ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর জোবাইদা নাসরিন, যিনি বাংলাদেশের যৌনতা বিষয়ে বহু গবেষণা করেছেন, বলেন যে বাংলাদেশে পুরুষদের যৌনতা প্রকাশের বিষয়টি সমাজে যেমন সহজে মেনে নেওয়া হয়, নারীদের ক্ষেত্রে সেই গ্রহণযোগ্যতা অনুপস্থিত। ফলে, নারীদের জন্য এই ট্যাবু আরও গভীরভাবে প্রযোজ্য হয়। তিনি আরো যোগ করেন, অনেক বাংলাদেশী নারী যারা সমকামী, তাদেরকে পারিবারিক চাপের মুখে বিয়ে করতে হচ্ছে এবং তারা একটি আরোপিত জীবন যাপন করছেন। নাসরিনের মতে, যদিও পুরুষদের যৌনতার প্রকাশ কিছুটা মেনে নেওয়া হয়, নারীদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অনেক জটিল। যখন নারীরা আমাদের প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং দ্বৈত চিন্তার বাইরে গিয়ে সমকামিতার কথা বলে, তখন সমাজ সেই যৌনতার প্রকাশকে আর মেনে নিতে চায় না।
মিজ নাসরিনের মতে, নিজের যৌনতা গোপন রাখার প্রয়াস এবং আরোপিত জীবনযাপন করতে করতে ব্যক্তি মানসিক দুর্বলতার শিকার হতে পারে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে, এমন অনেক নারীকে ‘পাগল‘ বলা হয়, যারা আসলে সমকামী হতে পারে কিন্তু সামাজিক চাপে তারা নিজেদের আসল পরিচয় গোপন করে। গ্রামাঞ্চলে এমন পরিস্থিতি প্রায়ই ঘটে, যেখানে নারীদের মানসিক অবস্থা তাদের আসল সমস্যার প্রতিফলন নয়, বরং সমাজের চাপ ও বাধ্যবাধকতার প্রকাশ। নাসরিন উল্লেখ করেছেন যে সমকামী নারীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল এবং গৃহিণী হিসেবে সব ক্ষেত্রে বিদ্যমান, কিন্তু তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা নেই কারণ সমকামিতা বাংলাদেশে আইনগত ও ধর্মীয় কারণে অগ্রহণযোগ্য এবং অনেকে নিরাপত্তার জন্য তা গোপন রাখে।
যেহেতু বাংলাদেশে সমকামিতা সামাজিক ও আইনগত ভাবে অনুমোদিত নয়, এর ফলে সমকামী নারীরা বিভিন্ন রকমের মানসিক ও সামাজিক চাপের মুখে পড়েন। তারা সমাজে এবং পরিবারে অবহেলিত এবং প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হন। এর ফলে অনেকে মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, এবং এমনকি আত্মঘৃণার মতো সমস্যাগুলো অনুভব করেন।
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে যেখানে সাংস্কৃতিক রীতি-নীতি আরো কঠোর, সেখানে সমকামী নারীরা আরো বেশি অসহায় অবস্থায় থাকে। তাদের অভিব্যক্তি এবং আবেগের প্রকাশ অত্যন্ত সীমিত, এবং অনেক সময় তাদেরকে তাদের প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখার জন্য ভান করতে হয়। এর ফলে, তারা নিজেদের প্রকৃত পরিচয়ের সঙ্গে যে দ্বন্দ্বে জড়িত হয় তা মানসিক দুর্বলতার এক বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই পরিস্থিতিতে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা বাড়ানো এবং সমকামী ব্যক্তিদের স্বীকৃতি এবং সম্মান প্রদানের প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া, এবং সামাজিক সংগঠনগুলো এই পরিবর্তনের প্রচারে এগিয়ে আসতে পারে। সমকামী ব্যক্তিদের অধিকার এবং মানবিক মর্যাদার প্রতি সমাজের সদস্যদের আরো উদার এবং সহনশীল হওয়া উচিত। এই ধরনের পরিবর্তন ধীরে ধীরে সমকামী ব্যক্তিদের জন্য একটি সহনশীল এবং স্বাগতযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সার্বিক কল্যাণের জন্য সহায়ক হবে।