বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের প্রভাব এত অধিক হারে বাড়ছে যাকে জীহাদের উর্বর ভূমি বলা যাই । গত দুই দশকে আমাদের দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলিম অনুসারীর সংখ্যা বেড়েছে এবং জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ এখন মুসলিম। ইসলাম ধর্মের অসহনশীল ও চরমপন্থী রুপের বহিঃপ্রকাশও ঊর্ধ্বগতিতে বাড়ছে। বাংলাদেশী ইসলামপন্থী ও মৌলবাদী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের তথাকথিত ইসলামিক স্টেট এবং আল-কায়েদার আন্তর্জাতিক অফশুট, পাশাপাশি আনসার-আল-ইসলাম, হিজব উত-তাহরির, ইসলামী ছাত্র  শিবীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হেফাজত-ই-ইসলাম, হরকত-উল-জিহাদ আল-ইসলামী এবং জামাত-উল-মুজাহিদিনের মত ঘরোয়া সংগঠন। বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে ইসলামের এই উত্থানকে মূলত বিরোধী দলের (এবং ক্ষমতাসীন দলের) ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য দায়ী করা যেতে পারে।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দিক নির্দেশ হিনভাবে একপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং অন্নপথে ইসলামি শক্তিগুলোর সাথে আঁতাতে আছে।’সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এবং জঙ্গী ইসলামী বাদের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পিছনে (যা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের সীমাবদ্ধতাকে সমর্থন করতে ব্যবহার করা হয়েছে), আওয়ামী লীগ তার ধর্মনিরপেক্ষতা কে নিচে  টেনে এনেছে উপরন্তু আরো ‘ইসলাম বান্ধব’ হয়ে উঠেছে। একটি ইসলামী পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলনের সাথে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে আওয়ামী লীগ ইসলামী আবেগকে অপমান করে সমর্থন হারানোর ভয় পায়।

বাংলাদেশের প্রথম এলজিবিটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক জুলহাজ মান্নান এবং এলজিবিটি কর্মী মাহবুব রাব্বি তন্ময়কে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অফিসে তাদেরকে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ২০১৬ সনের এপ্রিল মাসে। আজ বাংলাদেশের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্যরা নিয়মিত বিভিন্ন উগ্র ইসলামপন্থী দলের কাছ থেকে টেলিফোন, টেক্সট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হুমকি বার্তা পান। আমাদের জীবনবেবস্থা আবদ্ধ হয়ে গেছে অনিরদিশ্তিকতার চাদরে। সর্বদা প্রান নাশের ভয় আমাদের এলজিবিটি সম্প্রদাইকে দমিয়ে রাখার অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করা হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়া এবং সারা বিশ্বের আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে বাংলাদেশে সমকামীদের সম্পর্কে অসহিষ্ণুতার কারণে ইসলামপন্থী চরমপন্থীদের বিকাশ লক্ষণীয়ভাবে বাড়ছে । বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় সমকামী যৌন কার্যকলাপকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, , যার মাধ্যমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। দণ্ডবিধির এই ধারাটি ১৯ শতকে তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা চালু করা হয় এবং অন্যান্য অনেক ব্রিটিশ উপনিবেশিত কলোনিতে সডমি আইনের মডেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চরমপন্থী ইসলামি দলগুলো সফলভাবে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এবং এই ভয়ের কারণে বেশীরভাগ বাংলাদেশী প্রকাশ্যে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করে না। বাশের কেলা, সালাউদ্দিনের ঘোড়া এবং হিজব উত-তাহরিরের মত চরমপন্থী দলগুলো অনলাইনে এলজিবিটি সম্প্রদায় সম্পর্কে ব্যাপকভাবে হিংস্র এবং নেতিবাচক  পোস্ট  করে চলেছে।

বাংলাদেশে সাধারন জনগনের মাঝে সমকামীদের ব্যাপারে একটি সাধারন হিনমন্ন ভাব রয়েছে। কলঙ্ক শব্দটি যৌক্তিক হবে এই আলোচনাই। আমরা সমকামিতাকে সিমপ্লি কলঙ্ক হিশেবে দেখে থাকি। তার আধিক্কতা বৃদ্ধি পাই তখন যখন জনসম্মুখে তা পাই প্রকাশ। বাংলাদেশে সমকামীদের ক্ষেত্রে  বৈষম্য মূলক আইন প্রযোজ্য হয় সর্বক্ষেত্রে। প্রান নাশের হুমকি এবং খুনের মুখে সুরক্ষা প্রদানের পরিবর্তে পুলিশ আমাদেরকে ‘কম উত্তেজক’ হওয়ার আহ্বান করে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের মতো অশঙ্খ বাঙালি শমকামি পর্দার আড়ালে নিজেদের প্রকৃত সত্ত্বাকে আড়াল করছে। কিন্তু এখনও আশা নিয়ে স্বপ্ন বাধি যে একটা সমই আসবে যখন নিজ মাত্রিভুমিতে সমকামিতাকে প্রকাশের মাদ্ধমে মাথা উচু করে চলা যাবে।