বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা আটপৌরে এক সমাজ ব্যবস্থা। সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের আদলে গড়া এই সমাজ ব্যবস্থা, যেখানে একজন সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। নিয়মের বাইরে চলতে গেলেই হয় ধর্মের নামে, না হয় রাষ্ট্র, সরকার, সংখ্যালঘুতা এর যেকোনো একটাকে বেছে নিয়ে সেই মানুষটার উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। বিনা দোষে দোষী সাব্যস্ত করে বেঁচে থাকার অধিকারটুকু কেড়ে নেয় এই দেশের ক্ষমতাসীন ক্ষমতাবানরা। বিচার তো দূরে থাক, বিচার চাইতে যাওয়া আজকাল এক ভয়াবহ অন্যায়। কোন অপরাধ হলেই ধর্মাস্র ও তার দোহাই দিয়ে অপরাধ কে আড়াল করে অপরাধীরা বেড়িয়ে যায় আইনের শাসন থেকে। আর এই কারণেই আমাদের মত সমকামী মানুষদের বিনা দোষে আইনের শাসনে শাসিত করে আসছে বাংলাদেশ। সমকামিতা নিয়ে বাংলাদেশে আছে আইনের এক ভয়াবহ শাস্তিবিধান।  

বাংলাদেশের আইনে দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মানুষের এই সহজাত প্রবৃত্তিকে বাংলাদেশের আইন দ্বারা অপরাধ হিসেবে সূচিত করা হয়েছে ঠিক ধর্মকে নিয়ে সমালোচনা করলে যেভাবে ঐ একই দন্ডবিধির ২৯৫ কিংবা ২৯৫ক ধারাতে অপরাধ বলে সূচিত হয়।

কিন্তু এমন একটা অবস্থা ঠিক আর কতদিন? একটি মানুষের ইচ্ছা ও ভালোলাগাকে অপরাধ বানিয়ে যে অসভ্যতার চর্চা বাংলাদেশ তথা সমগ্র মুসলিম দেশে চলছে তা এক ধরনের অমার্জনীয় অপরাধ। এইতো সাম্প্রতিক সময় জাতি সংঘের এক রেজুলেশনের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ সমকামিদের মৃত্যদন্ডে দন্ডিত করবার পক্ষে ভোট দিলো। আশচ্ররয হলেও সত্য এই কাতারে আমেরিকার মত একটি সভ্য রাষ্ট্রও রয়েছে কিংবা রয়েছে ভারতের মত এত বৃহৎ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।

বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব অপরীসিম। আর এই ধর্মের প্রভাবেই এবং সুডো এক ধরনের মিথ্যে ধার্মিক আবরনেই এই সারা বাংলাদেশ ঠাসা। এখানে ধার্মিকরাই চুরি করে, মসজিদ থেকে জুতো চুরি করে, ঘুষ খায়, ধর্ষন করে, মন্দির ভাঙ্গে, প্রতিমা ভাঙ্গে আবার তারাই সম লিঙ্গের ভালোবাসাকে কোনঠাসা করে রেখেছে তাদের নিজেদের খেয়াল খুশি মত।

মুসলমানদের ধর্মীয় নেতা যখন মাত্র ৬ বছর বয়সী আয়েশাকে বিয়ে করেছিলো সেটিতে তার বিন্ধু মাত্র লজ্জা হয়নি। ৬ বছরের মত বাচ্চা একটা মেয়েকে যৌনকর্মী লাগাতে সেই মুহম্মদের সমস্যা নেই কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় সম লিঙ্গের প্রতি আরেক সম লিঙ্গের টানে বা আকর্ষনে অথচ ধর্মেই কিন্তু রয়েছে মুসলমানদের নবী লুত একজন সমকামী ছিলেন।

বাংলাদেশে প্রতিদিন মাদ্রাসায় একের পর এক ছাত্র ধর্ষিত হচ্ছে মসজিদের ইমাম দ্বারা। আমরা পত্রিকায় খবরের মাধ্যমেই এসব জানতে পারি। এইতো সেদিন পত্রিকায় জানা গেলো-

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় আরবি পড়তে গিয়ে এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় মানিক চান (২১) নামে এক ইমামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে তাকে উপজেলার পাড়াটঙ্গী কাঠগড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ইমাম মানিক চান উপজেলার পাড়াটঙ্গী কাঠগড়া মসজিদের ইমাম। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। থানা সূত্র জানায়, কাঠগড়ার বাসিন্দা ১১ বছর বয়সী শিশু কন্যা তার কাছে আরবি পড়তে যায়। এক পর্যায়ে ইমাম মানিক চান তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষিত শিশুটি বাড়িতে গিয়ে কাঁদতে থাকে এবং পরে বাবা- মাকে বিষয়টি জানায়। সোমবার রাতে শিশুটির মা বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযুক্ত ইমামকে গ্রেফতার করে। থানার সেকেন্ড অফিসার রাশেদুল হাসান জানান, শিশুটির মা বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। মুক্তাগাছা থানার ওসি আখতার মোর্শেদ জানান, শিশুটির মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে আসামি মানিক চানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অথচ এই দেশেই এইসব মোল্লারাই আমাদের মত সমকামীদের পথ রুদ্ধ করে আমাদেরকে পাপিষ্ঠ, অন্যায়কারী, ব্যাভিচারকারী বলে উল্লেখ করেছে কিন্তু রাতের বেলাতে এইসব মুখোশধারী কিংবা ইসলামের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলা ব্যাক্তিরাই বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষন করে। অবশ্য করবেই বা নে কেন? তাদের গুরু মোহাম্মদ নিজেই তো ৬ বছরের শিশুকে বিয়ে করে ধর্ষন করেছে। তাহলে তাদের শিষ্যরা কেন করবে না?

আসলে বাংলাদেশের আইনে ৩৭৭ ধারা নামক ধারা, ২৯৫ ও ২৯৫/ক ধারাগুলো এখন উঠিয়ে দেয়া সময়ের দাবী। ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করা যাবেনা, নিজের ভালোবাসার কথা বলা যাবেনা এসব নিয়ে আসলে কথা বলা উচিৎ। একজন সমকামী হিসেবে আমি আমার সঠিক হিস্যা দাবী করতেই পারি। আমার ভালো লাগেনা বিপরীত লিঙ্গের কাউকে। আমার ভালো লাগেনা মেয়েদের সাথে যৌনতা। তাহলে আমি কি করব? আজীবন যৌন জীবন ছাড়া কিংবা লুকিয়ে বা চুরি করে আমাদে দেশে থাকতে হবে? কিংবা আমার মত অন্য ব্যাক্তিদের? এভাবে বাঁচার চাইতে তো মরে যাওয়াই তাহলে ভালো। নিজের দেশ, নিজের ভূমি অথচ নিজের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারবার মত যন্ত্রণা আর কি হতে পারে?

এইসব গড়ে ওঠা বুর্জোয়া সমাজ কাঠামো ভেঙ্গে গড়ে তুলতে হবে মানুষের অধিকারের ইমারত। যেখানে ধর্মকে ধুয়ে মুছে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে আর যত সমস্ত ধর্মীয় ট্যাবু রয়েছে সেগুলোকেও। অনেকেই বলেন যে সমকামিতার যে ট্যাবু এটা শুধু ধর্মীয়-ই নয় বরং অনেক প্রগতিশীল ব্যাক্তিও এটির বিরুদ্ধে। সুতরাং ধর্মীয় গোঁড়ামি-ই যে একমাত্র কারন তা নয়।

আসলেই এই কথাটুকুও অনেক অংশে সত্য যদিও এর সংখ্যা কম। যখন ধর্মীয় এইসব আবরণ একবার মুছে দেয়া যাবে তখন তেমন হাতে গোনা মোল্লা ঘরানার প্রগতীশীলদেরও আসলে কনফ্রন্ট করা যাবে বলে আমার সুতীব্র বিশ্বাস। আর সে বিশ্বাস থেকেই আমি বলি যে আমাদের সমকামীদের অধিকার নিয়ে উচ্চকিত হওয়াটা এখন সময়ের দাবী। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে চাই আমাদের যথাপোযুক্ত রিকগ্নিশন এবং আইনী বলয়ের মাধ্যমে আমাদের ভালোবাসাকে যে প্রতিবন্ধকতাময় করা হয়েছে তার নিরসন।

আমাদের মত মানুষরা দেশে সুস্থ ভাবে জীবন যাপন পড়তে পারি না। পাইনা পরিবারের স্বীকৃতি। ঘৃণা, অপমান, লাঞ্ছনা, পুলিশের বেধম মারধোর আর আইনের অপপ্রয়োগ করেই হয় আমাদেরকে মেরে ফেলে না হয় কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে মরণের জন্য অপক্ষা করতে হয়। এই বুকফাটা কষ্ট, অসহনীয় যন্ত্রণার কথা কেউ লেখে না। কেউ জানে না আমার মতো হাজারো সমকামী মানুষের জীবনগল্প। আপনারা এই সুশীল সমাজ, প্রগতিশীল সমাজ বোঝেন না আমাদের। মুখে বলেন মানবতার কথা কিন্তু আমাদের মতো মানুষদের জন্য আপনাদের মুখ থেকে মানবতার কথা শোনা যায় না। কি এক বিস্তর ফারাক, না?