বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের দেশ না। ধর্মীয় বা অধার্মিক, লিঙ্গীয় বা নির্লিঙ্গ, বা যৌন সংখ্যালঘু কারো জন্যেই এই দেশ বাসযোগ্য না। ধর্মীয় এবং লিঙ্গীয় সংখ্যাগুরুদের ভয়ে, আর সামাজিক চাপে সমকামীদের জীবন নির্বাসিতদের মত। যেন আমরা অচ্ছুৎজাতি।

বাংলাদেশে আসলে সমকামীদের সংখ্যা কত? ২০০২ সালের এক গবেষণার মতে পৃথিবীতে প্রতি ১০০ জন মানুষের ১ জন সমকামী। সে হিসাবে বাংলাদেশে প্রায় ২০ লক্ষ সমকামী থাকার কথা। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কোনো রিপ্রেজেন্টেশন নাই। তাদের অস্তিত্ব সমাজ এবং রাষ্ট্র স্বীকার করতে চায় না।যৌন সংখ্যালঘুত্বের সমস্যা খোদ যৌন সংখ্যালঘুদের মধ্যেই আছে। তারা নিজেদের প্রকাশ করতে চায় না। সমাজের চাপ, ট্যাবু, সমালোচনা, বিদ্রুপ, গালি, নির্যাতনের ভয়ে তারা কেউই প্রকাশ্যে আসতে চায় না।সামনে আসলেও তাদের হত্যা করে ফেলার হুমকি থাকে। জুলহাজ মান্নানকে যেভাবে ঘরে এসে কুপিয়ে গেছে, সেভাবে মেরে ফেললেও রাষ্ট্র care করে না। আমাদের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু অবিশ্বাসের যে পরিমন্ডল তৈরি হয়েছে সেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের বিশ্বাস করতে পারছি না।

ব্রিটিশদের বানানো আইনে সমকামীতাকে প্রকৃতিবিরুদ্ধ বলা হয়েছে। সমকামীতা বাংলাদেশে অপরাধ! সমকামীতা বাংলাদেশে প্রকৃতিবিরুদ্ধ! উপমহাদেশের শুধু এক ভারত ছাড়া বাকিরা সবাই সমকামীতাকে অপরাধ হিসাবেই রেখেছে।

 

আইনে বলা আছে-

 

Unnatural offences

 

  1. Whoever voluntarily has carnal intercourse against the order of nature with any man, woman or animal, shall be punished with 2[imprisonment] for life, or with imprisonment of either description for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to fine.

 

Explanation. Penetration is sufficient to constitute the carnal intercourse necessary to the offence described in this section.

কিন্তু ৩৭৭ ধারা “against the order of nature” এর কোনো ব্যাখ্যা দেয় না। একই সময়ে সংবিধানের সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে,জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচচ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সাথে অসমঞ্জস্য হয়, তাহা হলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হবে৷ অর্থাৎ সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদ বা উদ্দেশ্যের সাথে দেশের প্রচলিত কোন আইনের বিরোধ দেখা দিলে সে আইন কার্যকারিতা হারাবে অর্থাৎ সে আইন বাতিল বলে গন্য হবে।

এছাড়াও সংবিধানের ৭(খ) অনুচ্ছেদ মোতাবেক সংবিধানের প্রস্তাবনা,প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ,দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সংযোজন,পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন,রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধন করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ ইচ্ছে করলেই কোন আইনের মাধ্যমে বা অন্য কোন ভাবে কোন নাগরিকের জন্য আইনের শাসন বা মৌলিক মানবাধিকার ভোগ করা থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।

এর সাথে সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদে অনুযায়ী রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে বাধ্য এবং ২৬(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সাথে অসমঞ্জস সকল প্রচলিত আইন আপনা আপনি বাতিল বলে গন্য হবে। একই সাথে,২৬(২)অনুচ্ছেদ মোতাবেক রাষ্ট্র সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সাথে অসমঞ্জস কোন আইন প্রণয়ন করবে না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তাছাড়া,২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী বলে ঘোষনা করেছে।

পেনাল কোডের ৩৭৭ ধারা একই সাথে মানবাধিকার এবং সংবিধান বিরুদ্ধ। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রগতিশীলরা চিন্তিত নন, রাজনীতিবিদেরা চিন্তিত না, মানবাধিকার কর্মীরা চিন্তিত না।