
মানুষ বলতে আপনি কী বোঝেন? শুধু দুটি হাত-পা, চোখ-কান আর একটি লিঙ্গ? তাহলে কি একজন মানুষকে মানুষ হিসেবে গন্য করার জন্য তার নির্দিষ্ট লিঙ্গ, নির্দিষ্ট আকর্ষণ থাকা বাধ্যতামূলক?
এই প্রশ্নগুলো শুনতে সোজা, কিন্তু সমাজের মুখোমুখি হলে এদের উত্তর অনেকেই দিতে পারে না। কারণ আমাদের সমাজ এখনো “কে কাকে ভালোবাসবে”—সেই প্রশ্নে লিপ্ত, সেই বিচারেই মুখর।
যদি সত্যিই মানুষ হন, তবে আপনাকে বুঝতেই হবে—প্রত্যেক মানুষ স্বাধীন। তার নিজের শরীর, নিজের মন, নিজের ভালোলাগা নিয়ে সে যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটিই তার অধিকার। কারো প্রতি যৌন আকর্ষণ কোনো অপরাধ নয়। বরং কাউকে তার ভালোবাসার জন্য তাচ্ছিল্য করা, হেনস্থা করা, সমাজ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া—এই কাজগুলোই হলো প্রকৃত অপরাধ।
আপনি কী করে অন্য কারো যৌন পরিচয়কে বিচার করবেন? আপনি কি তার দায়িত্বপ্রাপ্ত? না, আপনি শুধু সমাজের সেই দলটির একজন, যারা নিজেরা যৌন ও মানসিকভাবে দুঃখী, তাই অন্যের জীবনে নাক গলিয়ে আত্মতৃপ্তি খোঁজেন।
আমরা শিখেছি, অপরাধ হলো এমন কিছু যা কারো ক্ষতি করে। তাহলে বলুন তো—একজন সমকামী বা উভকামী কার ক্ষতি করছেন? কাকে ঠকাচ্ছেন? সমাজের ঠিক কী ক্ষতি হচ্ছে তাদের ভালোবাসায়?
আজ যারা তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করে, ঘৃণা ছড়ায়, তারা আসল অপরাধী। তারা সমাজের মানবিক মেরুদণ্ডকে ভেঙে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ দিনশেষে, তারাও কারো সন্তান, ভাই, বন্ধু—তাদের জীবনেও ভালোবাসা আছে। তাহলে অন্যের ভালোবাসা দেখলেই তা হজম হয় না কেন?
লালনের সেই লাইন মনে আছে?
“সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে?”
তিনি তখন বলেছিলেন, “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”।
আজ সবাই ধর্ম দেখাতে চায়, কিন্তু মানবধর্ম কোথায়? যখনই বিষয়টা সমকামীতা বা যৌন পরিচয়ের আসে, তখন সবাই নীরব, অথবা রূঢ়। অথচ মানবধর্ম মানে, মানবিক আচরণ—যেখানে কেউ কাঁদলে তাকে পাশে দাঁড়ানো হয়, ভালোবাসলে সমর্থন করা হয়।
জীবনে কেউ আপনাকে সাহায্য করতে না পারুক, অন্তত তার পথের কাঁটা হবেন না। কারো লিঙ্গ, কারো ভালোলাগা বা চাহিদা যদি আপনাকে আঘাত না করে, তাহলে আপনি কেন আঘাত করতে যাবেন?
আপনার যদি সন্তান থাকে, তাকে সময় দিন। ওর বিজ্ঞানের বই খুলে দেখুন। সত্য জানতে বিজ্ঞানকে ভয় পাবেন না। সমাজ বদলে দিতেই পারেন, যদি আপনি মানুষকে মানুষ ভাবতে শিখেন।
নিজে মানুষ হোন, অন্যকে মানুষ ভাবুন। তাহলেই এই সমাজ, এই পৃথিবী একটু ভালো হবে।