মোল্লাদের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে হিন্দুবিদ্বেষ। এই বিদ্বেষটি খুব কৌশলে পাকিরা বাঙালি মুসলমানের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। হিন্দু মানেই অচ্ছুৎ, নোংরা, কাফির। তাদের এই বিদ্বেষ বাংলা ভাষার প্রতিও প্রতিফলিত হয়। বাংলা ভাষার নাম কারো থাকলেই তাকে হিন্দু ধরে নেয় মোল্লারা। নাম, টাইটেল সবকিছুর ক্ষেত্রে তাদের একই নিয়ম।
আর্চার কে ব্লাডের বইতে আছে কীভাবে বাঙালি মুসলমান পাকিদের হিন্দু বিদ্বেষের বীজকে বয়ে বেড়াচ্ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। তারা এমনভাবে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিল যাতে মনে হতে পারে যে বাঙালি মাত্রই হিন্দু। এর ফলে পাকিস্তান সার্ভিস কমিশনে কাজ করা বাঙালি মুসলমানও ভাবত বাঙালি মানেই হিন্দু।
আর সেই হিন্দুবিদ্বেষকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল পাকি আর্মি। তারা বলত হিন্দু সেনারা মুসলিম সেনাদের তুলনায় শারীরিকভাবে দূর্বল কারণ তারা গরু খায় না। এবং আধ্যাত্মিকভাবে দূর্বল কারণ তাদের ঈশ্বরের সংখ্যা বেশি।
পাকিস্তানি প্রশাসনও এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, নাৎসিরা যেভাবে ইহুদিদের ভাবত পশু মতই পাকিরাও বাঙালিদের ভাবত পশু, আর তারা সে অনুযায়ী কাজও করত। তবে তাই বলে তারা বাঙালি নারীদের ছাড়ে নি।
রবার্ট পেইনের বইতে উল্লেখ আছে কীভাবে তারা জাতীয়তাবাদী বাঙালি এবং হিন্দুদের নিধনের তালিকা বানিয়েছিল।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জিয়া এবং এরশাদ মিলে রাষ্ট্রের মুসলমানি করিয়েছিল যেন সংখ্যাগুরুর দল তাদের পক্ষে থাকে। তবে এরা এমনই হিপোক্রেট ছিল যা বলার বাইরে। যে জিয়া সংবিধানে বিসমিল্লাহ ঢুকিয়েছে সেই দেশে জুয়া এবং মদের লাইসেন্সের ব্যবস্থা করেছে। একদিকে যেমন সে মুসলমানের মন রেখেছে, অন্যদিকে সে ধনাঢ্য শ্রেনির বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে।
এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বানানোর সাথে সাথে পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু করেছে। এরশাদই আবার দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ করেছে। এই প্রত্যেকটা পদক্ষেপ ছিল রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য, অর্থনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পতিতালয় ছিল দৌলতদিয়া ঘাটে। এখানে মোটামুটি সারাদেশের ট্রাক চালকেরা যেত। পদ্মা পাড় করার সময় দীর্ঘক্ষণ ফেরির জন্য অপেক্ষা করা লাগতো, এই সময়টাতে তারা নারীসঙ্গ লাভ করার জন্য এই পতিতালয়ে যেত। অর্থাৎ, এখানে সুস্থ যৌনতা চর্চার কোনো সুযোগ ছিল না। আর এখানে যৌনতাকে ব্যবহার করা হয়েছিল দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে, পন্য সরবরাহকে চালু রাখতে।
বর্তমানেও যে আওয়ামীলীগ এরশাদ বা জিয়া বা খালেদা জিয়ার চেয়ে ভাল কিছু করছে, তা মোটেও না। আওয়ামীলীগ এখন ডানপন্থীদের চেয়ে বেশি ডানপন্থী হবার চেষ্টা করছে। একটা সেক্যুলার দেশের প্রধানমন্ত্রী রাতে তাহাজ্জুদ পরে, এইটা কোনো প্রচার করার ব্যাপার না! ধার্মিকতা বিজ্ঞাপনের জিনিস না।
প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই নিজের মুসলমানিত্ব জাহির করেন। ব্লগার হত্যার পর তিনি বলেন রাসুলকে নিয়ে কটুক্তি করলে তার খারাপ লাগে, মুক্তচিন্তা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ইত্যাদি। একই নিশ্বাসে তিনি বলেন ইসলাম শান্তির ধর্ম- এই দ্বিচারিতা, এই প্রতারণা আপনি ডানপন্থীদের মাঝে পাবেন না। তারা সরাসরি বলবে রাসুলের ব্যাপারে খারাপ (বা সত্য) বললে কল্লা ফেলে দেয়া হবে। তারা মাঝের পথ খুজবে না। আওয়ামীলীগ একই সাথে সেক্যুলার এবং মুসলমান হওয়ার চেষ্টায় নিজের রাজনৈতিক আদর্শ হারিয়ে ফেলেছে। সে দিন আর বেশি দূরে না যখন এক আওয়ামীলীগের মানুষ নির্বাচনে সুবিধার জন্য অন্যকে নাস্তিক, শাতিমে রাসুল, ট্যাগ দেবে- ক্বিতাল করতে বলবে।