মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছি আমি। ছোটবেলা থেকেই দেখছি ধর্ম নিয়ে বেশ বাড়াবাড়ি রকমের হুকুম জারি করা হত। মণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর  করে মাদ্রাসায় পাঠানো হত । হুজুরের কাছে জেতেই হত। সুযোগ বুঝে অনেক সময় হুজুর মিয়া আমাকে কোলে তুলে নিতেন এবং আমার নিতম্ব দেশে হাত বুলাতেন। ব্যাপারটা ভালো লাগত না। তবুও পরিবার এক রকম জোর করেই পাঠাতেন আরবি শেখার জন্যে।

পরিবারে জন্ম নেওয়া প্রত্যেক সন্তার যেমনটি শিক্ষা পায় ধর্মের বিষয়গুলোতে, আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না। প্রতিটা মুসলিম পরিবারের মত আমাকেও শৈশবে কিছু ধর্মীয় বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেকটি মুসলিম পরিবারের সন্তানদের মতই আমি জেনেছিলাম যে আল্লাহ হলো এই বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা এবং ইসলাম হলো আল্লাহর মনোনিত ধর্ম। পৃথিবীর সব ধর্মই মিথ্যে একমাত্র ইসলামই সত্য ধর্ম এবং আল্লাহই হলো একমাত্র বিশ্বজগতের সত্য সৃষ্টিকর্তা।

প্রত্যেকটি মুসলিম সন্তানের মত আমাকেও শেখানো হয়েছে যে, নামাজ রোজা ইত্যাদি ইবাদত করলে বেহেশতে যাওয়া যায়, যেখানে আছে অনন্ত সুখ, মদ, হুরপরী ইত্যাদি। আর তাই আল্লাহর ইবাদত করা অত্যন্ত জরুরী।

আল্লাহর ইবাদত হলো, আল্লাহর গুনগান করা, কোন অপরাধ না করেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, এটা দাও, ওটা দাও বলে আবদার করতে থাকা ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং আল্লাহ যত বড় অন্যায় কাজই করতে বলুক না কেন, চোখ কান বন্ধ করে সেই কাজ করাটাই হলো ইবাদত।

পৃথিবীর সব ধর্মই ভ্রান্ত; কেবল ইসলামই সত্য। আর আমি এই সত্য ধর্মের পথে আছি এবং এর ফলে যত অপরাধই আমি করি না কেন, একদিন নিশ্চিত বেহেশতে যেতে পারবো। অন্য দিকে যত ভাল ও মহৎ কাজই করুক না কেন বিধর্মীরা সরাসরি জাহান্নামে যাবে এতে কোন ভুল নেই। এটা ভেবে অহংকার বোধ করতাম যে আমি সত্য ধর্মেরই অনুসারী। আর তাই আমি শ্রেষ্টদের অন্তর্ভুক্ত। আর বিধর্মীরা হলো নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত। ভাবতেই বুকটা দুই ইঞ্চি উঁচু হয়ে যেতো।

আমি আর দশটা মুসলমানদের মতই বড় হচ্ছিলাম মুসলিম হিসেবে। কিন্তু কেন আমি ইসলাম ছেড়ে দিয়ে নাস্তিকতার পথে পা বাড়ালাম এই কারণটিই এই পর্বগুলোতে পর্যায়ক্রমে বর্ননা করবো।

আমি কেন ইসলাম ছেড়ে নাস্তিক হলাম সেই কাহিনী এবং যুক্তিগুলোই এই পর্বগুলোতে উল্লেখ করবো ইসলামকে বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এবং আমার জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা পর্যালোচনা করে।

কেন আমি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হলাম?

আমাদের গ্রামে মোটামুটি বিভিন্ন মতবাদের মানুষের বসবাস ছিল। আর এটা আমার মনকে পরবর্তীতে মুক্ত হতে সাহায্য করেছিল। আমি অন্যান্য মুসলমানদের মতই শৈশবে শিখেছিলাম ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম, বাকী সব ধর্মই মিথ্যে। পরে আমি এটাকে বিশ্বাস করেছিলাম সম্পূর্ণ মন থেকে। আমি সত্য ধর্মের অনুসারী এবং আমি জান্নাতে যেতে পারবো, কিন্তু যারা ইসলাম বাদে অন্য ধর্মের অনুসারী তারা জান্নাতে যেতে পারবে না।

মুসলমানদের মতই ভাবতে ভালো লাগতো যে, আমি সত্য ধর্মের অনুসারী আর বাকীরা ভূল ধর্মের অনুসারী।

আমাদের গ্রামে ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের বসবাস থাকার কারণে আমি মোটামুটি মিক্সড্ কালচারে বড় হয়েছি। ভিন্ন ধর্মাবলী হলেও আমার বন্ধুদের মধ্যে ধর্মীয় ভেদাভেদ ছিল না কখনই। ফলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সম্পর্কে কখনই আমার বিরুপ মনোভাব গড়ে উঠেনি। বরং মুসলমান হয়েও যখন দেখতার একজন মুসলমান কোন হিন্দুকে নিয়ে নেগেটিভ মন্তব্য করছে তখন সেটার প্রতিবাদ করতে মন চাইতো। আমি দেখতাম মানুষের ধর্ম ভিন্ন হলেও একজন মানুষ অন্যজন মানুষের থেকে ভিন্ন নয়। সবার চিন্তা চেতনাই মোটামুটি একই রকম।

একটু বড় হলে যখন কিছুটা ধার্মিক হতে শুরু করলাম তখন ধর্ম নিয়ে ভিন্ন মতের বন্ধুদের সাথে তর্ক করতাম। তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করতাম যে আমার ধর্ম কতটা সত্য ধর্ম আর ওদেরটা কতটা মিথ্যে ধর্ম। এই নিয়ে দিনের পর দিন বন্ধুদের সাথে তর্ক করেছি। তর্কে হারি জিতি সেটা বড় কথা নয়, তর্কের শেষে ভাবতাম আমার যুক্তি অকাট্ট এবং আমার বন্ধুরা সবাই ভ্রান্তির মধ্যে আছে। আমি মাঝে মাঝে ওদের ভ্রান্তিতে থাকাটা নিয়ে গর্ব করতাম এটা ভেবে যে, আমি সত্য পথে আছি আর ওরা ভ্রান্তিতে আছে। আবার মাঝে মাঝে ওদের যুক্তি দেখে ভাবতাম, ওরা কতটা ভ্রান্তিময় যুক্তি দেয় আর আমি কতটা যুক্তিপূর্ণ যুক্তি দেই।এভাবেই অনেক দিন যায়।

ধর্মীয় ব্যবধান কখনই আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে ফাঁটল ধরাতে পারেনি। আমরা সব সময়ের মতই একই সাথে ঘুরতাম, ফুটবল খেলতাম এবং একই সাথে স্কুলে যেতাম।

আমার বাবা খুব ধার্মিক ছিল। যাকে বলে একে বারে গোঁড়া ধার্মিক। জীবনের দীর্ঘ সময় ধর্মের পিছনে ছুটেছে বলে ভালো অবস্থানে থেকেও জীবনে ভালো কিছু করতে পারেনি। ধর্মের পিছনে পুরো সময় ব্যয় করাতে পরিবারের প্রতি খুব একটা খেয়াল রাখতে পারেনি। ফলে আমাদের পরিবারে সব সময়ই একটা আর্থিক নাজুক অবস্থা বিরাজ করতো। অবশ্য জীবনের শেষ সময়টাতে বাবা পরিবারকে গুছিয়ে নিতে পেরেছিল বলে আজ আমরা মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছি। কিন্তু যদি সে ধর্মের পিছনে সময় অপচয় না করে জীবনের পিছনে সময় কাজে লাগাতো তবে আমরা অনেক ভালো অবস্থানে থাকতে পারতাম। শুধুমাত্র বাবার ধর্মীয় গোঁড়ামীর জন্যই সে কিছু করতে পারেনি। আর এটা আমি নাস্তিক হবার পরে খুব ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পারি।

বাবা ছিল প্রচন্ড রকমের গোঁড়ামীপূর্ণ মানুষ। সব মুসলমানদের মত সেও নিজে যা বুঝতো সেটাকেই একমাত্র সত্যি ও ভালো মনে করতো। কারো কথাই শুনতে চাইতো না। নিজে যেটা ভালো মনে করতো সেটাকেই সব সময় প্রাধান্য দিত।আর পরিবারের সবাইকে ধর্ম-কর্ম করার জন্য চাপ দিতো।

এভাবেই ধর্মীয় গোঁড়ামীপূর্ণ অবস্থায় বড় হয়েছি আমরা ভাই-বোনরা।

আমার আব্বা সুনামগঞ্জের একটি ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন।। বাবা ধর্মের জন্য সবটা সময় ব্যয় করতো বলে ঠিক ভাবে বাড়িতেও যেতো না। আর বাড়িতে আসলে একটা উৎসব উৎসব আমেজ বিরাজ করতো।বাবা এলে আমার খুব ভালো লাগতো।  আর বাবাকে আমরা ভাইবোনরা পীরের মতো মহামানব মনে করতাম। বাবা মানেই ছিল আমাদের কাছে পীর আউলিয়ার মতো সম্মানিত ব্যক্তি। এবং সেভাবেই আমরা সবাই বাবাকে সম্মান ও ভয় পেতাম।

ফলে বাবা যতদিন বাড়িতে থাকতো ততদিন ভয়েই নামাজ কালাম পড়তে যুদ্ধ শুরু করে দিতাম। বাবা চলে গেলেই আগের মতো অবস্থা।

আমাদের মা ততটা ধার্মিক ছিল না। যদিও নিজে নামাজ পড়তো ঠিক ভাবে কিন্তু কখনই আমাদেরকে নামাজের জন্য চাপ দিতো না। আর আমরা সেই স্বাধীনতাটুকু ভোগ করতাম।

আমার বাবা গোঁড়া ধার্মিক হলেও আমরা কোন ভাইবোনই ততটা ধার্মিক ছিলাম না কখনই। আমার বড় বোনটা শুধু ধার্মিক হয়েছিল আর আমরা সবাই ছিলাম ধর্মের ক্ষেত্রে উদাসীন।

এভাবেই যাচ্ছিল আমাদের দিন।

কিছুটা বড় হবার পরে হঠাৎ করে আমি বেশ ধার্মিক হয়ে উঠলাম। যদিও আমরা বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় খুব ধর্ম-কর্ম পালন করতাম; কিন্তু বাকী সময় আমরা ধর্মকর্মে পুরোপুরি উদাসীন থাকতাম। কিন্তু আমি একটা সময় প্রচন্ড রকমের ধর্মের প্রতি ঝোকে পড়লাম। ধার্মিক হয়ে একটা বিষয় উপলব্ধি করলাম যে, আমি নামাজি এবং আমি নেক বান্দা। আর এটা নিয়ে মনে মনে গর্ব করতাম। যখন আমি আমার অ-নামাজি বন্ধুদের দেখতাম তখন মনে হতো ওরা খুব একটা ভালো মানুষ না। আমি অনেক ভালো মানুষ। আর তাই আমি ওদের থেকে অনেক সম্মানিত মানুষ এবং আমি ওদের থেকে উন্নত মানুষ। যতদিন আমি নামাজি ছিলাম ততদিন আমার মধ্যে এই অহংকারটা কাজ করতো। কিন্তু যখন আমি কৈশর পার করে যৌবনে পুরোদমে পা রাখলাম তখন বিড়ি খাওয়া থেকে শুরু করে স্কুল ফাকি দেওয়া, মেয়েদের সাথে টাংকি মারা প্রভৃতি অপকর্মে জড়িত হলাম। এ সময়টা আমি ধর্ম থেকে কিছুটা দুরে সরে গেলাম। যদিও আমি শুক্রবারে নামাজ মিস করতাম না। এবং রমজান মাস এলে পুরোদমে মুমিন বনে যেতাম। কৈশর ও যৌবনের শুরুতে যত প্রকার অপকর্ম আছে সব গুলোই করতে লাগলাম পুরোদমে। সারা দিন ক্রিকেট খেলা, বিকেলে টাংকি মারতে যাওয়া, তাস খেলা আর বিড়ি টানা ছিল নিত্য দিনের কাজ।

সেই সময়টাতে নামাজী বন্ধুদেরকে আমার মনে হতো বেয়াক্কেল। শৈশবের কোন মজাই তারা করতো না, যৌবনের মজা করাটাতো তাদের জন্য জঘন্য কাজ ছিল।আমরা সেই সব বন্ধুদেরকে বলদ বলে ডাকতাম আড়ালে আড়ালে। এভাবেই সেই সময়টা পার করে দিলাম।

কিছুদিন পরে যখন পড়াশুনায় মনোযোগী হয়ে উঠলাম ঠিক সেই সময়টাতে একটা রুটিনে চলে আসলাম। নামাজ পড়া শুরু করলাম আবার করে। পরীক্ষা যতই কাছাকাছি চলে আসলো ততই যেন ধার্মিক হয়ে উঠতে লাগলাম। পরীক্ষার কাছাকাছি সময়টাতে একেবারে নামাজী হয়ে গেলাম। ফজর নামাজ একটাও আর মিস হয় না। এভাবেই সেই সময়টা টুপি মাথায় দিয়ে কাটালাম।

পরীক্ষা যখন শেষ হলো তখন যেন বন্দী দশা থেকে মুক্ত হলাম। আবার করে সেই স্বাধীন জীবনে ফিরে গেলাম। আগের মতই এলোমেলো চলাফেরা শুরু করে দিলাম। শুক্রবার ছাড়া আর মসজিদ মুখো হই না। এভাবেই কাটতে লাগলো জীবন।

ইতি মধ্যে পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে দিলো। ফলাফল খুব একটা ভালো হলো না।পরীক্ষার আগের নামাজ কোন কাজ দিলো না। আমি পরীক্ষার আগে নামাজী হয়েও যা ফল করলাম, আমার মসজিদ না ছাড়া ধার্মিক বন্ধুরাও একই ফল করলো। মোট কথা নামাজ পড়াটা কারো জন্যই কোন বাড়তি ফল এনে দিলো না।

এর মধ্যে আমি পরিবারের সাথে সুনাম গঞ্জে চলে আসলাম। সুনামগঞ্জের নতুন পরিবেশ, সব কিছুই নতুন নতুন। নিজেকে কোন ভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। তখন নামাজ পড়া শুরু করলাম পুরো দমে। এভাবেই সুনামগঞ্জের সময়গুলো যেতে লাগলো।

স্কুলে ভর্তি হলাম। (এখানে উল্লেখ্য আমার শৈশব কৈশরের বাদঁরামীর জন্য পড়াশুনায় গ্যাপ পড়ে গেছিলো।) ক্লাস করা শুরু করলাম। বন্ধুবান্ধব জোটতে শুরু করলো। স্কুল, কোচিং, বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডার চাপে পড়ে আমার নামাজী হওয়ায় ভাটা পড়তে লাগলো। এবং এক সময় আবার শুক্রবার ছাড়া আর মসজিদ মুখো হতাম না। এভাবেই বছর ঘুড়ে যাচ্ছিল। এক সময় পড়াশুনার চাপে পড়ে আবার পুরো দমে নামাজী হয়ে গেলাম। এখানে কিছু নামাজী বন্ধুও জুটে গেলো। ওরা সব সময়ই নামাজী। অতিরিক্ত ধার্মিক বলে প্রথমে ওদেরকে আমি এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু আমি নামাজি হবার পর থেকে ওদের সাথে ঘনিষ্টতা বাড়তে লাগলো। এসময় নামাজ এবং পড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম বলে আমার নরমাল বন্ধুদের সাথে কিছুটা দুরত্ব বেড়ে গেলো। ওরা সবাই আগের মতই চলতে লাগলো। একই ভাবে স্কুল, কোচিং ও বিকেলে আড্ডা দিতে থাকলো ওরা। এদিকে আমি শুধু স্কুল, কোচিং এবং নামাজ নিয়ে পড়ে থাকলাম আমার নামাজী বন্ধুদের সাথে।

এভাবে যতই পরীক্ষা ঘনিয়ে আসতে লাগলো, আমাদের নামাজ পড়ার মাত্রাও বাড়তে লাগলো। নামাজে সারাক্ষন একই প্রার্থনা যেনো পরীক্ষায় ভালো ফল হয়।দেখতে দেখতে পরীক্ষা এলো এবং নামাজ পরীক্ষা নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকলাম।পরীক্ষা শেষ হলো এবং আমি ফ্রি হয়ে আবার পুরোদমে নামাজী বন্ধুকে রেখে নরমাল বন্ধুদের সাথে মিশতে লাগলাম। এতে অবশ্য নামাজী বন্ধুরা আমাকে খেপাতে লাগলো নামাজ পড়ি না বলে। কেই কেউ বললো, আমি নামাজী সেজেছিলাম শুধু পরীক্ষার ভয়ে। আর তাই আমার নামাজ কবুল হবে না, আমি পরীক্ষায় ভারো ফলাফল করতে পারবো না কিন্তু ওরা সত্যিকার নামাজী বলে ওরা ভালো ফলাফল করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমি সেসবে পাত্তা দিলাম না।

যথারীতি রেজাল্ট হলো এবং আমার ফলাফল খারাপ হলো। নিজেকে বুঝাতে চাইলাম যে আমি ঠিক ভাবে নামাজ পড়িনি এবং শুধু পরীক্ষার আগেই নামাজ পড়েছি এবং পরীক্ষা ছাড়া নামাজ পড়িনি বলে আমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে।কিন্তু যখন দেখলাম যে আমার নামাজী বন্ধুরা যারা সব সময়ই নামাজ পড়তো তাদের রেজাল্টও ভালো হয়নি। কিন্তু যারা নামাজের ধার ধারে না ওদের রেজাল্টই ভালো হয়েছে।

এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। কারণ আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে, যেহেতু আমরা নামাজি তাই আমাদের রেজাল্টই ভালো হবে এবং যারা নামাজ পড়ে না তাদের রেজাল্টই খারাপ হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো তার বিপরীত।

এই ব্যাপারটা আমাকে ক্রমেই ভাবিয়ে তুললো। আমি নামাজ পড়লাম এবং যারা সব সময়ই নামাজ পড়লো তাদের রেজাল্ট খারাপ হয় কিভাবে? আর যারা নামাজ পড়রো না তাদের রেজাল্ট ভালো হয় কিভাবে? আল্লাহ এমনটা করতে পারলো !

অনেক দিন এটা নিয়ে ভাবতে লাগলাম। ক্রমেই নামাজের প্রতি আমি অনীহ হয়ে উঠলাম।

এর মধ্যে প্রিটেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো। আমি পুরোপুরি পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। স্কুল, কোচিং এবং বিকেলে বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় ব্যয় করা ছাড়া আর কোন বাজে কাজ করতাম না। সারাক্ষন পড়াশুনা করতাম। নামাজী বন্ধুরা অবশ্য আমাকে নামাজে যেতে বলতো কিন্তু আমি নামাজে গেলাম না। সব সময়ই পড়তে লাগলাম। আমি যেহেতু সাইন্সের ছাত্র না তারপরেও কিছুটা আগ্রহ থেকে বিজ্ঞানের কিছু বই আমাকে আকৃষ্ট করত।  আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম যেসব প্রশ্ন আমি সেই শৈশব থেকে ভেবে আসছি সেই সব প্রশ্নের উত্তর আছে বিজ্ঞান বইয়ে। আস্তে আস্তে বিজ্ঞানটা বুঝতে লাগলাম এবং অবাক হয়ে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর ব্যাপারগুলো উপলব্ধি করতে পেরে রুমাঞ্চিত হতে লাগলাম। পুরো বিজ্ঞানের বিষয়গুলো আস্তে আস্তে গলাধঃকরন করতে লাগলাম। পদার্থ, রসায়ন আমার কাছে পানির মতো সহজ এবং মধুর চেয়েও অমৃত মনে হতে লাগলো। বিশ্বজগতের প্রকৃতিটা আমার কাছে স্পষ্ট হতে লাগলো। যে পড়াশুনাকে ভয় পেতাম সেই পড়াশুনাই আমার কাছে আনন্দের হয়ে গেলো। বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ি আর পৃথিবী আকশ চাঁদ তারা নিয়ে ভাবি। এভাবেই দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে পরীক্ষা শেষ হলো টেরই পেলাম না। এই প্রথম পড়া এবং পরীক্ষায় প্রচন্ড মজা পেলাম। এবং বিজ্ঞানকে ভালোবেসে ফেললাম।

ততদিনে মহাবিশ্বের প্রকৃতি, জীববৈচিত্র, শরীরের গঠন, মানুষের সাথে প্রানী ও উদ্ভিদের সম্পর্ক এবং এদের বিবর্তন সম্পর্কে আমার ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এখন আর আমাকে ভাবতে হয় না আকাশের রং কেন কালো?আমি রং ধনু দেখে অবাক হয়ে আর সুবাহানাল্লা বলি না। কারণ আমি জানি আকাশ কেন নীল. রংধনুর সাত রংয়ের কাহিনী কি? কালো রং কেন কালো?গাছ কেন সবুজ? পাখি উড়ে কিন্তু আমাদের উড়তে হয় প্লেন দিয়ে, কিন্তু কেন?পৃথিবী কেন সূর্যের চারপাশে ঘুরে? কেন রাত দিন হয়? আমাদের জগতটা কিভাবে চলছে? ইত্যাদি হাজারটা প্রশ্নের উত্তর আমি জেনে গেছি। আর তাই আমি আগের মত বলি না যে আকাশে ফেরেশতা বৃষ্টি ঘটায়। কারণ আমি জানি কেন বৃষ্টি হয়। মেঘ ডাকলে আমি আর আল্লাহর গজবের ভয় পাই না। কারণ আমি জানি কেন মেঘ ডাকে। দিন রাত হয় কোন ফেরেশতার জন্য নয়, বরং দিন রাত পরিবর্তন হয় পৃথিবী ঘুরে বলে। বিদ্যুৎ আসা যাওয়াতে এবং লাইট জ্বলাতে কোন ফেরেশতার দরকার হয় না, ইলেক্ট্রনের জন্যই বিদ্যুৎ আসে যায় এবং লাইট জ্বলে।

এরকমের হাজারটা প্রশ্নের উত্তর আমি ইতিমধ্যেই জেনে গেছি। তাই সব কিছুতেই আল্লাহ এবং ফেরেশতাদেরকে ডেকে আনা আমি কমিয়ে দিয়েছি। এভাবেই আমি নামাজ ছাড়া চলতে লাগলাম।

যথারীতি রেজাল্ট হয়ে গেলো তার কিছু দিন বাদেই। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম আমার রেজাল্ট খুব ভালো হয়েছে। আমার নরমাল বন্ধুদের চেয়েও আমি ভালো রেজাল্ট করেছি। যেসব নামাজী বন্ধু ছিল আমার, ওরা আগের মতই কোন রকমের রেজাল্ট করলো। অথচ আমি এবার নামাজ না পড়ে বেশী সময় নিয়ে পড়াশুনা করায় অনেক ভালো রেজাল্ট করলাম। কিন্তু ওরা নামাজ পড়েও আগের মতই ফল পেলো।

এ থেকে আমি বুঝতে পারলাম, নামাজ আসলে কোন ফলই দেয় না। বরং যেসব বন্ধু কখনও নামাজ মিস করে না তারা নামাজের পিছনে অনেক সময় ব্যয় করে বলে তারা খুব একটা ভালো রেজাল্ট করে না। কিন্তু যারা সেই সময়কে কাজে লাগায় তারাই ভালো রেজাল্ট করে। এখানে কে নামাজি আর কে নামাজি নয় সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো কে বেশী পড়াশুনা করে এবং সময়কে ঠিক ভাবে কাজে লাগায়। নামাজ বা প্রার্থনা কোন ভুমিকাই রাখতে পারে না।

আমার নরমাল বন্ধুরা আগে যেমন ভালো রেজাল্ট করতো এখনও তেমনি ভালো রেজাল্ট করেছে। আর নামাজী বন্ধুরা যারা পাক্কা মুমিন তারা তাদের নামাজের শক্তিতে আলাদা কোন ফল পায়নি কখনই।

এ থেকে আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম যে প্রার্থনা কোন কাজে আসে না কখনই। যে বেশী পড়াশুনা করে মনোযোগ দিয়ে সেই ভালো ফলাফল করে। সে নামাজ পড়ুক বা না পড়ুক সেটা দিয়ে কোন কিছু যায় আসে না।

কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম আল্লাহ আছে কিন্তু আল্লাহ কোন প্রার্থনা শুনে তার জবাব দেয় না। আল্লাহ সত্য, ইসলাম সত্য কিন্তু তাই বলে আল্লাহ সব কিছুতে হস্তক্ষেপ করে না। মানুষ যা করে তা নিজের দায়িত্বেই করে। আল্লাহ প্রার্থনা কবুল করে না সত্য কিন্তু তার অস্তিত্ব আছে বলেই আমার পূর্ণ বিশ্বাস ছিল তখন।প্রত্যেকটি মুসলমানের মতই আমিও বিশ্বাস করতাম মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রসুল এবং কুরআন হলো আল্লাহর কিতাব। প্রত্যেকটি মুসলমানের মতই আমি বিশ্বাস করতাম কুরআন হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ট গ্রন্থ এবং কুরআনের মত কোন গ্রন্থই আজ পর্যন্ত কেই লিখতে পারেনি এবং পারবেও না। কারণ কুরআন হলো আল্লাহর লেখা পবিত্র গ্রন্থ।

একদিন ধর্ম নিয়ে আমার বোনের সাথে কথা বলার সময় আপা বললো যে,বিজ্ঞানীরা নাকি ধর্ম বিশ্বাস করে না। কেউ একজন ধর্ম বিশ্বাস করে না এটা আমি এর আগে জানতাম না। আমি হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃস্টান এবং আরো অনেক ধর্মের অনুসারীদের কথা শুনেছি কিন্তু কেউ একজন ধর্ম মানে না সেটা আমি তখনও জানতাম না। আমি অবাক হয়ে আপাকে প্রশ্ন করলাম, তাহলে বিজ্ঞানীরা কুরআনকে কি বলে? কুরআনতো আল্লাহর বাণী। কুরআনের কথা পড়েতো তাদের বুঝা উচিৎ যে এটা আল্লাহর বই?

আপা উত্তরে বললো, ওরা কুরআনকে একটা সাহিত্য মনে করে। সাহিত্য ছাড়া কুরআনকে তারা অন্য কিছু মানতে নারাজ।

সাহিত্য বিষয়টা কি সেটা তখন আমি খুব ভালো ভাবেই জানি। সেই অনেক আগে থেকেই আমি গল্প উপন্যাস পড়ি। এবং গল্পগুচ্ছ, দেবদাস, শ্রীকান্তর মত নামীদামী উপন্যাস পড়া আমার সেই সময়েই কমপ্লিট। তাই আমি ততদিনে খুব ভালো করেই সাহিত্য কি সেটা জেনে গেছিলাম। এবং সাহিত্যের রস সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা পেয়েছিলাম।

ফলে আপার কথাটা আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলতো। আমি ভাবতে লাগলাম কুরআনকে কেউ কেউ সাহিত্য মনে করে ? দিনের পর দিন আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম। কুরআন পড়ে দেখলাম বাংলাতে। এই প্রথম আমি কুরআন বাংলাতে পড়লাম। কারণ আমি জেনেছিলাম কুরআন হলো আল্লাহর বানী এবং এতে দুয়া দরুদ আছে আর দুয়া দুরুত হলো সম্পূর্ণ ঔষী একটি বিষয়। আর তাই এগুলো বাংলাতে পড়ার দরকার নেই এগুলো আরবীতে পড়লেই নেকী (পূণ্য)। আর তাই কখনই আমি কুরআন বাংলাতে পড়িনি। কিন্তু যখন শুনলাম যে কিছু মানুষ কুরআনকে সাহিত্য মনে করে তখন কুরআন বুঝার জন্য বাংলাতে পড়া শুরু করলাম। এবং পরীক্ষা করে দেখতে চাইলাম এটি আসলেই কোন সাহিত্যর মতো কিনা?

কুরআন বাংলাতে পড়তে যেয়ে দেখলাম কুরআনের কথাগুলো একজন মানুষের কথার মতই। আগে আরবীতে পড়তাম বলে বুঝতাম না যে কুরআনের কথাগুলো মানুষের কথার মতই। আরবীতে কুরআন পড়ে এবং নামাজের দুয়া পড়ে ভাবতাম এগুলো ঔষী বাণী। কিন্তু সেগুলোই বাংলাতে পড়তে গিয়ে দেখলাম এগুলো সাধারণ মানুষের লেখার মত কিছু কথা। কুরআন পড়তেই থাকলাম আস্তে আস্তে। একটা সময় দেখলাম কুরআন কিছুটা গল্পের মতো করে লেখা, কিছুটা পুঁথি কাব্যের মতো করে লেখা এবং কিছুটা কবিতার মতো করে লেখা।

ফলে আপার কথাটা সত্যি মনে হতে লাগলো। আমি যেন বুঝতে পারলাম কেন কিছু মানুষ কুরআনকে সাহিত্য বলে মনে করে। ঠিক তখন থেকেই আমি সন্দেহ করতে শুরু করি। আসলেই কি কুরআন আল্লাহর বাণী, সত্যিই কি কুরআনের কথাগুলো ঔষী কথা? তাহলে কি মুহাম্মদ (সাঃ) ভুল কথা বলেছে? সে কি মিথ্যে কথা বলেছে? কিন্তু সে তো আল-আমীন ছিল; তবে সে কেন মিথ্যে কথা বলবে?

এরকম নানা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো। কিন্তু আমি তখনও পুরাপুরি নিশ্চিত বিশ্বাস করতাম যে আল্লাহ সত্য এবং মুহাম্মদ মিথ্যাবাদী নয়।কুরআন আল্লাহর বাণীই।

কুরআন পড়ে জানতে পেরেছি যে, এটি অন্যান্য সাহিত্যের মতই একটা সাহিত্য যা মানুষের পক্ষেও রচনা করা সম্ভব।

এবং সব চেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য ব্যাপার হলো, সৃষ্টিকর্তা মানুষের কোন প্রকার প্রার্থনাই কবুল করে না। মানুষ যত প্রার্থনাই করুক না কেন সৃষ্টিকর্তা তার কোনই জবাব দেয় না। সুতরাং সৃষ্টিকর্তা সেই প্রার্থনা শুনতে পায় কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয়। এবং সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা কেন মানুষের প্রার্থনা শুনেও তার জবাব দেয় না সেটা যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি করে। তাহলে কি সৃষ্টিকর্তা নেই?

এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমি দিনের পর দিন ভেবেছি। অনেক চিন্তা ভাবনা করে এটা বুঝতে পেরেছি যে, যে ইসলামকে একমাত্র সত্য ধর্ম বলে সেই ছোট বেলা থেকেই বিশ্বাস করে এসেছি সেই ইসলামকে নিয়ে সন্দেহ করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে। এছাড়াও আরেকটা ব্যাপার আমাকে নাস্তিক হবার পথে চালিত করেছিল যে, মুহাম্মদ(সাঃ) যদি সর্বশেষ নবীই হয় তবে তার উপর নাযিল হওয়া কুরআনে সব জ্ঞানই থাকতে হবে যাতে ভবিষ্যতের মানুষের এবং সব সময়ের মানুষের জন্য এটি একটি নিদর্শন হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু আমি খুব ভালো করে লক্ষ করেছি যে কুরআনে শুধু ততটুকুই জ্ঞান বা চিন্তা ধারা লিপিবদ্ধ করা আছে যতটুকু মুহাম্মদ (সাঃ) জানতো। যেমন মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময়ের মানুষ শুধু আকাশ, চাঁদ-তাঁরা, সূর্য ও পাহাড় পর্বত ইত্যাদি সম্পর্কেই জানতো। আর তাই কুরআনে পৃথিবী, আকাশ, চাঁদ, তাঁরা এসব মানুষের জ্ঞানের সীমার মধ্যে সীমিত বিষয়গুলোই বার বার উল্লেখিত হয়েছে। সমগ্র কুরআনে এমন কোন কিছুই পাওয়া যায় না যেটা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময়ের মানুষের জ্ঞানের বাইরে ছিল।

আর তাই আমি এটা মানতে নারাজ ছিলাম যে মুহাম্মদ (সাঃ) এবং কুরআনের পরে কোন ওহী বা আল্লাহর বাণী আসবে না। আমার প্রায়ই মনে হতো কুরআনে যে জ্ঞান বা তথ্য আছে সেটা দেড় হাজার বছর আগের মানুষের জন্য উপযুক্ত হলেও একবিংশ শতাব্দির জন্য উপযুক্ত নয়। বরং কুরআনে বিশ্বজগত সম্পর্কে সংকীর্ণ বা ভূল উপস্থাপনাগুলো আধুনিক মানুষের জন্য ছেলেমানুষী ধরনের।

তাই আমার মনে হতো যদি ইসলাম এবং আল্লাহ সত্য হয়ে থাকে তবে অবশ্যই একজন আধুনিক নবীর আবির্ভাব হবার দরকার যে একটা আসমানী কিতাব আনবে যাতে আধুনিক বিজ্ঞান এবং বিশ্বজগত সম্পর্কে কুরআনের প্রাচীণ ধারণার বদলে আধুনিক ধারণাগুলো বর্ননা করা থাকবে এ যুগের মানুষের জন্য নিদর্শন স্বরুপ।

কুরআনের তথ্যগুলো বড্ড প্রাচীণ এবং কুরআনের বিশ্বজগতের বর্ণনাটা একেবারে প্রাচীণ মানুষের চিন্তা ধারা এবং পর্যবেক্ষণের মতই। আর তাই একটা আধুনিক নবী এবং একটা আধুনিক আসমানী কিতাব প্রেরণ করা হলে কুরআনের ভূল ও প্রাচীণ তথ্যগুলোর সংস্করণ হতো। আর এটা আধুনিক মানুষের জন্য উপযুক্ত নিদর্শন হতো।

আর তাই আমার মনে সন্দেহ ছিল যে মুহাম্মদ (সাঃ) যদি সর্বশেষ নবী হয় তবে কুরআনের অসম্পূর্ণ ও ভূল তথ্যগুলোর আর পরিবর্তন হবে না। এবং কুরআনের নিদর্শনগুলো প্রাচীণকালের মানুষের জন্য নিদর্শন হলেও আধুনিক মানুষের জন্য নিদর্শন বহন করতে ব্যর্থ। আর তাই এই সন্দেহটা যৌক্তিক যে কুরআন কোন এক মানুষের রচিত এবং ইসলাম সত্য ধর্ম নয়; ফলে আল্লাহর ধারণাও সত্য নয়।

প্রাচীণ ধ্যান ধারণার কুরআন দিয়ে আর যাই হোক সৃষ্টিকর্তার সত্যতা প্রমাণিত হয় না।

ফলে বিজ্ঞান এবং ইসলাম ধর্মের উপরিউক্ত সামগ্রিক বিষয়গুলোই আমার নাস্তিক হবার প্রথম কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছিল।

আর এই কারণগুলোর জন্যই আমি পরবর্তীতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে বিশ্বাস করিনি।এই কারণগুলোই আমার জন্য পরবর্তীতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিরোদ্ধে প্রমাণ হিসেবে হাজির হয়েছিল।

বিশ্বাস হয় না তাই বিশ্বাস করি না। আমাকে জোর করে ধর্ম পালন করতে বাধ্য কেন করা হয় আমি জানি না আদৌ । প্রশ্ন করলে উত্তর পাই না। যদি উত্তর না পাই তাহলে কেন আমাকে জোর করে ধর্ম মানতে হবে? আজ পর্যন্ত নরক দেখলাম না চোখে। আমি যদি কার মণে দুখ না দিয়ে থাকি বা কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে অজানার ভয় কোথায় আমার? আমার ৎ নরকে ভয় পাবার কথাই না। আর আমি ৎ নিজের চোখে নরক দেখে আসীনই যে আমাকে বিশ্বাস করতে হবে মৃত্যুর পরে আমি কোথায় যবো বা কোথায় আমার জায়গা হবে?