আপনি কি আমার মতো একজন উভয়কামি অথবা সমকামী মানুষ? কি ভাবছেন মানুষ জেনে যাবে? আপনাকে ধরে নিয়ে জেলে দেবে? অথবা খুন করে ফেলবে? আমরা কি আসলেই বেঁচে আছি? কত দিন আমরা এভাবে মাড় খেয়ে যাবো বলতে পারেন?আমাদের অপরাধ কি? আমরা কি ইচ্ছে করে, বয়া প্রণোদিত হয়ে উভয়কামি মানুষ হয়েছি? এই ধর্মান্ধ অশিক্ষিত সমাজের কাছে জুতর বাড়ী খাওয়া ছাড়া আমাদের কি আর কিছুই করার নেই? আমরা আমাদেরকে নিজেরাই মণে মণে খুন করে বসে আছি। সময় এসেছে আত্ম প্রকাশের। এগিয়ে আসুন।
অন্যের কাছে নিজেকে সমকামী বা উভকামী বলে পরিচয় দেওয়াকে বলা যেতে পারে Coming Out বা আত্মপ্রকাশ। অনেকের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য মানসিক পদক্ষেপ। যে সমকামী বা উভকামী নারী পুরুষরা মনে করেন যে, তাদের যৌনপ্রবৃত্তি গোপন রাখা দরকার তারা প্রায়শই মানসিক উদ্বেগে ভোগেন। অথচ যারা তাদের পরিচয় নিয়ে অনেক খোলামেলা তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা কম।
তবে আপনি তখনই আত্মপ্রকাশ করবেন যখন আপনি সেটা করতে চান এবং তার জন্য আপনি প্রস্তুত। যদিও আপনি আশা করতে পারেন যে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা আপনাকে সমর্থন দেবে, অনেক সময় হয় তার উল্টো। আপনি যদি অর্থনৈতিক দিক থেকে আপনার বাবা-মার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের কাছে আত্মপ্রকাশ করার আগে অপেক্ষা করাই ভালো। এমনটি হতে পারে যে তাদের বিদ্রুপাত্মক প্রতিক্রিয়ার কারণে আপনাকে বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে, বিপরীত লিঙ্গের কাউকে জোরপূর্বক বিয়ে করতে হচ্ছে, অথবা অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকারক মনোচিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
যখন নিজেকে প্রকাশ করবেন, তখন এমন একজনকে দিয়ে শুরু করবেন যার উপর আপনি ভরসা রাখতে পারেন। সমকামী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করাটা জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। কিন্তু তা আবার জীবনের সবচেয়ে ফলপ্রসূও হতে পারে। নিজেকে প্রকাশ করে আপনি আপনার এবং অন্যান্য সকল নারী-পুরুষ সমকামী ও উভকামীদের আত্মমর্যাদা নিশ্চিত করতে সহায়ক হচ্ছেন।
সমকামিতা কি পাপ? ইহুদিধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম এবং ইসলামধর্মে প্রথাগতভাবে সমলিঙ্গীয় যৌনআচরণকে পাপ বলে গণ্য করা হত। হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, জৈন এবং শিখধর্মে সমকামিতা সম্পর্কিত অনুশাসন যথেষ্ট পরিষ্কার নয় এবং এসব ধর্মেও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন। বর্তমানে সকল ধর্মেরই কিছু কিছু নেতারা ক্রমশ সমকামিতাকে মেনে নিচ্ছেন, এমনকি সমকামী বিয়েকেও অনুমোদন করছেন। প্রগতিশীল মুসলমান বিদ্বজনদের মধ্যে কেউ কেউ সমকামিতাকে (সমলিঙ্গীয় ভালোবাসা) নিন্দা না করে এর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন। বহু বাংলাদেশি সমকামী ও উভকামী আছেন যারা নিজেদের ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে যৌনপ্রবৃত্তির বিরোধ খুঁজে পান না।
কিন্তু তারপর অনেক বড় বাধা থেকে যায়। আইনের ৩৭৭ ধারা। যে ধারা আমাদের মাথার উপড়ে তরোয়ালের মতো লটকে আছে। যেকোনো মুহূর্তে খুলে পরবে এই তরোয়াল, দেহ থেকে খসে পরবে মাথা। মৃত্যুভয় আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আমাদের এক অসহায় অবর্ণনীয় কষ্টের জীবন। এই জীবন থেকে বের হয়ে বাঁচার মতো বাঁচতে হলে আমাদেরকে প্রতিবাদ করতেই হবে। আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করলে পরিবর্তন আসবেই। আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবই। এই প্রতিবাদ শুরু হোক আজ থেকেই। এখন থেকেই।