বাংলাদেশে করোনা মোকাবেলার যে নমুনা দেখতেসি , এই সকল নমুনা দেখে রাগে ক্ষোভে সারাদিন বিরক্ত হয়ে থাকতে হচ্ছে। এত বিরক্ত আর এত উদাসীনতা আসলেই মানুষ হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। সরকারের উছত সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে যথেষ্ট শক্ত আচরণ করা। বাংলাদেশের মানুষ করোনা সম্পর্কে কোন ধারনা তো রাখেই না আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে কোন নুন্নতম ধারনাই নাই এদের মধ্যে। আসলে মানুষ এই করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না।

 

করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পলিসি সম্ভবত আমার মতো। পলিসির নাম- নো প্ল্যান ইজ দ্যা বেস্ট প্ল্যান! লেখক হিসেবে একটা ইন্টারেস্টিং টার্ম শিখাই আপনাদের। টার্মের নাম পলিটিক্যাল লিগ্যাসি। মানে রাজনৈতিকভাবে হালালিকরণ। মনে করেন- আপনার ভাই ঘুরতে গেছে বান্দরবান, কিন্তু আপনি জানলেন তিনি ভারতের সীমান্তে। এখন সে বান্দরবান না ভারতে আছে সেটা বুঝবেন কেমনে?

 

– অবশ্যই জিপিএস ট্রাকিং করে। এখন মনে করেন আপনার ভাই আপনার সামনে বান্দরবানের নীলগিরিতে অথচ গুগল ম্যাপ দেখাচ্ছে আপনার ভাই বিন্ধ্যপর্বতের পাদদেশে। এখন গুগল ঠিক বলছে নাকি জিপিএস? জিপিএসএ চলে গুগল ম্যাপ মতো। ম্যাপ চলে স্যাটেলাইট ইমেজের ওপর। আপনি খুঁজেই পাবেন না- গুগল ঠিক বললে জিপিএস ম্যানুপুলেট করলো কে? জিপিএস ঠিক বললে গুগল ম্যাপ ম্যানুপুলেট কে করেছে? সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হচ্ছে আপনি নিজের অবস্থান নিয়েই কনফিউজড হয়ে যাবেন!

সেরকম প্লট এক: আমি নাস্তিক। এখন আমার বিরুদ্ধে একটা ধর্ম অবমাননার মামলা দেয়া হলো। দেশের সংবিধানে লেখা থাকলো ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম। কাজেই নাস্তিক হওয়া সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ। অন্যদিকে দেশে অন্যধর্মের মানুষ থাকায় দেশের প্রধানমন্ত্রী দাবী করেন এই রাষ্ট্র সব ধর্মের মানুষের।

এখন প্রধানমন্ত্রীর কথা ভুল হইলে সংবিধান ঠিক, সংবিধান ঠিক হইলে প্রধানমন্ত্রী ভুল। এখন যদি দুইটাই ঠিক হয়? তাহলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া ঠিক নাকি মামলা হওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা ঠিক?

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এইটাই হয়ে গেছে মজার। একবার বলা হবে- কাউকে আঘাত করা যাবেনা। এরপর যাকে আঘাত করা হবে তার মারা যাওয়াকে বলা হবে নাস্তিক/শিবির( উদাহরণ আবরার কেস- সে শিবির, রাজীব হায়দার কেস- সে নাস্তিক)। এই দুইটার একটা ক্লেইম করতে পারলে শিবির মানে চেতনার শত্রুকে হত্যা জায়েজ, দ্বিতীয়ত নাস্তিক মানে ৯০% মুসলমানের দেশে ধর্ম নিয়ে ছিনিমিনি বরদাশত করা হবে না!

আপনি সংবিধান ঘাইটা দেখবেন নাগরিক হিসেবে সকলে সমান লেখা আছে আবার আপনি কতটুকু বলতে পারবেন, কি কি বললে আপনাকে আইসিটি আইনের আওতায় ফেলা যাবে সেইটাও লেখা আছে! কাজেই আপনি কখন কি উপায়ে মরবেন না জানলেও কি কি উপায়ে আপনারে মারা যায় সেইটার মাল্টিপল চয়েসের যে খেলা সেইটারই রাজনৈতিক বৈধতা অলরেডি আছেই!

আপনাকে বলা হলো তুমি ইচ্ছামতো সব করতে পারবা, এরপর বলা হইলো- ডানের রাস্তার তিন কদম, বামের রাস্তায় দুই, পেছনের রাস্তায় সাত…

প্লট দুই: লক ডাউনের বেলায়ও তাই হয়েছে। সরকারের নাই কোনো প্ল্যান। পাশের দেশগুলা লক ডাউন দিয়েছে। এখন মুখ রক্ষা করতে স্বান্তনা হিসেবে একবার লক ডাউন দিলাম ট্রেইন বাস অফ করলাম না, একবার শ্রমিক ডেকে আনলাম, একবার সাধারণ ছুটি দিলাম, একবার গার্মেন্টস খুলে দিলাম, আরেকবার রেস্ট্যুরেন্ট আর শপিংমল খুলে দিলাম। আবার লিখে দিলাম ‘সীমিত আকারে’!

ফলে আপনি যদি ক্যাক করে ওঠেন লক ডাউন দেয় নাই, সরকার বলবে দিছিলাম। যদি বলেন গার্মেন্টস খুলে দিছে, তারা বলবে ‘সীমিত আকারে’!

নো প্ল্যান ইজ দ্যা বেস্ট প্ল্যান। বাংলাদেশ সরকার আছে এই নীতিতে। অতঃপর আপনারা তাহাদের কোন অবদানকে অস্বীকার করিবেন?

 

শোনেন বাঁচাতে চান? যদি বাঁচতে চান তাহলে নিজের জন্য বাঁচেন। দোয়া করে বাইরে যাইয়েন না প্রয়োজন ছাড়া। আপনারা বুঝতে পারতেসেন না যে কত খারাপ দিন আসতেছে। মানুষ মারা যাচ্ছে আপনারা তের পাচ্ছেন না। কারণ সরকার আপনাদেরকে আসল মৃত্যুর হার আর সংক্রমণের হার বলছেন না। আপনারা যদি নিষেধ অমান্য করেন তাহলে আপনাদের জন্যই সবচেয়ে বড় বিপদ। ঘরে থাকেন। কারণ ঘরে থাকলেই বাইচা থাকবেন।