সকাল সকাল বের হবি আর সন্ধ্যার আগে আগে বাসায় ফিরবি, এই কোথাটার সাথে আমার মতো আর কয়জন নারী শুনে অভ্যস্ত?কত বাড় কত ভাবে কোথাটা শুনেছেন? সন্ধ্যার পড় বাসায় ফিরলে কত বাড় গালি শুনেছেন বাবা মা আর বড় ভাইদের কাছে?  বাবা অথবা ভাই  সে যেকোনো বয়সেরই হোক না কেন ১২/ ১ টায় বাসায় ফিরলেও কেন মাকে অথবা ঘরের কোন মেয়েকে  খাবার টেবিলে বসে থাকতে দেখেন? কিন্তু একটা মেয়ে রাত বাসায় ফিরলেই সেই মেয়ে হয়ে যায় নোংরা অসভ্য মেয়ে?

বাংলাদেশের কয়টা মেয়ে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করেছে বা করতে পারেন? একা  একা হেঁটে , জ্যোছনা রাতে পাহাড়ে গিয়ে বা কোনো নদীর ধারে!  কয়জন রাতের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে উপভোগ করতেপারেন? রাতের কনসার্ট, রাতের গান বাজনা অথবা রাতের পার্টি। না,সংখ্যাটা বেশি হবে না। কারণরাত  শুধু পুরুষের। রাত শুধু  সাফাত ,সাদমান এবং নাঈমদের। কারণ তারা পার্টি করবে, ফুর্তিকরবে। এটাই তো নিয়ম। তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রেস “পুরুষ“, তার উপরে আবার  বড় বাপের বড়পোলা।  তাদের  ছোঁবে  কার ঘাড়ে  কটা মাথা?

গত কয়েকদিন বাংলাদেশের পেপারগুলি তেমন পড়িনি।আজ হঠাৎ পেপারে  বনানীর খবরটা  পড়ে  শিউরেউঠলাম।  জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত করে নিয়ে  দুই তরুণীকে ধর্ষণ। শুধু তাই না, তার আবার ভিডিও এবংপরে হুমকি।

কুকুরের কাজ  কুকুর  করেছে।  কিন্তু আমাদের পুলিশ,আমাদের আইন প্রয়োগকারী  সংস্থাগুলি সেই কুকুরেরওঅধম! পেপার এ পড়ে  অবাক হলাম অভিযোগ  দায়ের করতে গিয়ে মেয়ে দুটিকে কত ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষা করতে সারারাত থানায় থাকতে হয়েছে।

আমি কোনো আইন বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু একজন ধর্ষিত নারী যখন মানসিক এবং শারীরিকভাবেবিধ্বস্ত, তখন তার জন্য সহজ নিয়ম নেই কেন? কেন তাকে বিচার ব্যবস্থা ,আইন প্রয়োগকারীসংস্থাগুলি নিজে থেকে এগিয়ে এসে সাহায্য করবে না? ঘটনার বর্ণনা পরে মনে হচ্ছিলো কিছুদিনআগে  দেখা হিন্দি মুভি “পিংক” এর চিত্রনাট্য পড়ছি। ওই ধর্ষিত মেয়েগুলি অমিতাভ এর মতোএকজন সাহসী এবং দক্ষ উকিল পাবে তো?

খুব জানি এই ধর্ষণের ঘটনার পরে কিছু নারী-পুরুষ বিভিন্নভাবে ধর্ষণটাকে জায়েজ করার জন্য নানা রসালো মন্তব্য করবে।

“এতো রাতে কোনো ভদ্র পরিবারের মেয়েরা পার্টি করে? এটা বাঙালি পরিবারের কালচারের সাথেযায় না“- যেন রাতের বেলা ছেলেদের ধর্ষণের খেলায় মত্ত হয় আমাদের কালচারের অংশ!

“আজকালকার মেয়েদের কাপড় দেখেছো? এসব কাপড় পরলে এমন তো হবেই। আমাদের সময় তোএমন হয়নি” – যেন তনু হিজাব পরেও রক্ষা পেয়েছিলো দানবদের হাত থেকে।

“মেয়েরা হলো মধুর মতো। খোলা রাখলে পিঁপড়া তো আসবেই“।– যেন পিঁপড়ারাদের কোনো অপরাধ নেই। মধু নিজেই তার মিষ্টতার জন্য দায়ী।

“ওই মেয়েগুলি তো আসলে নটি, বেশ্যা, ওদের তো প্রতি রাতের কাজ এটা“।- বাংলাদেশে “বেশ্যা“রকোনো পুরুষবাচক শব্দ নেই। তাই খুব সহজেই একটা মেয়েকে অপমান করতে এই উপাধি দিয়ে দেয়াযায়। যেন ধর্ষক হওয়ার চেয়ে বেশ্যা হওয়া অনেক নিচু ব্যাপার —ধিক!

এখন আবার পেপারে দেখলাম এক ধর্ষকের বাবা আবার ছেলের দোষ ঢাকতে ছেলের প্রাক্তন বৌকেদায়ী করছে। তার বক্তব্য – ছেলের বৌ মেয়ে দুটিকে পাঠিয়ে দিয়েছে আর তার সোনার অবুঝ ছেলেফেঁসে গিয়েছে।

আর কতদিন এসব রাবিশ শুনে যাবো আমরা? ক্ষমতাশালী ধনীর ছেলেরা আর কতদিন বিচারেরবাইরে থাকবে? আর কতদিন এইসব “বড় বাপের বড় পোলারা” তাদের  বড়ো  বড়ো কাজ করে পারপেয়ে যাবে? বাংলাদেশের মেয়েরা আপনারা “আপন জুয়েলার্স”বর্জন করুন। নিজে কিনে অথবাকাওকে উপহার দিয়ে ধর্ষক ছেলে আর তার বাবার উকিলের ফী জোগাবেন না।

আমি চাই  ভারতের নির্ভয়ার ধর্ষকদের মতো এইসব “বড়ো  বাপের বড়  পোলারা ” সর্বোচ্চ  শাস্তিপাক।  সমাজের পরিবারের মানুষেরা মানসিকভাবে ধর্ষণকে বর্জন এবং ধিক্কার দিতে শিখুক। ধর্ষণহোক ধর্ষকের লজ্জা, কোনো ভাবেই ধর্ষিতার নয়।  রাতের অধিকার নারীর হোক, শুধু পুরুষের নয়।রাতের বেলা বাড়ির বাইরেটা নিরাপদ হোক নারীর জন্য।  কিন্তু ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলেতা কখনোই হবে না।

আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে অধিকার দিলে আর নিজেদের জীবনকে অনন্যার হাতে তুলে না দিয়ে অর্থাৎ পুরুষের হাতে তুলে না দিয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে লালন পালন করতে পারি। প্রয়োজন একটু সাহসের। ভয় পেলে ভয়টাই আমাদেরকে খেয়ে ফেলে। ভয় যখন মণের শক্তির উপর বেশই করে যেকে বসে তখন আমরাদের সামনে এগোনর গল্প থেকে যায়। আমরা জেকত শক্তিশালী আমরা টা নিজেরাই জানি না কারণ জানার ছাশ্তহাই করি না। মেয়েদের জীবন রান্নাঘরের কুঠুরির মধ্যে না। জীবনটা অনেক বড় সত্যই অনেক বড়।