লেখক: অরণ্য রাত্রি 

ঘটনা- ১ ( জুলাই ১৮, ২০১৯)

এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় দিনাজপুরের  চিবিরবন্দরে এক শিক্ষার্থী (১৭) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। (সুত্র- bangladeshtoday.net)

ঘটনা-২ ( ২৮ অগাস্ট, ২০১৯)

কুষ্টিয়ায় শ্লীলতাহানি ও ইভটিজিং এর শিকার হয়ে নবম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।  (সূত্র – দৈনিক যুগান্তর)

গোপনীয়তার জন্য আত্মহত্যাকারীর নাম প্রকাশ করা হল না।

আত্মহত্যা শব্দ টা শুনলেই যা প্রথমে মনে আসে তা হল অসম্ভব ক্ষোভ , অভিমান , বিষণ্ণতা , ব্যর্থতা এবং মৃত্যুর ছায়া। উপরের ঘটনা গুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এরকম ঘটনা প্রায় ঘটে এবং অনেক সময় আমরা সংবাদপ্ত্র বা মিডিয়ার মাধ্যমে তা জানতে পারি। ঘটনা গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ২ টা ঘটনাই কোন তরুন বা তরুণীর সাথে ঘটেছে। বর্তমানে আত্মহত্যা একটা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে এবং তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু হচ্ছে এই তরুন তরুণীরাই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে প্রতিবছর ৮০০০০০ মানুষ মৃত্যু বরণ করে শুধু মাত্র আত্মহত্যার মাধ্যমে এবং প্রতি ৪০ সেকেন্ডে  একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করছে। শুধু তাই নয় আত্মহত্যা  ১৫-২৯ বছর বয়সের মানুষ দের জন্য মৃত্যুর দ্বিতীয় অন্যতম প্রধান কারণ। 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোরট  অনুযায়ী ২০১১ সালে বাংলাদেশে ১৯৬৯৭ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে। 

পুলিশ হেডকোয়ার্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী ১১০৯৫ জন মানুষ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আত্মহত্যা করছে। 

আবার ২০১০ সালে শহীদ সহরাওয়ারদি মেডিকেল কলেজ  হাসপাতাল , ঢাকা  থেকে  প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা যায় দেশের ৬৫০০০০০ মানুষ আত্মহত্যা প্রবণ। প্রতিবছরে আত্মহত্যার হার ১২৮.২ জন প্রতি ১০০০০০মানুষে।

শতকরা প্রায় ৬১ ভাগ আত্মহত্যার কেস  বাংলাদেশে ৩০ বছর বয়সের নিচের মানুষদের  হয়।  

সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশেও আত্মহত্যার হার কিন্তু খুব একটা কম নয়। এবং তরুণ তরুণী  দের মাঝে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি

আত্মহত্যার রিস্ক ফ্যাক্টর 

  • পূর্বে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা 
  • আত্মহত্যার পারিবারিক ইতিহাস থাকা
  • মাদক সেবন করা
  • মানসিক অসুখ ( বিষণ্ণতা ,বাইপোলার মুড  ডিসঅর্ডার , বরডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার )
  • ব্যর্থ হওয়া  যেমন পরীক্ষায় খারাপ করা, আর্থিক সমস্যা  ,রিলেশন ভেঙ্গে যাওয়া, বুলিং এর শিকার হওয়া
  • শারীরিক এবং মানসিক ভাবে আঘাত পাওয়া  এবং অবমাননার শিকার হওয়া। 
  • নিজের ক্ষতি করার অথবা  আত্মহত্যা করার উপকরণ  সহজলভ্য হওয়া যেমন  ড্রাগস , ধারালো ছুড়ি , পিস্তল ইত্যাদি। 
  • দীর্ঘমেয়াদী  শারীরিক অসুখ
  • নিজের সেক্সুয়াল  অরিয়েন্টেশন নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া
  • সামাজিক অবলম্বনের অভাব
  • দুর্বল মানায় নেয়ার দক্ষতা 
  • ইম্পালসিভিটি 
  • পরিবারে ভাঙ্গন

ঘটনা-৩ (১০ ই জুলাই, ২০১৯)

ভারতের চেন্নাইয়ে একজন তরুণ (১৯) আত্মহত্যা করেছেন । সোমবার (৮ জুলাই) রাত থেকে ছেলেটির কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এ বিষয়ে তার বাবা-মা পুলিশে অভিযোগ করেন। পুলিশ অনুসন্ধানে নামার আগে ছেলেটির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখে। কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একবার হিন্দি ও একবার ইংরেজিতে দুটি পোস্ট লিখেছিলেন ভিক্টিম। ফেসবুকে হিন্দিতে সে লিখেছিলেন, আমি একজন ছেলে। সবাই সেটা জানে। কিন্তু আমার হাঁটা-চলা, চিন্তা-ভাবনা, কথা বলা সব মেয়েদের মতো। এটা এমন জিনিস যা ভারতের মানুষ বুঝবে না।পরে ইংরেজিতে তিনি আবার লিখেন, যেসব দেশ সমকামী ও রুপান্তরকামীদের সম্মান দেয়, সেসব দেশের প্রতি আমি গর্বিত। ভারতেও যেসব মানুষ আমাদের সমর্থন করেন, তাদের প্রতি আমি গর্বিত। আমি সমকামী, এটা আমার অপরাধ নয়। এটা ভগবানের ভুল। আমি আমার জীবনকে ঘৃণা করি। (সূত্রঃ bdmorning.com)

ঘটনা-৪ (১৮ মে, ২০২০) 

কেরালা তে ২১ বছর বয়স্ক একজন উভকামী মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে একটি ফেসবুক ভিডিও তে দাবী করে তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ৩ মাস আগে কিছু ডি- এডিকশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় তার সমকামী অরিয়েন্টেশন পরিবর্তন করার জন্য।সে আরও বলে কিভাবে তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই সেন্টার গুলো তে হাই ডোজের ওষুধ দেয়া হত।এই ভিডিও টি পোস্ট করা হয় মার্চ মাসে। তার এক বন্ধুর কাছ থেকে জানা যায় তার পরিবার তাকে ডি-সেন্টারে নিয়ে যাবার আগে থেকেই সে বিষণ্ণতার চিকিৎসা নিত।, সে কিছু দিন আগে তার পরিবারের কাছে উভকামী হিসেবে কাম আউট করে। (সূত্রঃ Hindustan time)

উপরের ২ টি ঘটনাই ভারতের। বাংলাদেশের নয়। কারণ বাংলাদেশে এমন ঘটনার সংবাদ অনেক খুঁজেও আমি পায় নি। ২ টি ঘটনাই তরুন সমকামী মানুষের আত্মহত্যা নিয়ে। তাহলে কি বাংলাদেশের সমকামী তরুন তরুণী দের আত্মহত্যার হার কম? নাকি তাদের সংখ্যাই কম? 

আসলে ব্যাপার টা তা নয়। বাংলাদেশের সমকামী মানুষ দের বেশিরভাগই পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে খুব কম সহযোগিতাই পায়। বাংলাদেশের পেনাল কোডের ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে  যে  সমলিঙ্গের মধ্যে যৌন  মিথস্ক্রিয়া একটি শাস্তি যোগ্য অপরাধ। ফলে খুব কম মানুষই তাদের যৌন প্রবণতা  বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলে এবং গোপনীয়তার জীবন যাপনে বাধ্য হন। আর তাদের প্রতি স্থানিক তীব্র আতংক আর ঘৃণার কারণে তাদের সুখ সমৃদ্ধির উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে অনেকেই কিন্তু বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। কিন্তু এসব খবর সংবাদ প্ত্রে বা মিডিয়া তে আসছে না কারণ আত্মহত্যাউ কিন্তু বাংলাদেশে একটি আইনত অপরাধ, তার উপর সমকামিতা। এবং এ ২ টা ব্যাপারই আবার বাংলাদেশে ধর্মীয় এবং সামাজিক ভাবে নিষিদ্ধ। ফলে একটি পরিবারের সামাজিক ভাবে নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়া এবং পুলিশের হেনস্তার শিকার হবার জন্য এই ধরনের সংবাদই যথেষ্ট। তাই বেশিরভাগ পরিবার চেষ্টা করে এই ঘটনা গুলো যতদুর সম্ভব গোপন রাখার। তাই সংবাদপত্রে সাধারণত এই ঘটনা গুলো আসে না। তাই সমকামী রা বাংলাদেশে অদৃশ্য সংখ্যালঘু হিসেবে রয়েছে। ভারতে সম্প্রতি ৩৭৭ ধারা রদ করা হয়েছে। তাই আজকাল সংবাদ গুলো তাদের মিডিয়া তে আসা শুরু করেছে। যেহেতু বাংলাদেশের সাথে সংস্কৃতি এবং সামাজিক দিক থেকে ভারতের  সাথে কিছু মিল রয়েছে তাই উপরের ২ টা ঘটনা দিলাম। ২ টা ঘটনাই তরুণ তরুণী দের নিয়ে। 

আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের একটি জরিপ থেকে জানা যায় সমকামী এবং উভকামী তরুণ তরুণী দের বিষমকামী তরুণ  তরুণী দের চেয়ে আত্মহত্যা করার হার প্রায় তিন গুন বেশি এবং আত্মহত্যা করার প্রচেষ্টা (যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছে)  প্রায় ৫ গুন বেশি। 

বিশেষ ভাবে সমকামী বা উভকামী তরুণ এবং তরুণী দের আত্মহত্যার কারণ

  • পরিবার এবং বন্ধুদের দ্বারা প্রত্যাখান 

কেউ কেউ পরিবারের কাছে কাম আউট করার পর পরিবার তা মেনে নেয় না । তার উপর চলে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন। বন্ধু দের কাছে কাম আউট করলে অনেক বন্ধু আর বন্ধুত্ব বজায় রাখে না।ফলে সে হয়ে পড়ে পারিবারিক এবং সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন। ফলে তার উপর একটি মানসিক চাপ তৈরি হয়। এছাড়া সামিজিক ভাবে তার চরিত্রে কালিমা লেপন করা হতে পারে এবং অনেক সময় পরিবার বা সমাজ থেকে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর ফলে আরও মানসিক চাপ তৈরি হয়। এসকল মানসিক যন্ত্রণা প্রথমে তাকে আত্মহত্যার কথা  ভাবায়। ধীরে ধীরে তার আত্মসম্মানবোধ কমে যেতে পারে।নিজেকে মূল্যহীন ভাবে। বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয় । এমন কি মাদক দ্রব্য নেয়া শুরু করে। এইভাবে সে  আরও বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে।

  • মানিয়ে নেয়ার দক্ষতার অভাব

সাধারণত সামকামী বা উভকামী তরুণ তরুণী  সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন নিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে পরিবার বা বন্ধু দের কাছে থেকে সহযোগিতার আশা করে না। কারণ বেশির ভাগ সমকামী বা উভকামী তরুণ তরুণী রা তাদের সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন তাদের পরিবার বা বন্ধু দের কাছে গোপন রাখে। তাই তারা এসকল ক্ষেত্রে অনেক টা নিজেকে অন্যদের ( বিষমকামী )  থেকে বিচ্ছিন্ন অনুভব করে। কিন্তু তারা মানসিকভাবে এত টা পরিপক্ক হয় না যে তারা এই পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে এবং মানসিক ভাবে সহনশীল হতে পারে। ফলে তারা এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে মানসিক ভাবে আরও বেশি ভেঙ্গে পড়ে। একসময় তারা এই চাপ সহ্য করতে না পেরে নিজের ক্ষতি করে বা  স্ব ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়। এক কথায় আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে উঠে। 

  • বুলিং

সকল তরুণ তরুণী তাদের নিজেদের কে তাদের অন্য সহপাঠী দের মাঝে মানানসই হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশনে ভিন্নতা থাকলে অনেকেই  কিছু টা ভিন্ন আচরণ করে বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজে ভিন্নতা থাকে। এর ফলে তারা তাদের সহপাঠী দের দ্বারা প্রত্যাক্ষিত হয় এবং হয়রানির শিকার হয়।নানা ভাবে তারা বুলিং এর শিকার হয়। যেমন মৌখিক , শারীরিক এবং সাইবার বুলিং। গে লেসবিয়ান স্ট্রেট এডুকেশন নেটওয়ার্ক এর  ২০০৯ সালেরএকটি জরিপে দেখা যায় ৯০ ভাগ সমকামী, ট্রান্সজেন্ডার, উভকামী ছাত্র ছাত্রী কোন না কোন সময়  মৌখিক বুলিং এর শিকার হয়েছে  এবং ৪০ ভাগ শারীরিক ভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে।এই সকল ছাত্র ছাত্রী দের অনেকেই  বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়, কারো আত্মসম্মানবোধ কমে যায়,কারো একাডেমিক রেজাল্ট খারাপ হয় এবং কেই মাদক নেয়। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার যেটা হল কেউ কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এবং দুঃখজনক হল কেউ কেউ সফল হয়। 

  • সুইসাইড কন্টাজিয়ন

গবেষণায় দেখা যায় মিডিয়া কভারেজ এবং আত্মহত্যার একটি যোগ সূত্র আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিডিয়া কভারেজ আত্মহত্যায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে দায়ী থাকে।এই ঘটনাকেই সুইসাইড কন্টাজিওন বলে।  সুইসাইড কন্টাজিয়ন তাদের মাঝেই হয় যারা তীব্র বিষণ্ণতায় আক্রান্ত এবং আত্মহত্যার কথা ভাবছে। আবার গবেষণায় এটাউ দেখা যায় মিডিয়া যদি দায়িত্বপূর্ণ উপায়ে আত্মহত্যার সংবাদ প্রচার করে তবে সুইসাইড কন্টাজিওন কমে।এই ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার টা খুব জরুরি। যেমন সমকামী , উভকামী এবং ট্রান্সজেন্ডার মানুষ দের ক্ষেত্রে তাদের আত্মহত্যার সংবাদ এমন ভাবে পরিবেশন করা উচিৎ যাতে তাদের কে সামাজিক ভাবে হেয় করা না হয় বরং আত্মহত্যার সঠিক  কারণ স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা হয়। 

আত্মহত্যার সতর্কীকরণ লক্ষণ 

১। আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলা।  যেমন “আমি নিজেকে শেষ করে ফেলবো “ , “আমি আর বাঁচতে চাই না “ , “আমার জন্ম না হলেই ভাল হত” ইত্যাদি 

২। আত্মহত্যা করার উপকরণ সংগ্রহ করা । যেমন ঘুমের ওষুধ যোগাড় করা। 

৩। সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া এবং একা একা থাকতে চাওয়া।

৪। অতিরিক্ত বিষণ্ণতা, প্রায়ই মেজাজ বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তন , অনাকাঙ্ক্ষিত রাগ। নিজের যত্ন না নেয়া। আগে যেসকল কাজ কর্মে উৎসাহ এবং আনন্দ পেত তা না করা। 

৫। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা। “এই পরিস্থিতি কখনো ভাল হবে না”।“কোন কিছুই পরিবর্তন হবে না” এমন ভাবা। 

৬।ঝুঁকি পূর্ণ বা নিজের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা । যেমন বেপরোয়া গাড়ি চালানো , অনিরাপদ সেক্স, অতিরিক্ত মদ্যপান করা ,মাদক নেয়া। এসকল কাজ ইঙ্গিত করে যে ব্যাক্তির নিজের কাছে তার জীবনের কোন মূল্য নেই।

৭। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জীবনের কোন সঙ্কট অথবা মানসিক আঘাত আত্মহত্যার করার প্রচেষ্টা কে ট্রিগার করে। যেমন প্রিয় কোন মানুষের মৃত্যু, ডিভোর্স , ভালবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া , প্রচন্ড আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়া , চাকুরী চলে যাওয়া ইত্যাদি। 

৮। ঘুমের সমস্যা হওয়া ।ইনসমনিয়া , খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া অথবা অতিরিক্ত ঘুম হওয়া 

৯। ক্ষুধা কমে যাওয়া , ওজন কমে যাওয়া  অথবা অতিরিক্ত  খাওয়া । 

১০। কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা। 

১১। আত্মসম্মানবোধ কমে যাওয়া। নিজেকে দোষী ভাবা , ঘৃণা করা এবং মূল্যহীন মনে করা । “আমাকে  ছাড়া সবাই বরং ভাল থাকবে” এই ধরণের চিন্তা করা।  কখনো কখনো নিজেকে অন্যদের বোঝা মনে করা। 

এখানে বলে রাখা ভাল আত্মহত্যার সতর্কীকরণ লক্ষণ গুলো সুস্পষ্ট নয়।এবং এই লক্ষণ গুলো ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হয়।আবার কেউ তাদের আত্মহত্যা করার উদেশ্য স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করে । কেউ তাদের আত্মহত্যার চিন্তা  গোপন রাখে। আবার কোন একটি রিস্ক ফ্যাক্টরের কারণে একজন আত্মহত্যা করতে পারে আবার একই রিস্ক ফ্যাক্টরের কারণে আরেকজন আত্মহত্যা নাউ করতে পারে। তাই আগে থেকে কে আত্মহত্যা করবে কি করবে না তা অনুমান করা খুব কঠিন । তারপরও উপরের লক্ষণ গুলো থেকে কিছু ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। 

আত্মহত্যা প্রতিরোধ 

আত্মহত্যা প্রতিরোধের সুনির্দিষ্ট কোন দিক নির্দেশনা আছে বলে আমার জানা নেই। এখানে কিছু ধাপের কথা উল্লেখ করলাম যার থেকে ভাল ফল পাওয়া যাবে আশা করা যায়।

১। জিজ্ঞেস করো

যদি কারো মাঝে আত্মহত্যার সতর্ক লক্ষণ গুলো দেখা যায় তখন আমাদের মনে হতে পারে এই ব্যাপারে কোন কথা বলা কি ঠিক হবে? কারণ আমার ধারণা তো ভুল হতে পারে। আবার সে যদি রেগে যায়? এই ধরণের পরিস্থিতিতে ভয় পাওয়া বা বিব্রত বোধ করা স্বাভাবিক। কিন্তু যে আত্মহত্যার কথা বলছে কিংবা আত্মহত্যার সতর্ক লক্ষণ গুলো দেখাচ্ছে তার জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য দরকার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত ভাল। 

পরিবারের কেউ বা বন্ধুদের কারো সাথে তার আত্মহত্যার অনুভূতি বা চিন্তা নিয়ে কথা বলা খুব কঠিন ব্যাপার। যদি তার আত্মহত্যার চিন্তা সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া যায় তাহলে তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা সবচেয়ে ভাল উপায়। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে হবে কেয়ার নিয়ে, ভালবাসা দিয়ে। কারো প্রতি কেয়ার নেয়া  বা ভালবাসা দেয়ার মাধ্যমে কাউকে আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলা হয় না। বরং আত্মহত্যা প্রবণ মানুষটি কে তার অনুভূতি প্রকাশের একটি সুযোগ দেয়া হয় যাতে সে তার একাকীত্ব , নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তি পায়। 

২। নিরাপদে রাখো 

বাসায় বা যেখানে আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষ টি রয়েছে সেখানে যে সকল প্রাণঘাতী উপকরণ রয়েছে সেগুলো সরিয়ে ফেলা যেমন ধারালো ছুঁড়ি , কীটনাশক বা অন্য কোন ধরণের বিষ , পিস্তল ইত্যাদি। যদি সম্ভব হয় মানুষটির পরিকল্পনা জানা এবং সেই মত উপকরণ গুলো সরিয়ে ফেলা। 

৩। পাশে থাকো 

শারীরিক ভাবে আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষটির পাশে থাকলে সবচেয়ে ভাল হয়। যদি তা সম্ভব না হয় ফোনে যোগাযোগ করা বা তাও সম্ভব না হলে অন্য কোন উপায় তাকে সাপোর্ট দেয়া । মানুষ টা কি ভাবছে বা অনুভব করছে তা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং জানা। কথা বলে জানার চেষ্টা করা যে এই সময় কে বা কারা তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারবে। একটা ব্যাপার লক্ষণীয় মানুষটির কাছে এমন কোন অঙ্গীকার করা ঠিক হবে না যেটা পরবর্তী তে পালন করা সম্ভব না। 

৪। সংযুক্ত কর

ন্যাশনাল সুইসাইড প্রিভেনশন লাইফলাইন থাকলে তার সাথে সংযুক্ত করা। দুঃখজনক হল পৃথিবীর সব দেশে এমন সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে অন্য কোন বিশ্বস্ত সুইসাইড প্রিভেনশন লাইফলাইন থাকলে তাতে সংযুক্ত করা। অথবা কোন বিশ্বস্ত বন্ধু বা পারিবারিক সদস্য যারা তাকে সাহায্য করতে পারবে এমন কারো সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া। আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষ টি কোন সাইক্রিয়াট্রিস্ট এর তত্ত্বাবধায়নে আছে কিনা কিংবা আগে চিকিৎসা নিত কিনা তা জানা । এবং সেই সাইক্রিয়াট্রিস্ট এর সাথে সংযুক্ত করা বা মানুষটি যদি সেই সাইক্রিয়াট্রিস্ট সাথে যোগাযোগ করতে না চায় তাহলে অন্য কোন সাইক্রিয়াট্রিস্টের এর সাথে এপয়েন্টমেন্ট নেয়া। 

৫। সংযুক্ত থাকো 

ক্রাইসিস মোমেন্ট গুলো কেটে যাওয়ার পরও তার সাথে সংযুক্ত থাকা । সে কেমন আছে তা জানা। সম্ভব হলে শারীরিক ভাবে দেখা করা। নাহলে ফোনে কথা বলা। মেসেজ , ইমেইল পাঠানো। 

শুধু ব্যক্তিগত পর্যায় নয় সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ভাবে আত্নহত্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। আত্মহত্যা কোন সমাধান হতে পারে না। বরং আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য ব্যক্তি পর্যায় , সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়  মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি হতে পারে এর সমাধান। যাতে আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষ কে দ্রুত সনাক্ত করা যায় এবং তাকে সাহায্য করা যায়। যাতে সে তার এই সঙ্কটময় মুহূর্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারে । 

Reference (তথ্য সূত্র )

1.World Health Organization. (2014). Preventing suicide: A global imperative. World Health Organization.

2. Wikipedia 

3.CDC. (2016). Sexual Identity, Sex of Sexual Contacts, and Health-Risk Behaviors Among Students in Grades 9-12: Youth Risk Behavior Surveillance. Atlanta, GA: U.S. Department of Health and Human Services.

4.”Bangladesh Suicide”. worldlifeexpectancy.com. Retrieved 15 November 2012.

5. “Suicide on the rise in Bangladesh”. Dhaka Tribune. 2018-03-27. Retrieved 2019-02-01.

6.“Suicide: A tacit outbreak of social syndrome”. The Daily Observer”.2019-12-13. 

7. Kosciw JG, Greytak EA, Bartkiewicz MJ, Boesen MJ, Palmer NA. The 2011 National School Climate Survey: The Experiences of Lesbian, Gay, Bisexual and Transgender Youth in Our Nation’s Schools. New York, NY: Gay, Lesbian & Straight Education Network; 2012.

8.Anna S. Mueller, Wesley James, Seth Abrutyn, Martin L. Levin, “Suicide Ideation and Bullying Among US Adolescents: Examining the Intersections of Sexual Orientation, Gender, and Race/Ethnicity”, American Journal of Public Health 105, no. 5 (May 1, 2015): pp. 980-985.