
নারীর চলার পথ বা তাদের অগ্রযাত্রার পথ কখনোই মসৃণ ছিলোনা। অনেক বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে, অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা সহ্য করে, কঠিন যুদ্ধে করে,ভয়কে জয় করে, সব প্রতিবন্ধকতাকে না বলে তাদের চলতে হয়েছে।
কেউ তার আসার বা এগোনোর পথ তৈরি করে দেয়নি। এ পর্যায়ে আসতে এবং টিকে থাকতে নারীকে সাহস দেখাতে হয়েছে। অনেক প্রতিবন্ধকতা জয় করেই এগিয়ে চলেছে এ দেশের নারীরা। তবে এই অবস্থা শুরু থেকেই ছিলো না। আজকে আকাশে বিমান ওড়াচ্ছে নারীরা, হিমালয়ের চূড়ায় উঠছে এমনকি বন্দুক কাধে যুদ্ধেও যাচ্ছে। নারীদের নিয়োগ বাড়ছে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে। ছোট-বড় ব্যবসায় নামছে তারা।
পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ২০০৫ সালে সরকারি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ২৯ শতাংশ। ২০১০ সালে এ হার বেড়ে হয়েছে ৩৬ শতাংশ। এ হার কিছুটা বাড়লেও তা তেমন আশানুরূপ নয়। তবে গত ১৫ বছরে উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ দ্বিগুণ বেড়েছে এ দেশে।
এছাড়া পর্যাপ্ত না হলেও নারী উন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বেড়েছে। নির্যাতিত নারীদের সেবা দিতে পুলিশ আলাদা বিভাগ খুলেছে। যেখানে সব কর্মকর্তা নারী। ২৮টি মন্ত্রণালয়ে নারীদের জন্য আলাদা বাজেট দেওয়া হচ্ছে। নারী উন্নয়নে সরকারি সহায়তা বাড়লেও তা আশানুরূপ নয় তবে নারীর এগিয়ে নেওয়ার কথা বিবেচনায় রেখেই এখন উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয় এটা অবশ্যই আশা জাগানোর মতো কথা।
নারীর উপার্জনে পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে ঠিকই কিন্তু এখনো নারীরা বৈষম্যের শিকার। কর্মক্ষেত্রে মজুরি কম পাচ্ছে নারী। নানা সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এখনো এ দেশে সংসার এবং পরিবারের জন্য নারীর কাজ শ্রম হিসেবে বিবেচিত হয় না। কর্মক্ষেত্রে একই কাজ করেও একজন পুরুষের তুলনায় অনেক সময় কম মজুরি পায় নারী।
তবে এখন নানা রকম ব্যবসায় নারীর অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। স্বাবলম্বী হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়, সংসারে সচ্ছলতার জন্য নিজের জমানো অল্প কিছু অর্থ নিয়েই গ্রামের অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত একজন নারী ব্যবসা শুরু করার সাহস দেখাচ্ছে। যা আগে কল্পনাও করা যেত না।
এসএমই থেকে বড় মাপের সব ব্যবসায় নারীরা সফলতা পাচ্ছে। তবে এখনো নারীদের প্রতিষ্ঠিত হতে পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে হচ্ছে। এখনো অনেক পরিবার মনে করে, মেয়েরা উপার্জন করলে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যাবে। স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের প্রতি মনোযোগী থাকবে না। এসব ধারণা-বৈষম্য দূর হলে মেয়েরা আরো এগিয়ে যাবে।
দুই দশক আগেও নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার দৌড়ে পরিবারের সহায়তা পাওয়া দুষ্কর ছিল। এখন অনেক পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। পরিবারের সদস্যরাও নারীকে আত্মনির্ভশীল হতে সাহস জুগিয়ে থাকে। একজন নারী স্বাবলম্বী হলে সংসারে সচ্ছলতা আসে। তবে নানা ক্ষেত্রে নারীর উন্নয়ন হলেও ক্ষমতায়নে এখনো তারা অনেকটা পিছিয়ে। যদিও সমাজের বিধি-নিষেধ সত্ত্বেও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।
শহরের তুলনায় গ্রামের নারীরা সুবিধাবঞ্চিত বেশি। শিক্ষায়ও গ্রামের নারীরা পিছিয়ে। তবে এগিয়ে যাওয়ার যুদ্ধে সেখানকার নারীদের জীবনযাত্রায় এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। নারীরা এখন পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে আসছে। বিদেশে গিয়ে কাজ করার প্রতি নারীদের আগ্রহ বেড়েছে। সরকার এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।