সম্প্রতি, বাংলাদেশে উভকামী ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ছে। এটি বলা ভুল হবে যে আগে এমন ছিল না। প্রধানত, সামাজিক অবজ্ঞার কারণে অনেকেই নিজেদের প্রকাশ করতে সাহস পান না। কিন্তু, যদি সমাজ এই বিষয়ে জানতে পারে, তবে জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। প্রতিটি ধর্মে উভকামিতাকে পাপের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। উভকামিতা মানে একজন ব্যক্তির পুরুষ ও নারী উভয়ের প্রতি রোমান্টিক বা যৌন আকর্ষণ অনুভব করা।
১৮৫৯ সালে, রবার্ট বেন্টলি টড প্রথম উভলিঙ্গতার ধারণা প্রবর্তন করেন, যা আজকের দিনে আন্তঃলিঙ্গ হিসাবে পরিচিত। বিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা, যেমন হেনরি হ্যাভলক এলিস ও রিচার্ড ভন ক্রাফ্ট-ইবিং, যৌনতা এবং লিঙ্গের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের মতে, বিবর্তনের প্রারম্ভিক স্তরে লিঙ্গ পৃথক করা যায় না।
বর্তমানে, উভকামিতা ও সমকামিতা সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে এবং অনেক উন্নত দেশে উভকামি ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের বিস্তারের মাধ্যমে এই সফলতা অর্জিত হয়েছে। 1993 সালে ডিন হ্যামারের ‘সমকামী জিন’ গবেষণা এবং পরবর্তীতে জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে সমকামিতা সংক্রান্ত জিনের সম্ভাব্য লিঙ্ক সম্পর্কে আরও গবেষণা হয়েছে।
উভকামিতা প্রায়শই সমকামিতার সাথে তুলনা করা হয়। যৌন প্রবণতা সর্বদা স্পষ্ট নয় এবং অনেক যৌনতা রয়েছে যা ব্যক্তি নিজেই সনাক্ত করতে পারে। শিশুরা গর্ভাবস্থায় যে হরমোনের সংস্পর্শে থাকে তা তাদের যৌন অভিমুখতাকে প্রভাবিত করতে পারে। উভকামিতা কোন মানসিক প্রতিবন্ধকতা নয়, বরং এটি মানব জিনের একটি প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য। এখন সময় এসেছে ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করার।
সচেতনতা এবং মৌলিক মানবাধিকারের দিক থেকে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। সমাজে যেখানে একসময় যৌন বৈচিত্র্য নিয়ে অগ্রাহ্য ও বৈষম্যের প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল, সেখানে এখন উভকামীতা সহ বিভিন্ন যৌন অভিমুখের প্রতি বোধগম্যতা ও সহানুভূতির চর্চা বাড়ছে।
যদিও এই প্রগতির পথ কঠিন এবং প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ, বিশেষ করে ঐতিহ্যগত ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে, তবুও শিক্ষা ও মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সামাজিক মনোভাবে পরিবর্তন আসছে। ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যম এই পরিবর্তনের একটি বড় চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করছে, যা ব্যক্তিদের তাদের গল্প শেয়ার করতে এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করছে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং অধ্যয়ন যৌন অভিমুখ সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান প্রদান করেছে, এটি কেবল সামাজিক বা পরিবেশগত প্রভাবের ফল নয় বরং জেনেটিক এবং নিউরোবায়োলজিক্যাল কারণও এর মধ্যে রয়েছে। এই জ্ঞান উভকামী এবং অন্যান্য যৌন অভিমুখের ব্যক্তিদের স্বীকৃতি ও সমর্থনের প্রতি আরও সহায়ক।
বাংলাদেশে যৌন বৈচিত্র্য নিয়ে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে এবং উভকামী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করতে আরও প্রয়াস প্রয়োজন। শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম, মিডিয়া ক্যাম্পেইন, এবং সামাজিক মাধ্যম এই প্রয়াসের অগ্রগতিতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করতে পারে। এর মাধ্যমে না কেবল উভকামী ব্যক্তিদের জন্য একটি সমর্থনমূলক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব, বরং সামগ্রিকভাবে সমাজের মানবিক মূল্যবোধের উন্নতিও সম্ভব।
সময়ের সাথে সাথে, আশা করা যায় যে বাংলাদেশে উভকামিতার প্রতি আরও উদার ও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠবে, যা প্রত্যেকের জন্য একটি অধিক সমতামূলক এবং সহনশীল সমাজ নির্মাণে অবদান রাখবে।