প্রতিটি মানুষের জীবনের অদ্বিতীয় গল্প রয়েছে; আমার যেমন আছে, আপনারও তেমনি আছে। ‘হিজড়া কিংবা সমকামী‘ এই শব্দগুলো যারা শুনে অভিশপ্ত মনে করেন, তাদের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ কে বুঝবে? তাদের অস্তিত্ব ও পরিচয়ের লড়াই, তাদের মৌলিক মানবিক চাহিদা সমাজে স্বীকৃতি পাওয়া – এসব কি আমাদের অগোচরে থাকবে? আপনি কি আপনার আত্মিক বেদনা ও আনন্দকে আড়ালে রাখতে পারেন?
জেন্ডার একটি গভীর ও বিস্তৃত ধারণা। এর মানসিক ও সামাজিক দিকগুলো বুঝতে গভীর শিক্ষার প্রয়োজন। আমরা কতটা জানি এবং বুঝি যে মানবাধিকার কী হতে পারে? শিক্ষা কি কেবল বই পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ, নাকি এর পরিধি আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও অভিজ্ঞতায়ও বিস্তৃত?
তথ্যের সন্ধান এবং জ্ঞান অর্জন অপরাধ নয়। আপনার সন্তানের কাছে যদি এই সব জ্ঞান প্রয়োজন না হয়, তারা কি আপনার অজান্তে আরও অনেক কিছু শিখছে না? এবং যা তারা জানছে, সেটা কি সঠিক?
একজন হিজড়া বা সমকামী যখন সমাজে হেঁটে যায়, আমরা কীভাবে তাকে দেখি? যদি আমাদের সন্তান তাদের প্রতি ঘৃণা শিখে, তবে তারা কীভাবে শিখবে মানুষ হওয়ার মূল্যবোধ?
আমাদের সকলেরই জেন্ডার, থার্ড জেন্ডার, ট্রান্সজেন্ডার, এবং LGBTQ সম্প্রদায় নিয়ে শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জন করা উচিত। শিক্ষা ক্রমের উপর ভাবনা ও সংশোধন নিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া উচিত, এবং সকল ধর্মের মূল বার্তা, যা মানবতাকে প্রমোট করে, তার প্রতি অনুসরণ করা উচিত। সকলের জন্য জেন্ডার ধারণা, তৃতীয় লিঙ্গ, ট্রান্সজেন্ডার অথবা এলজিবিটিকিউ সংজ্ঞাগুলি গভীরভাবে জানা ও বোঝা জরুরি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও গভীর অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমেই আমাদের মন্তব্য ও বিচার গঠন করা উচিত। পাঠ্যবই সম্পর্কিত সংশোধনী বিষয়ক যেকোনো আলোচনায় এসব তথ্য বিবেচনায় নিয়ে আসা উচিত। ধর্ম সম্প্রীতির পথ নির্দেশ করে, এবং কোনো ধর্ম বিভেদের পক্ষপাতী নয়। জ্ঞান, বোধ, শিক্ষা এবং মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয় এই প্রক্রিয়ায় জরুরি।
নৈতিকতা, সততা, অবদান, নীতিমালা—এগুলি সম্পর্কে বারবার শিক্ষা পাওয়া গেলেও সঠিক প্রয়োগের অভাব রয়ে যায়।
যদি একটি পাঠ্যবই থেকে সমকামিতা বা হিজড়াদের জীবনালেখ্য নিয়ে শঙ্কা থাকে, তাহলে বৃহত্তর সমাজিক অপরাধগুলি নিয়ে কী অবস্থান? পর্নোগ্রাফি, যুবক গ্যাং, পরিবেশ ধ্বংস, জঙ্গিবাদ—এসব নিয়ে আমাদের দৃষ্টি কতটা সচেতন?
বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলা কোন শিক্ষা নয়; বরং শিক্ষা হলো মানবিক গুণাবলী এবং বোধগম্যতা বাড়ানো। সংবেদনশীল এবং মানবিক মানুষ হওয়াই আসল লক্ষ্য।
মানুষের দায়িত্ব, বোঝাপড়া এবং সহমর্মিতার উন্নতি নিয়ে আমরা ভাবি এবং তা প্রমোট করি। আমাদের মননে ও মনোভাবে শরীফ বা শরীফার গল্প যেন মানবিক শিক্ষার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকে।
মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কি শুধু নিজেদের মূল্যবোধ বাঁচিয়ে রাখা? না, আমাদের উচিত আরও সংবেদনশীল এবং সহমর্মী হতে শিখা। পরিবর্তন অনিবার্য, এবং আমাদের উচিত এই পরিবর্তনকে সহানুভূতিশীল মনোভাব দিয়ে গ্রহণ করা।