এমন এক কালো আইন সরকারের অনাচার নিয়ে কোথা বলেই একের পড় এক মানুষকে রাতের অন্ধকারে তুলে নেয়া হচ্ছে। গায়েব করে দেয়া হচ্ছে। জেলে বন্দী করে রাখা হচ্ছে। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝর উঠলে ইলতা পালটা বুঝিয়ে মিডিয়াকে থামানর চেষ্টা করছে। ভাই চাল চুরি, করাপশন, লুটপাট, করোনা নিয়ে তামাশা করা, জনগণকে সত্য খবর তুলে না ধরা সকল কিছু নিয়ে সরকারের এই বাড়াবাড়ি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে নিরাপরাধ মানুষ গায়েব করা।

 

গুম হওয়ার ৫৪ দিন পরে আজকে শফিকুল ইসলাম কাজল নামের একজন সাংবাদিককে হাতকড়া পরিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে আর ‘বাংলাদেশে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম’ দিবস পালন করা হচ্ছে! নির্মলেন্দু গুণ যখন নিজেকে আওয়ামী লীগের কবি বলে তাবেদারিতে ব্যস্ত তখন অরুন্ধতী রায় পাশের দেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দাঁড়িয়ে বলেছেন- This is the beginning of the end of this government! সাহস হচ্ছে এইটা। একটা হচ্ছে ফ্রিডম অফ স্পিচের জন্য লড়াই আর অন্যটা চাটুকারিতা।

নির্মলেন্দু গুণ কখনো শেখ হাসিনাকে গিয়ে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ সারেন্ডার করে বলতে পারবেন- আমার স্বাধীনতা পুরস্কারের চেয়ে বাক স্বাধীনতা বেশি দরকার?

আনিসুল হক ‘ইশতেহার ২০২০’ নামের একটা কবিতা লিখেছেন, সেখানে মোদী থেকে মদীনার সবাইকে বকে দিলেও কোথাও শেরে বাংলা নগর নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি! কারণ ওইখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকেন৷ এইটা হচ্ছে মেরুদণ্ডহীনতা।

অথচ তারও আগে পাশের দেশের এক তরুণ কবি আমির আজিজ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যে লিখেছেন- সাব ইয়াদ রাক্ষা যায়েগা(Everything will be remembered)। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছেন-

You write jokes in court;( তুমি যদি আদালতে তামাশা লেখো)

We will write ‘justice’ on the walls.( আমরা ন্যায়বিচার লিখবো দেয়ালে!)

এইরকম একটা লাইন কি এইমুহূর্তে নির্মলেন্দু গুণ লিখতে পারবেন?

নির্মলেন্দু গুণ এলেন গিন্সবার্গকে নিয়ে একটা বই লিখেছিলেন- গিন্সবার্গের সঙ্গে । এলেন গিন্সবার্গের পায়ের নখের সমান সাহসও কি তার হয়নি?

গিন্সবার্গতো আমেরিকায় দাঁড়িয়ে আমেরিকার সরকারের বিরুদ্ধে লিখেছিলেন- America, I will fuck you with your atom bomb! নির্মলেন্দু গুণ পারবেন এইরকম একটা লাইন এই সময়ে দাঁড়িয়ে লিখতে?

তাবেদারির দিক থেকে কেউ কম না। আল মাহমুদ এককালে ছিলেন বাকশালের সদস্য। একসময় জাতীয় পার্টির মেম্বার, জামাত বিএনপির কাছ থেকে নিয়েছিলেন আর্থিক ভাতা।

সৈয়দ শামসুল হক শেখ হাসিনা আর সাঈদ খোকনের সাথে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবিচ্ছেদ্য ছিলেন। নির্মলেন্দু গুণ, সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রহমান, আল মাহমুদ হচ্ছেন বাংলা সাহিত্যের একই গোয়ালের ভিন্ন ভিন্ন গরু। এঁরা রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের কাতারে জীবনেও দাঁড়াবেন না।

কারণ নজরুল মাথার ওপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে জেলখানায় বসে কবিতা লেখা লোক আর রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ শাসন চলাকালে নাইটহুড বর্জন করা লোক। এনাদের বুকের পাটা সেফ সাইডেড মিডিওকার হওয়া পর্যন্ত না, সরাসরি বর্তমান শাসকের বদমাইশিতে চোখ রাঙানো অবধি! যেমনটা ছিলেন জহির রায়হান, শহীদুল্লাহ্ কায়সার, মুনীর চৌধুরী।

বিশ্বসাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক হেমিংওয়ে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার আগে এবং পরেও তার অবস্থান থেকে একটুও নড়েন নাই। পুলিৎজার পেয়েছেন, নোবেল পেয়েছেন সান্তিয়াগো নামের এক বৃদ্ধ জেলের জীবন নিয়ে লেখায়।

ফিদেল কাস্ত্রোর বন্ধু হওয়ায় এবং আমেরিকান হাওয়ায় তার জীবন ভাজি ভাজি করে দিতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ভূমিকা কম ছিলোনা না। খোদ সিআইয়ের রিপোর্ট বলছে ফিদেলকে তারা ৬২৩ বারের বেশি হত্যা করার চেষ্টা করেছে। স্প্যানিশ সিভিল ওয়ার নিয়ে হেমিংওয়ের লেখা ‘ফর হুম দ্যা বেল টোলস’ বন্ধু ফিদেলের মাথার কাছে শোভা পেয়েছে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

ক্লাসিক রাইটারদের তালিকার এক নম্বর নামটা যার সেই তলস্তয় সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উক্তি হচ্ছে- রাশিয়ায় জার(শাসক) দুইজন- একজন লিও তলস্তয়, অন্যজন যিনি সিংহাসনে বসে আছেন! একজন লেখকের কি বিপুল ক্ষমতার জায়গা এবং জায়গাটা কোথায় ভেবেছেন?

জেমস জয়েসের লেখা ‘ইউলিসিস’ নিষিদ্ধ হয়েছিল, ডিএইচ লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ , মার্ক টয়েনের লেখা ‘হাকলবেরিফিন’ও। তাঁরা কেউ লেখা থামান নাই।ম্যাক্সিম গোর্কির মারা যাওয়া অতি রহস্যময়। অনেকেই সন্দেহ করে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে কম্যুনিস্টদের ডিক্টেটরশিপের বিরুদ্ধে কথা বলায়। যেমনটা হুমায়ূন আজাদের ক্ষেত্রেও। তিনি কোপ খেয়েও থেমে যান নাই!

গুন্টার গ্রাস একসময় হিটলারের নাজিদের তাবেদার ছিলেন। পরে তিনিও লজ্জিত হয়েছেন। ক্ষমা চেয়েছেন। এইটা হচ্ছে লেখকের সৎসাহস।

অথচ আমাদের নির্মলেন্দু গুণ মানুষের ভোটের অধিকারকে হাস্যরসে পরিণত করা দলটির তাবেদারি করতে গিয়ে বলেছেন- মানুষ আওয়ামিলীগের সাথে আছে!

এইটা হচ্ছে এই মুহুর্তে বাংলাদেশের একজন স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া কবিসাহিত্যিকের মেরুদণ্ড! কি চমৎকার না?

মজার ব্যাপার হচ্ছে দেশ যিনি চালাচ্ছেন সেই মিডিওকার শেখ হাসিনাও নির্মলেন্দু গুণের মতো। তিনি জামায়াতের ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করেননি, একদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে হিন্দু জনগোষ্ঠীকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করেছেন অন্যদিকে ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে ব্লগার হত্যাকে পলিটিক্যাল লিগ্যাসি দিয়েছেন।

শিবিরের রগকাটা রাজনীতি নিয়ে গান গেয়েছেন আর আরেকদিকে হেফাজতে ইসলামের কাছ থেকে ‘কাওমি জননী’ উপাধি নিয়েছেন, আবরার হত্যা আর ছাত্রের চোখ নষ্ট করে দেয়া হাতুড়ি ছাত্রলীগ বাহিনী পুষেছেন। একদিকে প্রগতির কথা বলেছেন আরেকদিকে প্রগতিশীলতার কফিন রেডি করেছেন।

তার পোষা কবিসাহিত্যিকরা তারই মতো হবে এতে আশ্চর্যের কি আছে?

 

সরকারের এই অত্যাচার বেড়েই চলেছে, যখন তখন যাকে তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। রাতের অন্ধকারে সাংবাদিক, গণমাধ্যম কর্মী, অনলাইন ব্লগারদেরকে তুলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে গুম করে দিচ্ছেন, না হলে লাশ মিলছে। দিনের পর দিন এই অন্যায় বেড়ে চলেছে আপনাদের। আপনাদের এত ভয় কেন? আমাদেরকে এত ভয় পান কেন? আমাদের লেখাকে এত ভয় কেন আপনার শেখ হাসিনা? কলমকে থামাতে চাইলেই কি থামাতে পারবেন?