সৌদি আরবের নিজস্ব কোনো আইন ব্যবস্থা নেই। তারা আইনের জন্য শরীয়তকে অনুসরণ করে। দেড় হাজার বছর আগের শরীয়ত যে যুগোপযোগী হবে না সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। একবিংশ শতকে এসেও যে কেউ ১৫০০ বছর আগের আইন ধরে বসে থাকবে এটা অভাবনীয়। ডানপন্থী খ্রিষ্টানরাও তাদের পৌরাণিক কাহিনীর অসাড়তা দেখে আধুনিক আইনে বেঁচে থাকা শিখেছে।
সৌদির আইনে সমকামীতার শাস্তি বিভিন্ন রকম। বাক্যটা ঠিক করে আবার লিখি, শরীয়াহ আইনে সমকামীতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, সৌদির আইনে অপরাধীর জাতীয়তা কি সেটার উপর নির্ভর করে তার শাস্তি অর্থদণ্ড, জেল, বেত্রাঘাত বা মৃত্যু হতে পারে।
কিছু উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন আসলে এখানে আমি কী বুঝাতে চাচ্ছি-
- ২০০০ সালে সৌদির আদালত ৯জন সৌদি নাগরিককে জেলে পাঠায় সমকামীতার অপরাধে। একই সময়ে সৌদিতে বসবাসরত ইয়েমেনের ৩ নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় একই অপরাধে।
- ২০০১ সালে লেখক এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ আল সুহাইমিকে কারাদণ্ড দেয়া হয়, ২০০৬ সালে তাকে মুক্তি দিয়ে আবার তার অধ্যাপনায় নিয়োগ করা হয়।
- ২০০৫ সালে ৯২জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল দেয়া হয়। একই বছরে ৫ জনকে গে বিউটি কনটেস্টের জন্য গ্রেফতার করা হয়, যাদের কোনো খোঁজ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
- ২০১৯ সালে সৌদি আরব ৩৭জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ইরানী গোয়েন্দা হিসাবে কাজ করার অভিযোগে, এদের মধ্যে ৫জনকে সমকামীতার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল।
- সৌদি কূটনীতিক আলী আহমেদ আসারী যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রার্থণা করেন কারণ সৌদি জেনে গিয়েছিল তার সমকামীতার কথা।
এখান থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে সৌদি আরবের আইন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম হয়, আর পরিষ্কারভাবে রাজনৈতিক এবং বর্ণবাদী।
এছাড়াও সৌদিতে যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকারের কোনো আন্দোলন নিষিদ্ধ। সমকামীদের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ। সমকামীদের বিরুদ্ধে অবিচার রোধে সৌদিতে কোনো আইন নেই। সাধারণ নাগরিকদের জন্যেও সাম্প্রতিককালের আগের যৌনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো সচেতনতামূলক ব্যবস্থা ছিল না।
সৌদি নাগরিকদের বিলাসিতার কথা সবারই জানা। ২০১০ সালে সৌদির এক প্রিন্স তার চাকরকে হত্যা করার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে গ্রেফতার হয়েছিল। জানা যায় সে চাকরের সাথে তার সমকামী যৌন সম্পর্ক ছিল। এছাড়াও সে বিভিন্ন সময়ে অর্থের বিনিময়ে অন্য পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক করতো। হত্যার দায়ে তার ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। এদের বিলাসিতাপূর্ণ জীবন যাপন এদের বিভিন্ন যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। কিন্তু যৌনস্বাস্থ্য সচেতনা না থাকায় তারা এসব ব্যাপারে অজ্ঞ।
এত কথা বলার পয়েন্ট কী?
পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সৌদির অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভালো। অত্যন্ত প্রগতিশীল, মানবিক রাষ্ট্ররাও সৌদির সাথে অস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরণের চুক্তি স্বাক্ষর করে রেখেছে। কিন্তু সৌদি না প্রগতিশীল, না মানবিক। সৌদির সমকামবিদ্বেষী এবং অমানবিক ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। পশ্চিমা দেশগুলো সৌদির সাথে চুক্তির শর্ত হিসেবে মানবাধিকারকে রাখতে পারে। সমকামীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তারা সৌদিকে অর্থনৈতিক চাপ দিতে পারে। ঐসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রাইড মার্চে যান, LGBT অধিকার নিয়ে সোচ্চার নিজের দেশে। তারা চাইলে সৌদির LGBT সম্প্রদায়ের লোকেদেরও সাহায্য করতে পারেন। তাদের নির্লিপ্ততা সৌদির যৌন সংখ্যালঘুদের এবং রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য প্রতিপক্ষের প্রতি সমকামীতার অভিযোগ এনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আস্কারা দেয়। They are complicit in the deaths.