সমকামীতা কোনো নতুন সামাজিক ব্যাপার না। পূর্বে বলেছি যেমন, বিভিন্ন ধর্মের পৌরাণিক কাহিনীতে সমকামীতার উল্লেখ আছে, নেতিবাচকভাবে হলেও আছে। তো, তার মানে দাঁড়ায় সমাজ যেহেতু সমকামীতাকে স্বীকৃতি দেয় না, সেহেতু অনেক সমকামীকেই সামাজিক চাপে বিষমকামী বিয়ের সম্পর্কে জড়াতে হয়।
এদের সংখ্যা আসলে কত? বাংলাদেশে যেহেতু যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনাকে প্রোৎসাহিত করা হয় না সেহেতু এই সংখ্যাটা জানাটা অনেকাংশেই অসম্ভব। তবে এমন লোক আছেন সেটা নিশ্চিত। নিজের স্বতন্ত্রতাকে ত্যাগ করে সামাজিক চাপের কাছে হার মানা লোকের সংখ্যা কম হওয়ার কথা না।
তাদের জীবন কেমন? তারা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন এমন একজন মানুষের সাথে যার প্রতি তাদের কোনো আকর্ষণ নাই। বিয়ে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে হয়, কিন্তু এসব বিয়ে আসলে হাজার বছরের পুরোনো নিয়ম আর সমাজের সাথে সমঝোতা।
এসব বিয়েতে মূল ভিক্টিম সমকামী ব্যক্তিটি হলেও তার সাথে যার বিয়ে হয় তার প্রতিও অনেক অবিচার করা হয়। এই বিয়ের উপর ভিত্তি করে যে সামাজিক বন্ধন, যে পরিবার গড়ে ওঠে, তারাও বঞ্চিত হয়। মানে এই একটা সম্পর্ক থেকে লাভ কারোই হয় না, ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক লোকই।
সেলেব্রিটি রূপান্তরকামী ব্রুস জেনার (বর্তমানে কেইটলিন জেনার) জন্মেছিলেন পুরুষ হয়ে, জীবনের সিংহভাগ সময় কেটে যাবার পর তিনি নিজের সত্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি নারীতে রূপান্তরিত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। কিন্তু তার সাবেক জীবনের সাথে জড়িত, তার নিজের ঔরসজাত সন্তানদের কী? তাদের তো কোনো দোষ ছিল না এখানে? তার সাবেক স্ত্রীর কী দোষ ছিল? বা কেইটলিনেরই বা দোষ কী? তিনি ছিলেন একজন সফল দৌড়বিদ। তিনি যখন তার ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন তখন নিজেকে সমকামী দাবি করা, খোদ আমেরিকাতেও ছিল, বোকামীর কাজ। তিনিও তার পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিলেন বিভিন্ন চাপের মুখে।
কিন্তু নিজের সাথে তো আর বেশিদিন মিথ্যা বলা যায় না! তিনিও পারেন নি! অর্ধশত বছর ধরে যাপিত মিথ্যাও মিথ্যাই। কেইটলিন জেনার এখন নারী।
সমাজের চাপে পরে তিনি তার নিজস্বতাকে বিসর্জন দেয়ার সাথে সাথে আরো কতজন মানুষের সাথে প্রতারণা করলেন? এই দোষটা কার? জেনারের? ঐ পরিবারের? না সমাজের যে মৃত ব্যক্তিদের করে যাওয়া কাজকে ঐতিহ্য বলে মানুষকে বাধ্য করে ঐরূপ চলতে? কার দোষ?
বাংলাদেশে লিঙ্গপরিবর্তনের হরমোন থেরাপি খুব একটা প্রচলিত না। যদি এর প্রচলন হয় আর সমাজের অবস্থা যদি বদলে তাহলে আমরাও হয়ত দেখবো রূপান্তরকামীদের আসল সংখ্যাটা, সমকামীদের আসল সংখ্যাটা।