আমরা মানুষ—এই পরিচয়টাই আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়। আমরা জন্ম নেই ধর্মহীনভাবে, পরিচিত হই সমাজের চোখে লিঙ্গ দিয়ে, বিভক্ত হই বর্ণে, ধর্মে, আর ভালোবাসার স্বাধীনতায়। অথচ এই সব কিছুর উপরে একটি সত্য রয়ে যায়—মানবতা

আজকের সমাজে সমকামী পরিচয় যেন একটি গোপন অপরাধ, একটি নিষিদ্ধ রসায়ন। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, সমকামিতা কোনো রোগ নয়, বরং এটি শরীর ও মনের এক প্রাকৃতিক প্রবণতা। একজন মানুষ যদি স্বেচ্ছায়, সম্মতির ভিত্তিতে, আর কারো ক্ষতি না করে নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষা অনুসারে বাঁচতে চায়—তবে সেটা কখনোই অপরাধ হতে পারে না।

যেমন সমাজে হিজড়া সম্প্রদায় আছেন, তেমনি আছেন সমকামী, উভকামী, রূপান্তরিত লিঙ্গধারীরা। তারা কারো চেয়ে কম নয়। এরা শিক্ষক, ডাক্তার, ব্যবসায়ী, শিল্পী—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের অবদান রয়েছে। তাহলে কেন শুধুমাত্র যৌন অভিমুখতার কারণে তাদের ঘৃণার চোখে দেখা হবে?

সমাজ বলবে “অস্বাভাবিক”, অথচ প্রকৃতি তাদের তেমনি করে তৈরি করেছে। সমাজ বলবে “পাপ”, অথচ কোনো ধর্মের আসল শিক্ষা ঘৃণার নয়—ভালোবাসার।

 

২০১৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিল করে সমকামী সম্পর্ককে আইনি স্বীকৃতি দেয়। এটি শুধুমাত্র একটি রায় ছিল না, এটি ছিল ভালোবাসাকে অধিকার দেওয়ার ঘোষণা

আমাদের দেশ বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে। এখনো এখানে সমকামীদের ‘নোংরা’, ‘অপরাধী’ বা ‘বিকৃত’ বলে অপমান করা হয়। ৩৭৭ ধারা এখনো বলবৎ। অথচ প্রশ্ন জাগে—কে কার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করবে, সেটা নিয়ে এতজনের এত আগ্রহ কেন? যৌনতা যদি সম্মতিমূলক হয়, তাতে অন্যের সমস্যা কোথায়?

 

আমরা যেন ভুলে না যাই—যদি কোনো প্রেম, সম্পর্ক বা আকাঙ্ক্ষা কাউকে কষ্ট না দেয়, তাহলে সেটা ভুল নয়। কাউকে তার বিশ্বাস বা জীবনের জন্য ঘৃণা করা, সামাজিকভাবে বর্জন করা কিংবা আইনের চোখে অপরাধী বানানো অমানবিক

ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, যৌনতা—এসব পরিচয়ের মাঝে সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো মানবতা

মানুষের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সহানুভূতির মধ্যেই সত্যিকারের ধর্ম লুকিয়ে আছে।

এখন সময় এসেছে প্রশ্ন করার—কোন সমাজ চাই আমরা? যেখানে মানুষ ভালোবাসায় বাঁচবে, না ঘৃণায় মরবে?

যদি কেউ স্বেচ্ছায়, সম্মতির ভিত্তিতে নিজের জীবনে ভালোবাসা খুঁজে পায়, তবে তাতে হস্তক্ষেপের কোনো অধিকার কারোরই নেই।

সমকামী হোক, উভকামী হোক বা বিষমকামী—যদি সে মানুষ হয়ে থাকে, তাহলে সে পূর্ণ সম্মান পাওয়ার যোগ্য। কারণ, মানুষই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।