ইসলামে মেয়েদের কেন চার টা বিয়ে করা অনুমতি নেই? ইসলাম ধর্ম কি শুধু পুরুষদের জন্য ? ইসলামের সব কিছু পুরুশকেন্দ্রিক কেন? সব কিছুতেই কেন শুধু পুরুষ কয়ে ছার দেয়া হয়? মেয়েদেরকে কেন বোরখা বন্ধী করে রাখা হয়? মেরা কেন স্বাধীন ভাবে ছলার অধিকার রাখে না? মেয়েদেরকে কেন মানিয়ে চলতে হয়? পুরুষরা যখন তখন জাড় তার সামনে চলতে পারে, মেয়েরা কেন পারে না?

ইসলামে একজন পুরুষকে একাধিক (চারটা পর্যন্ত) বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর সপক্ষে জাকির নায়েক সহ বিখ্যাত সব ইসলামী চিন্তাবিদগণ কিছু যুক্তি-কারণ দেখিয়েছে। এসব যুক্তি-কারণগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হল: “পৃথিবীতে নারীদের সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অধিক।”

যদিও এই যুক্তিতেও বিরাট গলদ আছে। যেমন,

ক) কিছু দেশে নারীদের সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি, তবে এত বেশি না যে, পুরুষকে চারটা বিয়ে করার অনুমতি দিতে হবে।
খ) সামগ্রিকভাবে পুরো বিশ্বে বিবাহযোগ্য জনসংখ্যার ক্ষেত্রে পুরুষের সংখ্যাই বেশি।
গ) নারীদের মৃত্যুহার পুরুষদের তুলনায় কম, তাই শেষ বয়সে তাদের সংখ্যা বেশি। তাই বলে এই নয় যে, তাদেরকেও তখন বিবাহযোগ্য ধরে হিসেব করতে হবে।

গড়ে পৃথিবীতে নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাত ১ : ১.০১
পনের বছরের নিচে নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাত ১ : ১.০৬
৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাত ১ : ০.৭৯
(তথ্যসূত্র)

এবার ধরা যাক মুসলিমপ্রধান দেশগুলার কথা, যেসব জায়গায় চার বিয়ের বিধান চালু।

সৌদি আরবে ১৫ থেকে ৬৫ বছরের নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাত – ১ : ১.২২ (২০১৪ সাল)
আরব আমিরাতে ১৫ থেকে ৬৫ বছরের নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাত – ১ : ২.৭৫ (২০১২ সাল) অর্থাৎ এই দেশে পুরুষের সংখ্যা মেয়েদের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি!

এছাড়া বাহরাইন, জর্দান, কুয়েত, ওমান ও কাতারেও ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা কম। এর মাধ্যমে আমরা ইসলামী চিন্তাবিদদের ভণ্ডামি স্পষ্ট করেই বুঝতে পারছি।

এবার আল্লাহর সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা যাক।

ইসলামে সর্বশক্তিমান, সৃষ্টিকর্তা হলেন আল্লাহ। যিনি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব জানেন। কিন্তু আসলেই কি তাই? আগেই আমরা নারী-পুরুষের অনুপাতটা দেখেছি, তারপরও নাহয় মানলাম – নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি। তাই আল্লাহ এই সমস্যার সমাধান দিয়েছেন পুরুষের একাধিক বিয়ের অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে। জাকির নায়েকও উঁচু গলায় বলতে পারেন, “আপনার বোনকে এমন কারো কাছে বিয়ে দেবেন, যার স্ত্রী আছে, নাকি তাকে জনগনের সম্পত্তি বানাবেন।”

এবার আসুন, ঘটনার গভীরে প্রবেশ করা যাক। আল্লাহ যে-সমাধানটা দিয়েছেন, সেটা হল প্রতিকার, প্রতিরোধ নয়। আবারো বলছি, সেটা প্রতিকার, প্রতিরোধ নয়। ধরুন, আপনার সন্তান খেলা শুরু করেছে ধারালো যন্ত্রপাতি দিয়ে। তখন আপনি প্রতিরোধ হিসেবে ধারালো যন্ত্রপাতিগুলো সরিয়ে নেবেন, নাকি কিছুই করবেন না যতক্ষণ না হাত-পা কাটে? যখন হাত-পা কেটে যাবে, তখন প্রতিকার হিসেবে স্যাভলন, ব্যান্ডেজ, ঔষধ ইত্যাদি নিয়ে এসে সমস্যার সমাধান করবেন? আপনি জ্ঞানী হয়ে থাকলে অবশ্যই প্রতিরোধ করবেন, আর যদি প্রতিরোধ করতে অপারগ হন, তবেই প্রতিকারের চিন্তা করবেন।

যেহেতু আল্লাহ সর্বশক্তিমান, ভবিষ্যৎ জানেন এবং তিনি সবাইকেই সমান চোখে দেখেন, তাই সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করাও তাঁর কাজ, যেহেতু সব ভাল কাজই তিনি করে থাকেন। তাহলে তিনি কেন এমন ব্যবস্থা নিলেন না, যাতে নারী-পুরুষের সংখ্যা সমান থাকে এবং অধিকারও বজায় থাকে? এই গাফিলতির পেছনে সম্ভাব্য কারণগুলো হতে পারে:,

ক) তিনি পুরুষতান্ত্রিক, তাই নারীদের অধিকার নিয়ে এত মাথা ঘামাননি।
খ) তিনি ভবিষ্যৎ জানতেন না, তাই যখন দেখলেন, নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে, তখন তিনি জীবরাঈল মারফৎ নবীর কাছে এর সমাধান দিলেন পুরুষের একাধিক বিয়ের মাধ্যমে।
গ) তিনি ভবিষ্যৎ জানলে আগেই নারী-পুরুষের সংখ্যা এমনভাবে নির্ধারণ করতেন, যাতে জন্মহার বা মৃত্যুহার যাই হোক না কেন, নারী-পুরুষের অনুপাত সমান থাকে। এটা করতে তিনি অপারগ।
ঘ) হয়তো ভবিষ্যৎ জানেন কিন্তু প্রতিরোধের উপায় জানা নেই বা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ তাই প্রতিকার হিসেবে ঐশী বাণী পাঠিয়েছেন।

যাঁরা প্রকৃত জ্ঞানী, তাঁরা জানেন যে, “প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম।” তাই আল্লাহ হয় এটা জানতেন না বা জেনে থাকলেও অক্ষম হওয়ার কারণে প্রতিরোধ করতে পারেননি।

আল্লাহ্‌ এই বিভেদের সৃষ্টি কেন করলেন? কেন সব সময় মেয়েদেরকেই সব কিছু সহ্য করে চলতে হয়? মেয়েদেরকে কেন অবলা ভাবা হয়? মেয়েরা কেন পড়াশোনা করতে গেলে কথা শুনতে হয়? মেয়েদেরকে কেন অশিক্ষিত হয়ে থাকতে বলা হয়? মেয়েদের কেন শুদু মাত্র সন্তান প্রসবের জন্য পৃথিবীতে জন্ম হয়ে বলা হয়? এত অবিচার কেন মেয়েদের জন্যই? এসকল বিষয়ে আমরা কেন বরাবর চুপ করে থাকি? প্রতিবাদ কেন করি না?