যদি ইসলামে সমকামিতার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, কিন্তু আমাদের এই তথাকথিত প্রগতিশীল সমাজ আজকাল সেটা মেনে নেয় না। ইসলামে বিভিন্ন ভাবে সমকামিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে লুত নবীর কথা উল্লেখযোগ্য। ওনার সময়কালে এই প্রসারণ ছিল ব্যাপক। আমরা শুধু যা গ্রহণযোগ্য তাই নিয়ে ধর্মকে গড়ে তুলি। সমাজের প্রয়োজনে নিজেদের স্বার্থে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু নিয়েই গড়ে তুলি ধর্মের স্তম্ভ। সত্য হারিয়ে যায় অতলে। সেগুলো নিয়ে দিনের পর দিন কেউ কথা বলে না। ধর্মীয় গোঁড়া নেতারা এইগুলো আলোচনাও করে না। আলোচনা করলে ধর্ম নাকি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আর বিশ্বাসে পরে ছেদ।
বলা হয় লুত নবীর সময়ে তার উম্মতেরা সমকামিতায় লিপ্ত হয়ে যায়। তিনি নাকি সেই সময় আহবান করেন, তোমরা দ্বীনের পথে ফিরে এসো, আমার মেয়েরা তোমাদের জন্য রয়েছে। উল্লেখ্য যে সেই সময় নবীদের কোওমের বাবা হিসেবে দেখা হোতো আর তার রাষ্ট্রে সব মেয়েরা তার মেয়ে রূপে গণ্য হত। যদিও এটা কিভাবে সম্ভব আমার মাথায় ঢুকে না যে কিভাবে একজন নবীর শাশনামলে সবাই তার মেয়ে হয় বা মেয়ে বলে গণ্য হয়। যাই হোক আজকের প্রসঙ্গ তা নয়। আজকের প্রসঙ্গ হচ্ছে এই আল্লাহর নাম দিয়ে অরাজকতার প্রসঙ্গ। বার বার আল্লাহ নামের একজন আজগুবি, আকারহীন, প্রমানহীন একজনের নাম দিয়ে নানাবিধ বাণী ছরানো হচ্ছে। কখনো সেটি বলা হচ্ছে নানাবিধ বাধা নিষেদ আরোপের জন্য, কখনো যুদ্ধে মানুষ মারবার জন্য, কখনো কাউকে কোপানোর জন্য, কখনো কাউকে খুন করবার জন্য।
সমকামিতাকে সম্পূর্ণরুপে একটি আন-নেচারাল ব্যাপার প্রমাণ করবার জন্য, এটিকে খারাপ করে তুলবার জন্য ইসলামিস্টদের যেন চিন্তার অন্ত নেই। ইনফ্যাক্ট অন্য সকল ধর্মও এই একই ভাবনায় মত্ত। আমি যেহেতু ইসলামিক পরিবার থেকে উঠে এসেছি ফলে আমি ইস্লামিস্টদের ব্যাপারটাই ভালো জানি। তাই সে দিকেই ফোকাস করছি।
সমকামিতা সম্পূর্ণ রকমের একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার। আমি সমকামী এটা আবার বৈষিষ্ট্য। এটি আমি নিজে নিজে বানাই নি। আমি এটা জন্মগতভাবে জিন থেকে পেয়েছি। আমি এটিকে পরিবর্তন করতে পারিনা। আমার কখনোই একটি মেয়েকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করেনা শারিরীক ভাবে বা মানসিক ভাবে। এটাই আমি। কিন্তু এটির জন্য আমাকে কেন ব্যাঙ্গ করা থেকে শুরু করে হত্যার হুমকি পর্যন্ত শুনতে হবে?
আমি কাকে ভালো বাসবো নাকি কাকে ভালো বাসবো না সেটার ইজারা কি আমি আল্লাহ কে দিয়েছি? আর তার নবী বলে প্রচারিত লুত, মোহাম্মদ এরা কে? এরা গায়েবী ওহীর নামে বানী দেবার কে? তাদের কাছে গায়েবী ওহী এসে এই বলে গেছে, সেই বলে গেছে এসব বলে মাতবরী করবার পারমিশন কে দিয়েছে?
মুসলমানেরা বিশ্বাস করে যে আল্লাহর হুকুম ছাড়া নাকি একটা গাছের পাতাও নড়ে না। যদি তা-ই হবে তাহলে সারা পৃথিবীতে যে এত সমকামী সেটাও আল্লাহর হুকুমে হয়েছে বলেই ধরে নিতে হবে। তাই না? যুক্তিতো সেটাই দাঁড়ায়।
ইসলামের নবী ১৩ টা বিয়ে করতে পারে, অনৈতিকভাবে নানা মেয়েদের ভোগ করতে পারে, যুদ্ধ করে খুন করতে পারে, মেরে ফেলতে পারে মানুষকে ইসলামের নামে, যুদ্ধ বিগ্রহ করে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে পারে, মানুষে মানুষে বিভেদ ছড়াতে পারে শুধু পারেনা সমকামীদের মেনে নিতে।
সমকামীরা কি ১৩ টা বিয়ে করছে মোহাম্মদের মত? তারা কি মানুষ খুন করছে? তারা কি কারো ক্ষতি করছে? তবে কেন সমকামীদের উপর বাংলাদেশে এই অত্যাচার? কেন এই নিগ্রহ? কেন এই সব নানাবিধ অন্যায়?
আমি সমকামী হয়ে কি অন্যায় করেছি? আমি কি একটি ছেলেকে ভালোবাসতে পারবো না? আমি কি আমার ভালোবাসার কথা বলতে পারবো না? আমি কি আমার প্রেমের নদী উজাড় করে দিতে পারবো না আমার বন্ধুর জন্য? আমি কি পারবোনা তাঁর সাথে যৌন সুখে ডুবে যেতে?
হায়রে সমাজ! অবৈধ নিয়ম প্রতিষ্ঠায় একজোট হও তোমরা। এই অবৈধ নিয়মের জের ধরেই আমার স্বত্বাকেই অস্বীকার করো তোমরা। তোমরা বলো তোমরা প্রগতিশীল সমাজ। যেই সমাজের মাঝে আমাদের মতো সমকামী মানুষদের ঠাই হয় না। দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে ভিনদেশে বাঁচার এই যন্ত্রণা নিয়ে মাতৃভূমিকে নিজের করে নিতে দাও না। ধর্মশিকলে হাতপা বেঁধে আমারদের মতো মানুষদের নির্বাসিত করো। তোমরাই নাকি প্রগতিশীল সমাজ! এই তোমাদের প্রগতিশীলতা? আমাদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তোমাদের এই প্রগতিশীলতা কবেই বিলীন হয়ে গেছে তা তোমরা কোনদিনও বুঝবে না।