বাংলাদেশের সমাজে সমকামিতা এই শব্দটি একটি ঘৃণ্য ও জঘন্য শব্দ। সমকামিতার সাথে সম্পর্ক থাকলে সেই ব্যাক্তি সমাজের চোখে এক জঘন্য মানুষ এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত যত রকম ব্যাবস্থা আছে তার উপর লাঘু হয় । বলা বাহুল্য সমকামিতা বাংলাদেশে এইটই শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং ৩৭৭ ধারা মোতাবেগ ১০ বছর/আজীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে।বাংলাদেশে সমকামী মানুষদের অবস্থা দিনে দিনে অত্যন্ত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ইতিমধ্যেই। আর আমরা যারা এখনও বেঁচে আছি, আমাদের এই কলম অস্র সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দিন রাত চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই নতুন দিন আসবেই আমাদের জীবনে তবুও কলম থেমে যাবে না।

 

আমরা যারা  সমকামী ও উভকামী মানুষ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজেদের যৌনপ্রবৃত্তি প্রকাশ করতে পারে। আর যে বিপরীতকামী মানুষেরা সহযোগিতা করতে চায় তারা সমকামী ও উভকামী মানুষদের জানার চেষ্টা করতে পারে এবং একই সঙ্গে এ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠনগুলোতে কাজ করতে পারে।

 

সমকামিতা কি মানসিক ব্যাধি, অক্ষমতা, অপ্রাকৃতিক বা অস্বাভাবিক? না। সমকামী এবং উভকামী প্রবৃত্তি কোনো ব্যাধি নয়। কয়েক দশক ধরে গবেষণা ও ক্লিনিকের অভিজ্ঞতার ফলে প্রধান প্রধান স্বাস্থ্য ও মনোস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এসব প্রবৃত্তি মানুষদের স্বাভাবিক অভিজ্ঞতারই প্রতিনিধিত্বমূলক। নারী ও পুরুষের মধ্যেকার সম্পর্কের মতোই সমলিঙ্গীয় সম্পর্কও স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯০ সালে মানসিক রোগের তালিকা থেকে সমকামীতাকে বাদ দিয়ে দিয়েছে।

 

চিকিৎসার মাধ্যমে যৌনপ্রবৃত্তি পরিবর্তন কি সম্ভব? সমকামী বা উভকামী হওয়াটা সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর। এটা কোনোপ্রকার অসুস্থতা নয় এবং তাই এ জন্য চিকিৎসারও দরকার নেই। আজ পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা দিযে এটা প্রমাণ করা যায়নি যে, থেরাপির সাহায্যে যৌনপ্রবৃত্তি পরিবর্তনের বিষয়টি নিরাপদ বা কার্যকর।উপরন্তু, এসব চিকিৎসার প্রয়াস সমকামীদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাগুলো আরও জোরদার করে এবং তাদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

 

সমকামিতা কি পাশ্চাত্যের ধারণা? না। সমকামিতা প্রত্যেকটি সমাজ ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমনকি অন্যান্য প্রাণিদের মধ্যেও এর উপস্থিতি দেখা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে যে, প্রতি ১০০ মানুষের মধ্যে ১ থেকে ১০ জন সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য, মোঘল চিত্রকর্ম ও অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে দেখা যায় যে, ইতিহাসের আদিকাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে সমকামিতা বিরাজমান ছিল।

 

সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমকামীদের প্রতি বৈষম্য কি সমর্থনযোগ্য? সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন বর্ণবাদ ও লিঙ্গবৈষম্য সমর্থন করা যায় না, তেমনি সমকামীদের প্রতি বৈষম্যের অবকাশ নেই। সমকামী বা উভকামী মানুষদের হয়রানি করা, তাদের অধিকার ও মর্যাদা অস্বীকার করা অথবা আইনের কাছে অভিযুক্ত করা ইত্যাদি কোনো ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন নয়, বরং এগুলো অনৈতিক ও অমানবিক।

 

আমাদের কলম যুদ্ধ চলবেই। আপনারা যারা মণে করেন সমকামিতা একটি জঘন্য পাপ এবং এই পাপাচার থেকে দূরে থাকাই উচিৎ অথবা ইসলামের আইনে এদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া উচিৎ, তাদেরকে বলছি, আমাদের এই কলম চলবেই। আমাদের অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করে নেবই। আপনারা আমাদেরকে গ্রহণ করুন বয়া নাই করুন, আমরা আমাদের মতো ঠিকই বাঁচবো। আর যারা অসহায় হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাদেরকে বাঁচতে শেখাবো। মাথা তুলে দাঁড়াবই আমরা। আমাদের ভয় দেখিয়ে আর থামাতে পারবেন না। জুলহাজ মান্নান আর মাহবুব রাব্বি তনয় এর মতো আর কেউ মরবে না। আমরা মারতে দেব না।

 

হত্যা করা কোন কিছুর সমাধান নয়। আপনারা অযথাই আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদেরকে মারতে চাইছেন। কিন্তু এখনও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা না করে আমরা মরতে পারি না। আর আমাদেরকে হত্যা করতে আপনারাও পারেন না।