারী-পুরুষদের বন্দী, নির্যাতন ও হত্যা করা হচ্ছে; এটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
বাংলাদেশে যারা সমলিঙ্গের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আগ্রহী তাদের আইনগত দিক থেকে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে; তাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও একবারে নেই। বাংলাদেশ এ রকম গুটিকয়েক দেশের অন্যতম যেখানে রাষ্ট্র শুধু সমলিঙ্গের মানুষদের মধ্যেকার যৌন সম্পর্কের অস্তিত্ব অস্বীকারই করে না, বরং একে শাস্তিযোগ্য বিষয় বলে মনে করে; এ ক্ষেত্রে আইনের প্রসঙ্গটি অস্পষ্ট।
তবে অনেকেই জানেন না যে, বাংলাদেশে সমকামী পুরষের অধিকার আন্দোলনটি গত কযেক বছরে অনেক এগিয়েছে। সামান্য হলেও উল্লেখযোগ্য কিছু বিজয় অর্জিত হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে, ২৯ এপ্রিল জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমণি বলেছেন লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের (সংক্ষেপে এলজিবিটি) অধিকার সংরক্ষণের স্বীকৃতিদানের কথা; সাংবিধানিকভাবে তাদের সমঅধিকার ও স্বাধীনতা থাকার কথাও বলেন তিনি; একে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষে্ত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন বলা যেতে পারে।
কয়েক মাস আগে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বন্ধু ওয়েলফেয়ার সোসাইটির একটি অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন যে, জাতীয় আইন কমিশনের সহায়তায় তার কমিশন একটি আইনের খসড়া তৈরির কাজ করছে যেটি ব্যক্তির যৌনজীবনের কারণে তার প্রতি বৈষম্য নিষিদ্ধ করবে। গত বছর আরও তিনজন শান্তিতে নোবেলবিজয়ীর সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি বিবৃতি দেন যেখানে সমলিঙ্গের মানুষদের আইনগত বৈধতা প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
আইনের কথা বাদ দিলেও, সমকামীদের ব্যাপারে বাস্তবে যে সব বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় তার বড় কারণ প্রেজুডিস ও এ সংক্রান্ত তথ্যের অভাব। বাংলাদেশ লিবারেল ফোরাম ও বয়েস অব বাংলাদেশের মতো কিছু সংগঠন এসব ঘাটতি পূরণে কাজ করছে এবং জনগণকে সচেতন করতে শিক্ষামূলক প্রচারাভিযান শুরু করেছে। তারা একটি ব্রোসিউর বের করেছে যেখানে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের কিছু ম্যাটেরিয়াল আছে যার কিছু কিছু, আমার মতে, এখানে পুনঃপ্রকাশ করা যেতে পারে।
যৌনপ্রবৃত্তি কী
যৌনপ্রবৃত্তি বলতে বোঝায় পুরুষ, নারী, উভয়লিঙ্গের প্রতি পারস্পরিক আবেগ, প্রণয় এবং অথবা যৌনআকর্ষণজনিত এক স্থায়ী সম্পর্কাবস্থা। এ প্রবৃত্তির একটি প্রান্তে কেউ কেউ শুধুমাত্র বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, আর অপর প্রান্তে কেউ কেউ শুধুমাত্র সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। তবে সাধারণত যৌনপ্রবৃত্তিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়: বিপরীতকামিতা (বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ), সমকামিতা (সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ) এবং উভকামিতা (উভয় লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ)।
একজন ব্যক্তি কীভাবে বুঝবে সে সমকামী বা উভকামী
যখন জানবার তখনই জানা যাবে। এটা জানতে কিছুটা সময় লাগতে পারে এবং এ জন্য তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। মূল আকর্ষণটি প্রাপ্তবয়ষ্কদের যৌনপ্রবৃত্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এবং সেটা সাধারণত শিশুকালের মধ্যবর্তী সময় থেকে শুরু করে কৈশোরের শুরুর দিক থেকেই অনুভূত হয়।
এখানে বলা যায় যে, ভিন্ন ভিন্ন সমকামী বা উভকামীদের ক্ষেত্রে তাদের যৌনপ্রবৃত্তির বিষয়ে বেশ ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। কোনো কোনো মানুষ কারও সঙ্গে প্রকৃত সম্পর্ক স্থাপনের অনেক আগে থেকেই বুঝতে পারেন যে তারা সমকামী ও উভকামী। কেউ কেউ তাদের যৌনপ্রবৃত্তি জানবার বা বুঝবার আগেই অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। আবার কোনো কোনো মানুষ নিজেদের যৌনপ্রবৃত্তি সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে সুনির্দিষ্টভাবে না জেনেই যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হয়।
এখানে একটা কথা বলতে হয় যে, সংস্কার ও বৈষম্যের ফলে অনেকের পক্ষেই নিজেদের যৌনপ্রবৃত্তি ও পরিচিতি তুলে ধরা বা প্রকাশ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তারা বলতে পারে না যে, তারা সমকামী বা উভকামী। ফলে তাদের প্রকৃত পরিচিতি প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি বিলম্বিত বা সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে।
কী কারণে একেকজন ব্যক্তির যৌনপ্রবৃত্তি একেক রকম হয়
বিজ্ঞানীরা কখনওই একমত হয়ে বলতে পারেননি যে, কী কারণে একজন ব্যক্তি বিপরীতকামী, সমকামী এবং উভকামী হয়ে থাকে বা ওইসব যৌনপ্রবৃত্তি ধারণ করে থাকে। অনেকেই মনে করেন যে, এ ক্ষেত্রে প্রকৃতি ও পরিবেশ উভয়েই একটি জটিল ভূমিকা পালন করে থাকে। মানুষ তাদের ত্বকের রং যেমন বাছাই করতে পারে না, ঠিক তেমনি যৌনপ্রবৃত্তি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা সীমিত।
সংস্কার ও বৈষম্য বিপরীতকামী, সমকামী এবং উভকামী মানুষদের ক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করে
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে সকল সমকামী বা উভকামী ব্যক্তি প্রকাশ্যে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে, তারা অনেকই সংস্কারজনিত ঘৃণা, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে। অনেকেই তাদের স্কুলে, বিশ্ববিদ্যালযে এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়। তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে তেমন সমর্থন পায় না।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের রেখে যাওয়া ১৮৬০ সালে প্রণীত দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুসারে একই লিঙ্গের দুজন মানুষের যৌনসঙ্গম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধ। এর ফলে খুব কমসংখ্যক মানুষই তাদের যৌনপ্রবৃত্তির কথা প্রকাশ করে থাকে বা করতে পারে। এর ফলে অধিকাংশ মানুষই গোপনীয়তা ও মিথ্যার জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়। এতে তাদের জীবনাচরণ নৈতিকতাবিরুদ্ধ হয় এবং গোঁড়ামির শিকার হয়।
বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে বিয়ে নারীদের জন্য নির্বাণপ্রাপ্তি বলে ধরে নেওয়া হয়। তাই নারী সমকামীদের ক্ষেত্রে সমাজে সহনশীলতার মাত্রা একেবারেই কম।
সংস্কার ও বৈষম্য একজন ব্যক্তির মানসিক অবস্থার ওপর কী প্রভাব ফেলে
সমকামভীতি বাংলাদেশে ব্যাপক আকার ধারণ করে আছে এবং তা সমকামীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও ভালো থাকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যখন তা তাদের যৌনপ্রবৃত্তি গোপন রাখতে বা তাকে অস্বীকার করতে বাধ্য করে। সংস্কার, বৈষম্য ও সহিংসতা সমকামীদের ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার ও অন্যান্যদের এক গবেষণায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশের শতকরা ৪৭ ভাগ ‘সমকামী পুরুষ’ অন্তত একবার আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছে।
সমকামী এবং উভকামী মানুষদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও সহিংসতা রোধ করতে কী করা যায়
সমকামী ও উভকামী মানুষ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজেদের যৌনপ্রবৃত্তি প্রকাশ করতে পারে। আর যে বিপরীতকামী মানুষেরা সহযোগিতা করতে চায় তারা সমকামী ও উভকামী মানুষদের জানার চেষ্টা করতে পারে এবং একই সঙ্গে এ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠনগুলোতে কাজ করতে পারে।
সমকামিতা কি মানসিক ব্যাধি, অক্ষমতা, অপ্রাকৃতিক বা অস্বাভাবিক
না। সমকামী এবং উভকামী প্রবৃত্তি কোনো ব্যাধি নয়। কয়েক দশক ধরে গবেষণা ও ক্লিনিকের অভিজ্ঞতার ফলে প্রধান প্রধান স্বাস্থ্য ও মনোস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এসব প্রবৃত্তি মানুষদের স্বাভাবিক অভিজ্ঞতারই প্রতিনিধিত্বমূলক। নারী ও পুরুষের মধ্যেকার সম্পর্কের মতোই সমলিঙ্গীয় সম্পর্কও স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯০ সালে মানসিক রোগের তালিকা থেকে সমকামীতাকে বাদ দিয়ে দিয়েছে।
চিকিৎসার মাধ্যমে যৌনপ্রবৃত্তি পরিবর্তন কি সম্ভব
সমকামী বা উভকামী হওয়াটা সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর। এটা কোনোপ্রকার অসুস্থতা নয় এবং তাই এ জন্য চিকিৎসারও দরকার নেই। আজ পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা দিযে এটা প্রমাণ করা যায়নি যে, থেরাপির সাহায্যে যৌনপ্রবৃত্তি পরিবর্তনের বিষয়টি নিরাপদ বা কার্যকর।উপরন্তু, এসব চিকিৎসার প্রয়াস সমকামীদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাগুলো আরও জোরদার করে এবং তাদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
সমকামিতা কি পাশ্চাত্যের ধারণা
না। সমকামিতা প্রত্যেকটি সমাজ ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমনকি অন্যান্য প্রাণিদের মধ্যেও এর উপস্থিতি দেখা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে যে, প্রতি ১০০ মানুষের মধ্যে ১ থেকে ১০ জন সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য, মোঘল চিত্রকর্ম ও অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে দেখা যায় যে, ইতিহাসের আদিকাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে সমকামিতা বিরাজমান ছিল।
সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমকামীদের প্রতি বৈষম্য কি সমর্থনযোগ্য
সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন বর্ণবাদ ও লিঙ্গবৈষম্য সমর্থন করা যায় না, তেমনি সমকামীদের প্রতি বৈষম্যের অবকাশ নেই। সমকামী বা উভকামী মানুষদের হয়রানি করা, তাদের অধিকার ও মর্যাদা অস্বীকার করা অথবা আইনের কাছে অভিযুক্ত করা ইত্যাদি কোনো ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন নয়, বরং এগুলো অনৈতিক ও অমানবিক।
‘Coming Out’ বা ‘আত্মপ্রকাশ’ দিয়ে কী বোঝায়, এটা গুরুত্বপূর্ণ কেন
অন্যের কাছে নিজেকে সমকামী বা উভকামী বলে পরিচয় দেওয়াকে বলা যেতে পারে Coming Out বা আত্মপ্রকাশ। অনেকের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য মানসিক পদক্ষেপ। যে সমকামী বা উভকামী নারী পুরুষরা মনে করেন যে, তাদের যৌনপ্রবৃত্তি গোপন রাখা দরকার তারা প্রায়শই মানসিক উদ্বেগে ভোগেন। অথচ যারা তাদের পরিচয় নিয়ে অনেক খোলামেলা তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা কম।
তবে আপনি তখনই আত্মপ্রকাশ করবেন যখন আপনি সেটা করতে চান এবং তার জন্য আপনি প্রস্তুত। যদিও আপনি আশা করতে পারেন যে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা আপনাকে সমর্থন দেবে, অনেক সময় হয় তার উল্টো। আপনি যদি অর্থনৈতিক দিক থেকে আপনার বাবা-মার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের কাছে আত্মপ্রকাশ করার আগে অপেক্ষা করাই ভালো। এমনটি হতে পারে যে তাদের বিদ্রুপাত্মক প্রতিক্রিয়ার কারণে আপনাকে বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে, বিপরীত লিঙ্গের কাউকে জোরপূর্বক বিয়ে করতে হচ্ছে, অথবা অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকারক মনোচিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
যখন নিজেকে প্রকাশ করবেন, তখন এমন একজনকে দিয়ে শুরু করবেন যার উপর আপনি ভরসা রাখতে পারেন। সমকামী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করাটা জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। কিন্তু তা আবার জীবনের সবচেয়ে ফলপ্রসূও হতে পারে। নিজেকে প্রকাশ করে আপনি আপনার এবং অন্যান্য সকল নারী-পুরুষ সমকামী ও উভকামীদের আত্মমর্যাদা নিশ্চিত করতে সহায়ক হচ্ছেন।
সমকামিতা কি পাপ
ইহুদিধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম এবং ইসলামধর্মে প্রথাগতভাবে সমলিঙ্গীয় যৌনআচরণকে পাপ বলে গণ্য করা হত। হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, জৈন এবং শিখধর্মে সমকামিতা সম্পর্কিত অনুশাসন যথেষ্ট পরিষ্কার নয় এবং এসব ধর্মেও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন। বর্তমানে সকল ধর্মেরই কিছু কিছু নেতারা ক্রমশ সমকামিতাকে মেনে নিচ্ছেন, এমনকি সমকামী বিয়েকেও অনুমোদন করছেন। প্রগতিশীল মুসলমান বিদ্বজনদের মধ্যে কেউ কেউ সমকামিতাকে (সমলিঙ্গীয় ভালোবাসা) নিন্দা না করে এর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন। বহু বাংলাদেশি সমকামী ও উভকামী আছেন যারা নিজেদের ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে যৌনপ্রবৃত্তির বিরোধ খুঁজে পান না।
রেইনার এবার্ট : যুক্তরাষ্ট্রের রাইস ইউনিভার্সিটির দর্শনের ছাত্র, বাংলাদেশ লিবারাল ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং অক্সফোর্ড সেন্টার ফর অ্যানিমেল ইথিক্স-এর এসোসিয়েট ফেলো।