বাংলাদেশে যৌন শিক্ষা জাতীয় পাঠ্যক্রমের কোথাও নাই। আগে স্বাস্থ্য শিক্ষা বলে একটি কোর্স প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে তা আছে কি না আমার জানা নেই। বর্তমানে “ভালো থাকা” নামে একটি কোর্স চালু হয়েছে যা, আমার মনে হয়, স্বাস্থ্য শিক্ষারই একটি রূপান্তর।

 

যৌন শিক্ষা আসলে কী?

 

যৌন শিক্ষা শুনলেই আমাদের মনে যৌনতার চিত্র ভেসে আসে। যেভাবে ইউরোপীয়রা বৎসায়নের কামসূত্রকে সেক্সের বই ভেবেছিল অনেকটা সেভাবেই। অথচ কামসূত্র, যৌন শিক্ষা যৌনতার অন্যান্য দিক নিয়ে কাজ করে, মূলত তার ফোকাস সেদিকেই বেশি যৌনতার তুলনায়। তবুও, উপমহাদেশীয় লোকেদের কাছে অপরিচিত কারো কাছ থেকে যৌনতার শিক্ষা নেয়া ব্যাপারটা অগ্রহণযোগ্য। অভিভাবকরা তো এসব বিষয়ে কথা বলতেই নারাজ।

 

যৌন শিক্ষার পাঠ্য বিষয় হচ্ছে মানুষের যৌনতা- তার আবেগ এবং দায়িত্ব, মানুষের শরীরের গঠন, সম্মতির বয়স এবং ধরন, নিরাপদ যৌনতা, প্রজনন স্বাস্থ্য, প্রজননের সম্পর্কিত অধিকার, জন্মনিয়ন্ত্রণ, লিঙ্গভিত্তিক যৌনতা এবং যৌন সংখ্যালঘুত্ব।

 

এসব বিষয়ে সবাই জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে জানতে পারে। অনেকে বন্ধুবান্ধব থেকে জানে, অনেকে জানে মুরুব্বিদের কাছ থেকে, যারা নিজেরাও জেনেছে এভাবেই। কিন্তু একজন বিশেষজ্ঞের প্রণিত ব্যবস্থায় যদি একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে তাদের এসব জানানো হতো তবে ব্যাপারটা আলাদা হতো।

 

যৌন শিক্ষায় লাভ কী?

 

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে যৌন শিক্ষার পাশাপাশি জন্মনিরোধকের সহজলভ্যতা অনিরাপদ যৌন আচরণ কমায়, teenage pregnancy কমায়। অপর দিকে abstinence only বা যৌনতা পরিহার করা যৌন শিক্ষা teenage pregnancy কমাতে কোনো ভূমিকা রাখে না, বরং বাড়ায়।

 

যৌন শিক্ষার অন্তর্ভূক্তির ফলে লিঙ্গবৈষম্যে কমে বলে UNFPA’র এক রিপোর্টে দেখা গেছে। এসব Teenager সাম্যবাদী মনোভাব রাখে, এবং এসব সমাজে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার পরিমাণ কম।

 

যৌন শিক্ষা শুধু যৌনতার উপর কাজ করে না। এসব কিশোর-কিশোরীদের জীবন যাপনের উপায় শেখায়। অন্যকে সম্মান করতে শেখায়।

 

বাংলাদেশে যৌন শিক্ষা চালু করায় বাধা কোথায়?

 

বাংলাদেশের রক্ষণশীল সমাজের একটা অংশ এই যৌন শিক্ষার ব্যাপারে বিরূপ ধারণা পোষন করেন। এর সাথে অস্বস্তির ব্যাপারও জড়িত আছে যে কেউ একজন তাদের সন্তানদের এসব ব্যাপারে জানাচ্ছেন। তবে এতে করে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয় সেগুলা তাদের জানা আছে। কিশোর বয়সে যখন মানুষ নিজের শরীরকে আবিষ্কার করে তখন বিভিন্নভাবে অভিভাবকরা অস্বস্তির মুখে পড়েন।

 

তবে এখানে আরেকটা প্রেসার গ্রুপ আছে। সেটা হচ্ছে গোঁড়া ধার্মিকদের গ্রুপ। তাদের প্রেসারেই মূলত পাঠ্যক্রমে বিভিন্ন পরিবর্তন-পরিমার্জন করা হয়। তারা বাল্যবিবাহের পক্ষে, সমকামীতার বিপক্ষে। তারা যৌন শিক্ষার বিপক্ষে।

 

উত্তরণের উপায় কি?

 

এখান থেকে উত্তরণের উপায়, যে কোনো সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ের মতই। সচেতনতা। অভিভাবকদের সাথে আলোচনা, কাউন্সেলিং।

 

যৌন শিক্ষা পাঠ্যক্রমে আনা একটা দেশকে সভ্যতার দিকে নিয়ে যায়।